মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় নিকুঞ্জ, খিলক্ষেত এলাকার চিত্র

সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচে ফুটপাতের পাশে বেঞ্চিতে ঘুমাতে দেখা যায় এক পথচারীকে। আনুমানিক ২৫ বছরের ওই যুবকের পরনে জিন্সপ্যান্ট আর টিশার্ট। সঙ্গে কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ। তাকে ডেকে তুললে তিনি বলেন, ঈদ করতে টাঙ্গাইল যাচ্ছি। গাড়ি তো নড়ছে না। নতুনবাজার থেকে ভাবলাম বিশ্বরোড পর্যন্ত হেঁটে যাই। তারপর একটা গতি হবে। কিন্তু এখানে এসেও দেখছি একই চিত্র। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি থেমে আছে। ক্লান্ত হয়ে একটু রেস্ট নিয়ে নিচ্ছি। 

ঈদ পালনে আজও (মঙ্গলবার) বিপুল সংখ্যক মানুষ রাজধানী ছাড়ছেন। ঘরমুখী মানুষের চাপে সকাল থেকেই রাজধানীর বনানী থেকে উত্তরা পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা গেছে। এটি মূলত গতকালের যানযটেরই ধারাবাহিকতা। ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে যানজট থাকলেও ঢাকামুখী পথ রয়েছে ফাঁকা। 

আরও পড়ুন : শিমুলিয়ায় ঘাট পারের অপেক্ষায় ৫ শতাধিক যানবাহন 
                   ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ২০ কিলোমিটার থেমে থেমে চলছে গাড়ি

আজ মঙ্গলবার (২০ জুলাই) রাজধানীর বনানী, কুড়িল বিশ্বরোড, খিলক্ষেত ও প্রগতি সরণিতে সরেজমিনে দেখা গেছে, গাড়ির চাকা নড়ছে না। সারি সারি গাড়িতে বাড়িফেরা মানুষ বসে আছেন। প্রচুর মানুষ হেঁটেই এগিয়ে যাচ্ছেন যতটা সম্ভব। শিশু, বৃদ্ধ ও নারীরা ঈদযাত্রায় চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। 

যানজটের পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার ছবি

বাসচালকেরা বলছেন, কাল (বুধবার) ঈদ। আজও একসাথে প্রচুর মানুষ ঢাকা ছাড়ায় এবং পথে কোরবানির পশুবাহী গাড়ির কারণে এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে যানজটের ভোগান্তি কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে।

আজ সকাল ১০টায় যানজটের বিষয়ে বাসচালক ও সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, বনানী কবরস্থান এলাকা থেকে ফ্লাইওভার পর্যন্ত প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়েছে সকাল থেকেই। বনানী ফ্লাইওভারের পর মাঝখানে কিছু রাস্তায় থেমে থেমে গাড়ি চললেও বিমানবন্দরের পর থেকে আবারও টানা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, যা উত্তরা পর্যন্ত পৌঁছেছে।

এছাড়া বিমানবন্দর সড়কের যানজটের কারণে কুড়ি বিশ্বরোড হয়ে এর প্রভাব পড়ছে প্রগতি সরণির বিভিন্ন রাস্তায়। অন্যদিকে, সকাল ৯টা থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় যানজটের ভোগান্তি আরও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

এ বিষয়ে যানজটে আটকে থাকা বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা জানান, আজ সকাল থেকে বনানী ও উত্তরা এলাকায় যানজটের কারণে তাদের গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বসে থাকতে হয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টি হওয়াতে যানজটের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। গতকালও একই চিত্র ছিল। রাত ৯টায় যারা নতুনবাজার থেকে বাসে উঠেছেন আজ ভোররাতে তারা আব্দুল্লাহপুর পৌঁছেছেন। 

গাড়ির দীর্ঘ সারি কুড়িল এলাকা ছাড়িয়ে উত্তরা পর্যন্ত বিস্তৃত 

চালকরা আরও জানান, বিমানবন্দর থেকে উত্তরা পর্যন্ত রাস্তায় নানা ধরনের কাজ চলছে। এতে করে রাস্তায় কোথাও কোথায় রয়েছে ভাঙাচোরা, খোঁড়াখুঁড়ি আবার কোথায় কনস্ট্রাকশনের মালামাল পড়ে রয়েছে। যার ফলে বিমানবন্দর থেকে উত্তরা পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। এর মধ্যে বৃষ্টি কারণে রাস্তায় পানি জমে যানজটের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ দিকে যাবে।

যানজট নিয়ে গুলশান ট্রাফিক বিভাগের (বাড্ডা জোনের) সহকারী পুলিশ কমিশনার সুবীর রঞ্জন দাস জানান, ঈদযাত্রার আজ শেষ দিন। রাস্তায় প্রচুর গাড়ির চাপ। তবে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে নদ্দা পর্যন্ত থেমে আছে গাড়ির চাকা। 

উত্তরার যানজট নিয়ে ডিএমপির ট্রাফিকের উত্তরা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (উত্তরা পশ্চিম জোন) সাইফুল মালিক জানান, সকাল থেকেই গত কয়েক দিনের মতো যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে আজ কিছুটা থেমে থেমে গাড়ি চলছে। বিমানবন্দর সড়ক থেকে উত্তরা পর্যন্ত যানজটের পরিমাণ কিছুটা বেশি। বেলা বাড়ার সঙ্গে যানজট বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে। তবে আগামীকাল থেকে যানজট থাকবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

খিলক্ষেত থেকে বিকল্প উপায়ে আব্দুল্লাহপুর 

সরেজমিনে দেখা গেছে, যানজট এড়াতে অনেকেই খিলক্ষেত বাজার থেকে অটোরিকশায় বিকল্প রাস্তায় হাজি ক্যাম্প হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত যাচ্ছেন। সেখান থেকে রিকশায় যাচ্ছেন আব্দুল্লাহপুর। ৪০ থেকে ৫০ মিনিটে এ উপায়ে খিলক্ষেত থেকে আব্দুল্লাহপুর পৌঁছানো যাচ্ছে। তবে ভাড়া গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ। 

এমএসি/এইচকে