সুন্দরবন নানা কারণে আজ বিপজ্জনক অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। সুন্দরবন ইস্যুতে সরকার বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সদস্যদের সঙ্গে দেন-দরবার করেছে। আমরা আমাদের সুন্দরবন রক্ষার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সরকার চায় না সুন্দরবন রক্ষা হোক।

সোমবার (২৬ জুলাই) অনলাইনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যৌথ আয়োজনে ‘সুন্দরবন বিষয়ে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সাম্প্রতিক সভার সুপারিশ’ বিষয়ে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আলোচনায় বাপা ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, সুন্দরবন নানা কারণে আজ বিপজ্জনক অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। সুন্দরবন ইস্যুতে সরকার বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সদস্যদের সঙ্গে দেন-দরবার করেছে বলে মনে হয়। সেটির প্রমাণ গত ৪৪তম সভায় স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। রাজনীতি দেশের ও জনগণের স্বার্থে হচ্ছে, নাকি মুনাফালোভীদের স্বার্থে হচ্ছে তাও জাতিকে বুঝতে হবে। আজকে আমরা অত্যন্ত হতাশা ও ক্ষোভের সঙ্গে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির গত ৪৪তম সভার সুপারিশের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি।

সুন্দরবন ইস্যুকে কেন্দ্র করে নিজ সংগঠনের এবং গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে একটি শক্ত মনিটরিং টিম গঠনের আহ্বান জানান তিনি।

বাপার নির্বাহী সহ-সভাপতি এবং সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, আমরা আমাদের সুন্দরবন রক্ষার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সরকার চায় না সুন্দরবন রক্ষা হোক। আমরা এলাকার সাধারণ মানুষ এবং দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বুঝতে পারছে যে, সরকার যা উন্নয়ন করছে তা সরকারের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে নয়। আশা করি, সুন্দরবনসহ দেশের সব কয়লাভিত্তিক প্রকল্পসমূহ বাতিলের জন্য মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে যোগ দেবে। সরকার সুন্দরবনের বিষয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে পরামর্শ করে না, কিন্তু বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দেন-দরবার করছে, যা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার সামিল।

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এটি একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও নয়, উন্নয়ন নয়, জিও পলিটিক্যাল এজেন্ডা। তা না হলে কেন সরকার এতো বিরোধিতা করার পরেও এ ধরনের কাজে এগিয়ে যাচ্ছে। যে সমস্ত প্রকল্প অলস পড়ে আছে সেসব প্রকল্পে সরকার প্রচুর পরিমাণ অর্থ খরচ করছে। মূলত অন্য ১০টি প্রকল্পের অর্থ জোগাড় করতে পারেনি এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় অর্থ আসেনি বলেই সরকার ১০টি প্রকল্প বাতিল করেছে; কিন্তু সুন্দরবনের প্রকল্প কেন বাতিল করা হলো না? সরকার যে প্রকল্পের জন্য নিজের দেশের জনগণের সমর্থন নেই সেই প্রকল্পের জন্য বিদেশিদের সঙ্গে দেন দরবার চালিয়ে যাচ্ছে যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।

ওয়ার্ড হেরিটেজ ওয়াচের চেয়ারম্যান স্টিফান ডম্পকে বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির অধিবেশন চলাকালীন আমরা কার্যত শক্তিহীন ছিলাম। সুতরাং আমাদের জনসাধারণের দ্বারা চাপ সৃষ্টি করা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা এখন অবশ্য করণীয়। এই বিষয়টি আসন্ন কপে উত্থাপন করা যেতে পারে। তবে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় রাজনৈতিক প্রভাব কয়েক বছর যাবত প্রকটভাবে দেখা গেলেও এ বছর তা কেবল সুন্দরবন নয়, অন্যান্য ঐতিহ্যের বেলায়ও  লক্ষ্য করা গেছে।

জেনেভায় জাতিসংঘের আর্থ জাস্টিসের স্থায়ী প্রতিনিধি ইভস লেডর বলেন, জনগণের মতামত এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিরুদ্ধে গিয়ে ইউনেস্কোর মতো বৈশ্বিক মঞ্চে সরকারের পরিবেশ বিরোধী কৌশল অবলম্বন করার কারণে বাংলাদেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে রাজনীতি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আমাদের সবার জন্য ভয়ানক পরিণতি বয়ে আনবে।

আলোচনায় আরও যুক্ত ছিলেন ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সাম্প্রতিক সভায় সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষে অংশগ্রহণকারী আন্তর্জাতিক পরিবেশ কর্মী তন্নী নওশীন, বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আব্দুল আজিজ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ্ হারুন চৌধুরী, তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির অন্যতম সংগঠক রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।

এমএইচএন/এসকেডি