২০ বছর পর মাহফুজুল হক ও মামুনুল হকদের নিয়ন্ত্রণ থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা ফিরে পেলেন প্রতিষ্ঠাতাদের উত্তরসূরীরা। 

সোমবার (১৯ জুলাই) ওয়াকফ এস্টেটের আদেশে ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল আওয়াল মাদরাসাটির দখল উদ্ধার করেন। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে মাদরাসাটির দখল উত্তরসূরী মোহাম্মদ আবদুর রহিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

এ সময় ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল আওয়াল সাংবাদিকদের বলেন, যে মাদরাসাটির সামনে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, সেটি একটি মসজিদ ও ওয়াকফ এস্টেট। এ ওয়াকফ এস্টেটের আগে বিভিন্ন ইস্যু ছিল, কোর্টে বিভিন্ন মামলা চলমান ছিল। মামলা চলমান থাকার সুবাদে এটি একটি পক্ষের দখলে ছিল। এ মাসে আমরা ওয়াকফ প্রশাসনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে নির্দেশিত হয়েছি যে, এখানে যারা অবৈধ দখলদার আছেন, তাদের উচ্ছেদ করে তাদের নির্বাচিত বৈধ কমিটির কাছে দখল হস্তান্তর করার জন্য। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে এসেছি।  

তিনি বলেন, আমাদের এখানে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লোকজন আছেন। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকেরা এখানে আছেন। তাদের সহযোগিতায় নতুন যে কমিটি ওয়াকফ এস্টেট থেকে গঠন করা হয়েছে, তাদের আমরা দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। মাদরাসাটি এতদিন যাদের দখলে ছিল, প্রশাসকের চিঠি অনুসারে তারা অবৈধ ছিলেন। 
 
ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল আওয়াল বলেন, নতুন কমিটির সভাপতি হয়েছেন আব্দুর রহিম। যেহেতু ওয়াকফ এস্টেট প্রশাসন কর্তৃক কমিটি গঠিত হয়েছে, আমরা তার কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। অভিযান পরিচালনা করতে আমরা কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি। তবে প্রথমে আমরা যখন এখানে এলাম, তখন দেখলাম এখানে তালা দেওয়া আছে, ভেতরে কাউকে পাইনি। যেহেতু সব জায়গায় তালা দেওয়া ছিল তাই দখল ও হস্তান্তরের স্বার্থে তালা ভেঙেছি। 

মাদরাসাটির দখল আগে যাদের কাছে ছিল, তাদের মধ্যে অধ্যক্ষ মাওলানা মাগফুল হক বলেছিলেন, বেফাকের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসানের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমরা বাইরে একটি নোটিশ দেখেছিলাম, যাতে কারও স্বাক্ষর নেই। 

মাদরাসার দায়িত্ব বুঝে নেওয়া কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুর রহিম বলেন, আমার বাবা আলহাজ্ব আব্দুল মতিন মরহুম ও চাচা আলহাজ্ব আব্দুল মালেক মরহুম- ওনারা সভাপতি ছিলেন। মাদরাসাটি আমরা শুরু করি ১৯৯৮ সালে। তখন আমাদের সঙ্গে ছিলেন মাওলানা মুফতি আজিজুল হক সাহেব। মোটামুটি ২০০১ সাল পর্যন্ত মাদরাসাটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছিল। 

তিনি বলেন, মাদরাসাটির একটাই এজেন্ডা ছিল যে, আমাদের এখানে দ্বীনি এলেম ছাড়া আমরা কোনো রকম পলিটিক্সের সঙ্গে জড়িত হব না। কিন্তু দেখা যায়, কয়েকজন শিক্ষক পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছেন। তখন কমিটির পক্ষ থেকে তাদের ডেকে বলা হলো, এখানে রাজনীতি চলবে না। কেননা মেমোরেন্ডামে লেখা আছে। তারপরও তারা এখানে ছিলেন। নোটিশ করার পর ওভার নাইট আমাদের কমিটিকে বের করে দিয়ে মাদরাসার দখল নেন সাইখুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হক। তার দুই সন্তান হচ্ছেন মামুনুল হক ও মাহফুজুল হক।

আব্দুর রহিম বলেন, এরপর থেকে এখানে কাছেই একটা ঘর ভাড়া করে আমরা মাদরাসা পরিচালনা করছি। আমরা কিন্তু ডে ওয়ান থেকে গত ২০ বছর আমরা আইনি লড়াই করে যাচ্ছি। গত কয়েক দিন আগে আমাদের আইনি লড়াই শেষ হলো। ওয়াকফ এস্টেট থেকে আমাদের যে কমিটিকে বৈধ বলে ঘোষণা করা হলো। যারা দখলে নিয়েছিলেন, তাদের অবৈধ ঘোষণা করা হলো। আজ ম্যাজিস্ট্রেট আমার হাতে মাদরাসার দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়েছেন। এটি শতভাগ অরাজনৈতিক একটি প্রতিষ্ঠান। মাদরাসা পরিচালনায় বড় কোনো পরিবর্তন হবে না। 

জানা গেছে, সর্বশেষ ১৮ মে বাংলাদেশে ওয়াকফ প্রশাসন জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা পরিচালনার জন্য ২১ সদস্যের একটি পরিচালনা কমিটি অনুমোদন দেয়। তিন বছরের জন্য এ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই কমিটির সভাপতিই ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম। 

কমিটির সহ-সভাপতি হারুনুর রশীদ, আলীমুজ্জামান, সম্পাদক কাজী সাহিদুর রহমান, অর্থ সম্পাদক হাফিয আব্দুল গাফফার , রঈস মাওলানা হিফজুর রহমান, শাইখ মুফতি মনসুরুল হক। কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন, ক্বারী মুজাফ্ফর হুসাইন, ডা. আব্দুল কাইউম, মুজাম্মেল হুসাইন, আকরাম হুসাইন, উমর ফারুক মিল্কী, মুনীর সাঈদ, আলী হুসাইন, ডা. আহসানুল্লাহ, ডা. ইখলাসুর রহমান, আব্দুল হালীম, আব্দুর রব, হিফজুল বারী।

এইউএ/আরএইচ