আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সারাদেশের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

রোববার (১৮ জুলাই) দুপুরে সারাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত করোনা বুলেটিনে অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, যেখানে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি জড়িয়ে আছে, সেখানে আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি বরাবরই বলি। ইতোমধ্যে সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছি। যেহেতু কোরবানির পশুরহাটগুলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেখভাল করা হয়, আমরা জানি বিষয়টি নিয়ে তারাও নজরদারিতে আছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা সবারই সচেতনতা ও দায়িত্ব বোধের বিষয়টি আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।

নাজমুল ইসলাম বলেন, সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে মনিটরিং টিম আছে। তারা তাদের মতো করে দেখভাল করছেন। আমরা বিশ্বাস করি, প্রত্যেকেই আমরা দায়িত্বশীল নাগরিক। দায়িত্বের জায়গাটি তাদের মনে করিয়ে দেওয়া এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের প্রত্যেকেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। যে যার জায়গা থেকে প্রত্যেকের ভূমিকাটি যদি আমরা যথাযথভাবে পালন করি, তাহলে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি আরেকটু ভালোভাবে মেনে চলা সম্ভব।

নমুনা সংগ্রহ বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই মুখপাত্র বলেন, ২৮তম (১১ জুলাই-১৭ জুলাই) সপ্তাহে ১৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাংলাদেশে এই সপ্তাহে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪২৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৮৩ হাজার ৯৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৫৫ হাজার ২৪ জন, মারা গেছেন এক হাজার ৪৮০ জন। মৃত্যুর হার ১৫ দশমিক ০৯ শতাংশ বেড়েছে। ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়েছেন। শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভুটান। সেখানে মাত্র দুই হাজার ৩৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং মাত্র দুই জন মারা গেছেন।

২৯ শতাংশের নিচে নামছে না সংক্রমণের হার

নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, গত সাত দিনের সংক্রমণের পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণের হার ২৯ শতাংশের উপরে থেকেছে বেশির ভাগ সময়। শুক্রবার হওয়ায় নমুনা সংগ্রহ কম থাকলেও সংক্রমণের হার ২৯ শতাংশের বেশিই ছিল। গত ৩০ দিনের সংক্রমণের যে চিত্র তাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে আমরা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করেছি। শতকরা হিসেবে শনাক্তের হারও বেশি, বলেন ডা. নাজমুল।

তিনি আরও বলেন, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত তুলনা করলে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে ২১ হাজার ৬২৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। যা ফেব্রুয়ারিতে আরও কমে গিয়েছিল। মার্চ থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করল, এপ্রিলে বাড়ল। জুলাই মাসে এসে আজ পর্যন্ত এক লাখ ৭৯ হাজার ১৫৩ জন রোগী এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন। সংখ্যার হিসেবে গতকাল ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন, সবচেয়ে কম মারা গেছেন সিলেট বিভাগে।

করোনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার শঙ্কা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতেই দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আপনারা জানেন দেশের করোনা পরিস্থিতি এখন ঊর্ধ্বগামী এ অবস্থায় ডেঙ্গু পরিস্থিতিও যদি অবনতি হয় তাহলে আমাদের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। আর রাজধানীসহ সারাদেশের মশক নিয়ন্ত্রণে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন, তারা যদি নিজেদের জায়গা থেকে নিজেকে উজাড় করে না দেন তাহলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকবে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা

নাজমুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকেও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। ছাদে ফুলের টব, বাসার আশেপাশের ড্রেনসহ সবকিছু পরিষ্কার রাখতে হবে। বাথরুমের কমোড, বালতিসহ কিছুতেই যেন পানি জমে না থাকে। বিশেষ করে তিন দিন বা তার অধিক সময়ের জন্য কোথাও চলে গেলে বাসায় কোন পাত্রে পানি জমিয়ে রাখা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা জানি এডিস মশা মূলত দিনের বেলায় কামড় দেয়। তাই দিনের যেকোনো সময় ঘুমালেও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। তারপরও যদি কারও জ্বর হয় তাহলে করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষাও করতে হবে। এবং চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই রেজিস্টার্ড কোনো চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য অধিফতরের হট লাইন বা স্বাস্থ্য বাতায়ন যোগাযোগ করে চিকিৎসা নেবেন।

টিআই/জেডএস