সতীনের সন্তানদের নির্যাতন থেকে নারীকে রক্ষা করল পুলিশ
রাজধানীতে এক নারী স্বামী মারা যাওয়ার পর দীর্ঘ দিন ধরে তার সতিনের ছেলেদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছিলেন। স্বামী মারা যাওয়ার আগে তার ভরণপোষণের জন্য যে ব্যবস্থা রেখে গিয়েছিলেন, তাও সতিনের ছেলেরা দিচ্ছিলেন না। ওই নারীর কোনো সন্তান না থাকায় বাধ্য হয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে এরই মধ্যে এক শুভাকাঙ্ক্ষীর পরামর্শে বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংকে তিনি তার দুঃখ, দুর্দশা ও বঞ্চনার কথা জানান লিখে জানান। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দ্রুত এই নারীর সহায়তায় এগিয়ে আসে এবং তার অধিকার ফিরে পেতে সাহায্য করে।
শুক্রবার (১৬ জুলাই) রাতে পুলিশ সদরদফতরে এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
মো. সোহেল রানা বলেন, ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। ঢাকায় তার বহুতল বাড়িও রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করোনায় মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর তার সতীনের সন্তানেরা তাকে (নারী) বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছিল। তার ভরণপোষণের যে ব্যবস্থা তার স্বামী করে গিয়েছিলেন, তা থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছিল। তার ঘরে কোনো সন্তান আসেনি। নিঃসন্তান তিনি। পাশে দাঁড়ানোর মতোও তেমন কেউ নেই। নিভৃতে কান্না ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তিনি বুঝতে পারছিলেন একা কোনোভাবেই লড়াই করে পেরে উঠবেন না সতীনের সন্তান ও তাদের পক্ষের মানুষদের সঙ্গে। ভেবেছিলেন নীরবেই বেরিয়ে গিয়ে নিজের গ্রামেই আশ্রয় নেবেন। এমন সময় এক শুভাকাঙ্ক্ষীর পরামর্শে বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংকে লিখেন তিনি। জানান তার দুঃখ, দুর্দশা ও বঞ্চনার কথা।
তিনি বলেন, মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং তার সব কথা শুনে সিদ্ধান্ত নেয় তার পাশে থাকার। তাকে জানিয়ে দেন প্রবলভাবে তার পাশে থাকবে। এরপরই মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং বার্তাটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহবাগ থানার তৎকালীন ওসি মো. মামুনুর রশীদকে পাঠিয়ে নির্দেশনা দেন ভদ্রমহিলাকে আইনি সহযোগিতা দিতে এবং করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিতে। শাহবাগ থানার ওসি বিষয়টি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করে উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে তাদেরই মাধ্যমে উভয়পক্ষের সম্মতিতে একটি সুষ্ঠু সমাধানের আয়োজন করে দেন। ফলে ভদ্র মহিলা আইন অনুযায়ী যেটুকু সম্পত্তি ও সুবিধা প্রাপ্য ছিলেন তা স্বল্প সময়ে তাকে বুঝিয়ে দেন অপরপক্ষ।
তিনি আরও বলেন, গত ২৩ জুন উভয়পক্ষের মধ্যে একটি বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমস্যাটি সমাধান হয়। ভদ্র মহিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে পুলিশ। অপরপক্ষকে জানানো হয়েছে, ভদ্র মহিলার কোনো ক্ষতি হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে কার্পণ্য করবে না পুলিশ। ভদ্র মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং। সর্বশেষ ১৫ জুলাই ভদ্র মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার খোঁজখবর নেয় মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এমএসি/এসএসএইচ