একের পর এক করোনা রোগী আসছেন ঢামেকে
দুপুর ১২টা ৪০, একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে থামল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সামনে। তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর থেকে এসেছেন মো. ফারুক হোসেন (৬৭)।
স্বজনরা জানান, ১০ দিন আগে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এর ৩ দিন পর করোনা পজিটিভ আসে। পরে তাকে নোয়াখালীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অক্সিজেন সংকট থাকায় নোয়াখালীর আরেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। ভর্তি করা হয় রাজধানীর গ্রিন রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে এক দিন রেখে আনা হয় ঢামেকে।
বিজ্ঞাপন
ফারুক হোসেনের মতো অনেক করোনা রোগীই ঢামেকে আসছেন কিছুক্ষণ পর পর। সুস্থ হয়ে রোগীদের হাসপাতাল ছাড়ার সংখ্যা কম। সে তুলনায় আগত রোগীর সংখ্যা বেশি।
সোমবার (২৬ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সামনে এমন চিত্র দেখা যায়। সেখানে দেখা যায়, শয্যা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন অনেক রোগী।
করোনা ইউনিটে মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়। মৃত রোগীর স্বজনদের আহাজারি শোনা যায় কিছুক্ষণ পরপর।
অনেক স্বজন ইউনিটের ভেতরে রোগী রেখে বাইরে বিষণ্ণ মনে ঘোরাঘুরি করছেন। চিকিৎসক-নার্সদের ব্যস্ততা বেড়েছে আগের চেয়ে।
হাসপাতালের সামনে কথা হয় লক্ষ্মীপুর থেকে আসা রোগী ফারুক হোসেনের ছেলে ফরহাদের সঙ্গে। তিনি জানান, গত রাতে বাবাকে রাজধানীর গ্রিন রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করি। তারা একদিনে ৩৫ হাজার টাকা বিল করেছে। আমরা গরিব মানুষ। কীভাবে এত টাকা দিয়ে আইসিইউতে রাখব? পরে আজ দুপুরে ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে নিয়ে আসি। বাবার অবস্থা ভালো নয়। কখন কী হয়ে যায়, বলা যায় না। বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফরহাদ।
করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৮ জুলাই ঢামেকের করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়েছিলেন নরসিংদীর রায়পুরার বাসিন্দা মনসুর আলী মৃধা (৩৬)। দুপুর একটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। কথা হয় মৃতের শ্বশুর রওশন আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সকালেও অবস্থা ভালো ছিল। সকালে আমাদের সঙ্গে তিনি নাশতাও খেয়েছেন। দুপুরে একটি ইনজেকশন দেওয়ার পর দুই মিনিটেই নিস্তেজ হয়ে পড়েন মনসুর। পরে চিকিৎসক জানান, তিনি মারা গেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক আনসার সদস্য জানান, ‘আমি সকাল আটটা থেকে ডিউটি শুরু করেছি। বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত রোগীর চাপ অনেক। একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসছে এখানে।’
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, সোমবার বিকেল পর্যন্ত ১২ জন রোগী মারা গেছেন। তারা সবাই করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।
দায়িত্বরত ওয়ার্ড মাস্টার মো. রিয়াজউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভবন-২ এ ছয়শ শয্যা আছে। একটিও ফাঁকা নেই। রোগী চলে গেলে নতুন রোগী ভর্তি নেওয়া হয়। রোগীর অনেক চাপ আমাদের এখানে।
জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে করোনা রোগীর অনেক চাপ। শয্যা ফাঁকা নেই। বর্তমানে সব মিলিয়ে ৭৫২ জন রোগী আছেন। অতিরিক্ত ১৭ জনকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কোভিড রোগীর অক্সিজেন লাগে। চাইলেই রোগী ভর্তি করে মেঝেতে রাখতে পারি না। এখান থেকে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া রোগীর সংখ্যা একেবারেই কম।
এসএএ/আরএইচ/জেএস