অতি লোভী গরু ব্যবসায়ীরা সীমান্তে হত্যার পেছনে দায়ী
আমাদের দেশে ক্যাটল (গরু) খামারের উন্নতি ঘটেছে। তবুও অতি লোভী দুয়েকজন গরু ব্যবসায়ীর কারণে সীমান্তে হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শনিবার (১৭ জুলাই) সকাল ১০টায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেছেন, সীমান্তে অনেকের বাড়ি। সীমান্ত এলাকায় আত্মীয়তার সূত্রে যাতায়াতও আছে। সে কারণে অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি হয়।
সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কেন বন্ধ হচ্ছে না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান বন্ধের জন্য আমরা যথেষ্ট তৎপর রয়েছি। সীমান্তে বিওপি বাড়ানো হয়েছে। আমরা বর্ডার সার্ভিলেন্স সিস্টেম উন্নত করেছি। শুধু তাই নয়, আধুনিক ইক্যুইপমেন্ট, যান সংযোগ করেছি। যা যা প্রয়োজন তা দিয়েই বিজিবিকে সমৃদ্ধ করছি। চোরাচালান বন্ধের পাশাপাশি আমরা সীমান্ত হত্যা বন্ধেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, সীমান্তে হত্যার ঘটনা ঘটে। মন্ত্রী পর্যায়ে ও বিজিবি বিএসএফ পর্যায়ে কথা হচ্ছে। আমরা মনে করি খুব শিগগিরই মারণাস্ত্র ব্যবহার করব না। কারণ দুইপক্ষই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই জায়গাটাতে আমরা যেন প্রতিশ্রুতি মেনে চলি তাহলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে।
আরও দেখুন : বিজিবি হবে অত্যাধুনিক-আন্তর্জাতিক মানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী
গতবার যখন আমি ভারতে গিয়েছিলাম, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে বললেন, আমরা তোমাদের আর গরু দেব না। আমি বলেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের লাগবেও না, আমরা সমৃদ্ধ। তবুও দুয়েকজন অতি উৎসাহী গরু ব্যবসায়ীর কারণে সীমান্তে দুর্ঘটনা খুনের ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে বিজিবির প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডের সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবিকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী উল্লেখ করে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনায় বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন হচ্ছে। যেসব সীমান্ত পিলার রয়েছে সেসব সীমান্তে এখন অতিরিক্ত টহল দিচ্ছি। মহেষপুর, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়াতে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই বৃদ্ধিও চলমান প্রক্রিয়া।
আরও দেখুন : শপথ নিলেন বিজিবিতে যোগ দেওয়া ২৭৩৬ সৈনিক
উল্লেখ্য, ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। বিজিটিসিঅ্যান্ডসিতে প্রশিক্ষণ নেওয়া মোট ৭৮৪ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬৫৬ জন পুরুষ ও ১২৮ জন নারী।
বিজিটিসিঅ্যান্ডসি ছাড়াও বিজিবির অন্যান্য আরও আটটি প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের নবীন সৈনিকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়। সর্বমোট শপথ নেবেন দুই হাজার ৭৩৬ জন সৈনিক। তাদের মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ৬০৮ জন এবং নারী ১২৮ জন। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের সূচনা হলো।
৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে বিভিন্ন উপদেশ ও দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীদের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা স্মরণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর ৪০২ রিক্রুট (জিডি) নয়ন ও অন্যান্য বিষয়ে সেরা সৈনিকদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
জেইউ/ওএফ