২৪ ঘণ্টার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ শুরু
২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কাজ শুরু করেছে।
বুধবার (২১ জুলাই) ভাটারা সাঈদ নগর হাট এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। একযোগে সব ওয়ার্ডে দুপুর ২টা থেকে বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, একই সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডেও একযোগে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ডিএনসিসির উদ্যোগ
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বরাত দিয়ে ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল বাশার মোহম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, এ বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত নতুন এলাকাসহ ৫৪টি ওয়ার্ডে আনুমানিক দুই লক্ষাধিক পশুর কোরবানি হবে। যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। কোরবানির পশু জবাই করার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃক এ বছর ৩০৭টি স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তার ওপর কিংবা ড্রেনের পাশে কোরবানি না করার জন্য বিশেষ সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোরবানির জন্য সর্বমোট ২৫০ জন ইমাম এবং ২৫০ জন মাংস প্রস্তুতকারীকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পবিত্র ঈদুল আজহায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম তদারকি এবং দ্রুত বর্জ্য অপসারণের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওয়ার্ড ভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, কোরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব দুই হাজার ৬৬৭ জন এবং অন্যান্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনাসহ সর্বমোট ১১ হাজার ৫০৮ জন কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন।
জবাই করা কোরবানির পশুর বর্জ্য তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ এবং কোরবানির পশুর হাট দ্রুত পরিষ্কারের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব বর্জ্যবাহী ট্রাক, ভারী যন্ত্রপাতি, ওয়াটার বাউজারের পাশাপাশি আউট সোর্সিং হতে অতিরিক্ত গাড়ি নিয়োজিত করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বর্জ্য পরিবহন সক্ষমতা কমপক্ষে ১০ হাজার টনে উন্নীতকরণে প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত আছে। এ লক্ষ্যে ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের পরবর্তী দুদিন নিরবচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য বর্জ্যবাহী ডাম্প ট্রাক, খোলা ট্রাক, ভারী যান-যন্ত্রপাতি, পানির গাড়ি, বেসরকারি ও ভাড়ায় পিকআপভ্যানসহ সর্বমোট ৪৯৩টি গাড়ি নিয়োজিত থাকছে।
কোরবানির পশুর বর্জ্যে যাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে জবাইয়ের স্থানে ১১টি ওয়াটার বাউজার দিয়ে তরল জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি স্প্রেকরণের ব্যবস্থা এবং বর্জ্য ব্যাগ, ব্লিচিং পাউডারসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত উপকরণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বর্জ্য ব্যাগ রয়েছে ৬.৫ লাখ পিস, ব্লিচিং পাউডার ৫০ টন, ১০০৫ ক্যান (প্রতিটি ৫ লিটার) স্যাভলন।
ল্যান্ডফিলে ঈদুল আজহার অতিরিক্ত বর্জ্য পরিবেশসম্মত উপায়ে ডিসপোজাল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিশাল আয়তনের দুটি পরিখা খনন করা হয়েছে এবং দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাসহ অতিরিক্ত যান-যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ল্যান্ডফিলে বর্জ্য ড্রেসিং কার্যক্রমে পাঁচটি এস্কেভেটর, ছয়টি চেইন ডোজার, একটি টায়ার ডোজার ও একটি পে-লোডার নিয়োজিত থাকছে। প্রতিটি বাড়ি হতে দ্রুত বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে ভ্যানগাড়িতে করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে প্লট-২৩-২৬, সড়ক-৪৬, গুলশান-২, নগর ভবনের নিচতলায় অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকির জন্য ২২ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, গতকাল (মঙ্গলবার) এক অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহায় স্থানীয় কাউন্সিলরসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হবে। বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আওতায় আসন্ন ঈদুল আজহায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে সর্বমোট ১১ হাজার ৫০৮ জন কর্মী কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কাজে নিয়োজিত থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে গুলশানের নগর ভবনে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বরগুলো হলো- ০২৫৮৮১৪২২০, ০৯৬০২২২২৩৩৩ ও ০৯৬০২২২২৩৩৪।
কোরবানির পশুর বর্জ্যে যাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি না হয় সেজন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে নগরবাসীদের মাঝে ইতোমধ্যে ছয় লাখ ৫০ হাজার বর্জ্য ব্যাগ, ৫০ টন ব্লিচিং পাউডার এবং পাঁচ লিটার আয়তনের ১০০৫ ক্যান স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে।
বর্জ্য অপসারণে ডিএসসিসির উদ্যোগ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বরাত দিয়ে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাটের বর্জ্য এবং বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা হতে শনিবার (২৪ জুলাই) দুপুর ২টা পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকা ও পশুর হাটগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সরেজমিন মাঠপর্যায়ে তদারকির জন্য ১০টি টিম গঠন করেছে ডিএসসিসি। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে টিমগুলো গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, করপোরেশনের শীতলক্ষ্যা হলে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকির জন্য একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। করপোরেশনের আওতাধীন যেকোনো নাগরিক তার নিজ এলাকায় সৃষ্ট বর্জ্য সম্পর্কিত তথ্যাদি প্রেরণ বা পশুর বর্জ্য অপসারণ সম্পর্কিত সুরাহার জন্য কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ নম্বরে ফোন করে জানাতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তিন শিফটে ২৪ জুলাই দুপুর ২টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠপর্যায়ে চলমান বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকি করবেন।
পাশাপাশি ৯০টি খোলা ট্রাক, ৫৩টি কম্পেক্টর, ১২টি পানির গাড়ি, ১০২টি ডাম্প ট্রাক, ১৪টি পে-লোডার, ৮১টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, নয়টি টায়ার ডোজার, দুটি ট্রেইলার, নয়টি স্কিড লোডারসহ প্রায় পৌনে ৪০০টি যান-যন্ত্রপাতি মাঠপর্যায়ে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে নিযুক্ত থাকছে।
এছাড়া নিয়মিত পাঁচ হাজার কর্মীর পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও পাঁচ হাজার কর্মী কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে নিযুক্ত থাকছে। পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্রতি কাউন্সিলরকে এক হাজার করে এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের এক হাজার ৫০০টি পরিবেশবান্ধব ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যাগ যারা কোরবানি করবেন তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে। কোরবানির পশুর বর্জ্য সেসব ব্যাগের মধ্যে ভরে তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করপোরেশনের নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গের কাছে হস্তান্তর করবেন।
পরিবেশ সুরক্ষা ও দূষণমুক্ত রাখতে প্রায় ৩০ টন ব্লিচিং পাউডার ও ১৮০০ লিটার তরল জীবাণুনাশক ছিটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এএসএস/এইচকে