মহাখালীতে নবনির্মিত ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ৯ দিন ধরে ভর্তি ছিলেন ৩৯ বছর বয়সী গোপাল। এতদিন ধরে সাধারণ বেডে থাকলেও গত দুই দিন আগে তাকে নিতে হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। আজ সকালে আইসিইউতেই মারা যান তিনি।

লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে অপেক্ষায় আছেন গোপালের স্বজনরা। হাসপাতালের ক্লিয়ারেন্স পেয়ে টঙ্গির নিজ বাসভবনে মরদেহ নেওয়া হবে। এমন সময় মৃত গোপালের শ্যালক সুজন ডিএনসিসি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরেন। 

ছবি : সুমন শেখ

ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ১২৫০ টাকার রক্তের একটা পরীক্ষার জন্য কয়েকদিন আগে টাকা জমা দিয়ে রিসিট এনেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত পরীক্ষার নমুনা নিয়ে যায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে তো গোপাল দা মারাই গেলেন। এই হাসপাতালে সবাই অবহেলা করে। নার্সকে বলি আমাদের রোগীর অবস্থা খারাপ একটু দেখে যান, তারা বলে ডাক্তারের কাছে যান। আমরা সঠিকভাবে চিকিৎসা পাইনি। আমাদের রোগী তো চলেই গেলেন। অন্যরা যেন ঠিকমতো সেবা পান। 

মৃত গোপালের বোন অভিযোগ জানিয়ে বলেন, আমরা যদি সঠিকভাবে, আন্তরিক চিকিৎসা পেতাম তাহলে হয়ত আমার দাদা বেঁচে যেতেন। তারা সবাই শুধু অবহেলা করে। সঠিক সময়ে ডাক্তার, নার্সরা রোগীর কাছে আসেনি। 

ঝিনাইদহ থেকে মাকে নিয়ে ডিএনসিসি হাসপাতালে এসেছিলেন আবুল কালাম আজাদ। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১২ দিন। আজ তার মায়ের মরদেহ নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত। কিন্তু ব্যবস্থাপনার ঘাটতি আছে প্রচুর। অবহেলায় অনেক রোগী সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা যদি আরও একটু আন্তরিক হতেন সবাই উপকৃত হতো। একজন রোগীর মনে করেন ডায়াবেটিস আছে, তাকে সঠিক সময়ে ওষুধ দিতে হবে। কিন্তু তাদের সে বিষয়ে কোনো দায়িত্বজ্ঞান নেই। এখানে কর্মরতরা যেন খুবই অনিচ্ছায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন কেন হবে? 


 
হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকা আরেক রোগীর স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা রোগী এখনও এখানে ভর্তি। তাই নাম বলতে চাই না। তবে এখানে খুবই অব্যবস্থাপনা। ফ্লোরে পানি জমে আছে, বাথরুমের অবস্থা খারাপ। রোগীর কোনো সমস্যা হলে নার্সকে ডাকলে তারা রাগ করে। আসতেই চায় না। দুই-তিন বার গিয়ে ডাকলে কোনো রকম একবার এসে রোগী দেখে যায়। তাদের কোনো আন্তরিকতা নেই।

সার্বিক বিষয় নিয়ে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে  জানান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (২৩ জুলাই) পর্যন্ত ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালে ৫০০ শয্যার মধ্যে খালি আছে ৪৮৯টি। এছাড়া কোভিড আইসিইউ ২১২টি সিটের মধ্যে ২০টি ফাঁকা আছে। জানা গেছে, হাসপাতালটিতে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানুলাসহ আইসিইউ সমতুল্য শয্যা আছে ৮০টি। এছাড়া অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটরসহ এইচডিইউ সমতুল্য শয্যা আছে ৩০টি।

এএসএস/এইচকে