হঠাৎ রাজধানীতে বেড়েছে মশা। প্রতিদিনই এডিস মশা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বিস্তার রোধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি জরিমানা আদায় করলেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না। নগরবাসী অভিযোগ জানিয়ে বলছে, বর্তমানে কোরবানির পশুর হাট আর জলাবদ্ধতা নিরসের উদ্যোগগুলোর কাজ করতে গিয়েই সিটি করপোরেশন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে রাজধানীতে ফের বাড়ছে ডেঙ্গু।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সর্বমোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০৫৮ জন। এছাড়া গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগী ছাড়প্রাপ্ত হয়েছেন ৭৩৮ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিটের (এমআইএস) সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়া জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায়  ১৫ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬৩ জন। এই ৬৩ জন রোগীর সবাই ঢাকাতেই। এছাড়া বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩১৮ জন। যার মধ্য ঢাকার ৪১ টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে সর্বমোট রোগী ভর্তি ৩১৪ জন। বাকি ৪ জন অন্যান্য বিভাগে ভর্তি রয়েছেন।

এদিকে প্রতিদিনই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাধীন এলাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে সংস্থা দুইটি। প্রতিদিন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পরিচালিত অভিযানে পরিদর্শনের পাশাপাশি মোটা অংকের জরিমানা আদায়ও করছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল বাসার মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) ডিএনসিসি এলাকায় এডিস মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিস্তার রোধকল্পে মোবাইল কোর্টে ৪টি মামলায় সর্বমোট ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর আগের দিনে মোবাইল কোর্টে ১৪টি মামলায় সর্বমোট ১ লাখ ৯ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এভাবে ঢাকা  উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিস্তার রোধে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকাতেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসি এলাকায় ৪ টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৭টি নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ৭ মামলায় আড়াই লাখ টাকার বেশি জরিমানা আদায় করেছে। এভাবে ডিএসসিসির প্রতিটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাধীন এলাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে সংস্থাটি। 

এ সময় অভিযান প্রসঙ্গে করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা কবির ত্রপা বলেন, অভিযানে দুটি নির্মাণাধীন ভবনকে ২ মামলায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। এর মধ্যে একটি নির্মাণাধীন ভবন এডিসের লার্ভা পাওয়ায় গত এপ্রিল মাসেও ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।

এদিকে ১৪ জুলাই ৩৬ নং ওয়ার্ডের তাঁতীবাজার মোড়ে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের উদ্বোধন শেষে এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এলাকায় চিরুনি অভিযান চলমান থাকবে। আমাদের নিজস্ব দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছিলাম। এখন আমাদের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছি। বর্তমানে আমরা মোট ৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। যার ফলও আমরা পাওয়া আরম্ভ করেছি। তবে সামগ্রিকভাবে ডেঙ্গু এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। ২০১৮ ও ১৯ সালের চাইতে ডেঙ্গু এখনো অনেক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

তবে ভিন্ন কথা বলছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন আওতাধীন এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দারা। তাদের মতে রাজধানীতে হঠাৎ মশা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া রোগীও।

রাজধানীর মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, রাজধানীতে মশা যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীও। সিটি করপোরেশন এখন ব্যস্ত কোরবানির পশুর হাট নিয়ে, এর আগে তাদের ব্যস্ততা ছিল জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা নিয়ে। সিটি করপোরেশনের এমন ব্যস্ততার কারণেই সুযোগ বুঝে রাজধানীতে মশা বাড়ছে, বাড়ছে ডেঙ্গু। মশা মারতে সিটি করপোরেশনের এত উদ্যোগের কথা তারা বলে কিন্তু এলাকাবাসী হিসেবে মশা মারার লোক বা ওষুধ ছেটাতেই তো আমরা দেখি না, তাহলে মশা কমবে কীভাবে?

এএসএস/এইচকে