ছোট কিংবা বড় সব ধরনের গরুর দাম বেশি হাঁকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা দাম শুনেই ব্যবসায়ীদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকছেন, কেউ সাহস করে দাম বলছেন  আবার অনেকে দাম না বলেই সামনে হাঁটছেন। এই দৃশ্য রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী আফতাব নগরের গরুর হাটের।

বড় এই হাটটিতে হাজার হাজার গরু নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গরুর দাম চড়া কিন্তু ক্রেতা কম, বিক্রিও নেই বললেই চলে। ক্রেতারা বলছেন, গরুর দাম দ্বিগুণ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার দাম একটু বেশি, তবে অত বেশি না।

ক্রেতাদের অভিযোগ, গতবছর যে গরু ৭০-৮০ হাজার টাকায় কেনা-বেচা হয়েছে। এ বছর একই গরুর দাম ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাচ্ছেন বিক্রেতারা। এসব গরুতে মাংস হবে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় মণ। তারা ২ মণ থেকে ৪ মণ মাংসের গরুর দাম হাঁকাচ্ছে ২ লাখ টাকা, ৪ মণে বেশি হলেই ২ লাখ টাকার বেশি দম হাঁকাচ্ছে। তারা বলছেন, গতবছর ৩ মণ মাংসের গরু বিক্রি হয়েছে ১ লাখ টাকার নিচে। ৫-৬ মণ গুজনের গরু বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকায়। কিন্তু এবার দাম চাচ্ছে একেবারে দ্বিগুণ।

ছয় সঙ্গীসহ কুষ্টিয়া থেকে ১৭টি গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী মশিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ (শুক্রবার) সকাল ৯টায় এসেছি। এখনও কেউ এসে দরদাম করেনি। তিনি বলেন, ‘ডাল-ভাতের পয়সা হলেই বিক্রি করে দিমু। এইগুলো বিক্রি করে তো বাড়ি গাড়ি হবে না। পেটের জন্য ডাল-ভাতের পয়সা হলেই ঝামেলা শেষ।’

এই ব্যবসায়ী জানান, গুরুগুলো তার বিভিন্ন দামে কেনা। সব খরচাসহ ছোট গরুটি বিক্রি করতে হবে সর্বনিম্ন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। সর্বোচ্চ সাত লাখ টাকার গরু আছে তার কাছে। ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা তার।

কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে বিক্রির উদ্দেশ্যে দুটি গরু নিয়ে এসেছেন রিপন মাহমুদ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৬শ, ১২শ কেজি মাংস হবে এমন (সাদা ও সাদা-কালো রঙ) দুটি গরু হাটে এনেছি। ক্রেতারা দাম বলছে চার লাখ টাকা, আমি দিচ্ছি না। আমার টার্গেট পাঁচ লাখ টাকা। পৌনে পাঁচ, কিংবা সাড়ে চার (পৌনে পাঁচ লাখ, সাড়ে চার লাখ) হলে ছেড়ে দেব। তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে মোট ১১টি গরু নিয়ে এসেছি।

গরুর দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবকিছুর দাম বেশি। গরুর দাম কমবে কেন? গরু কিনে ছয় মাস-এক বছর পালছি, খরচ হয়েছে না।

বাড্ডা থেকে গরু কিনতে আসা মহিবুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আফতাব নগরে সব গরুর দাম বেশি, প্রায় দ্বিগুণ চায়। গাবতলী হাটে দাম পাঁচ হাজার, ১০ হাজার, ২০ হাজার বেশি পেলেই বিক্রি করে দেয়। এখানে খুব বেশি। বসার ব্যবস্থা আছে, শাহেন শাহের মতো বসে আছে এরা, তাদের কোনো কষ্ট নেই, তাই বিক্রি করছে না। গাবতলী হাটে দাঁড়িয়ে আছে পাইকাররা। তাদের কষ্ট আছে, তাই তারা বিক্রি করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ছোটর মধ্যে তিনটি গরু নিতে এসেছি, গরু অনেক দেখেছিও। কিন্তু দামে মিলছে না। ৬০, ৭০-৮০ হাজার টাকার মধ্যে কেনার জন্য দেখছি। এ বাজারে দেখছি, ৬০ হাজারের গরুর দাম দেড় লাখ টাকা। খুব বেশি, এটা তো হয় না, কোনো হিসাবে আসে না। দেখা যাক কি করা যায়।

এই ক্রেতা ভাই মনিরুজ্জামানকে নিয়ে সামনে এগিয়ে দুটি গরু দামাদামি করছিলেন, দুই দাঁতের মাঝারি ধরনের ষাঁড় দেখে বললেন, দুইটি দড়ির কত (গরুর দাম)?  ব্যবসায়ী বললেন, সাড়ে তিন (সাড়ে তিন লাখ)। তখন ক্রেতা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেবেন বলে জানান। কিন্তু বিক্রেতা দিতে রাজি নন। গরু দুটিতে মাংস হবে চার মণের কিছু বেশি।

দুই দিন ধরে হাটে গরু দেখছেন মধ্য বাড্ডার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুই দিনেও গরু কিনতে পারিনি। গরু পছন্দ হলেও দামে মিলছে না। ঈদের বাকি আছে মাত্র তিন দিন। এখনও গরু ছাড়ছে না ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করছে, এবার দাম বেশি হবে। আজ এ বাজারে মন মতো গরু না পেলে মেরাদিয়া হাটে যাব।

আফতাব নগর হাটের ইজারাদার ওমর ফারুক দিপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্রেতা কম। এখনও বাজার জমেনি। গরুর দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। কাল (শনিবার), পরশু (রোববার) বিক্রি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। দেশি ছোট গরুগুলো কালকের (শনিবার) মধ্যে চলে আসবে। এগুলোর চাহিদা বেশি। এগুলো এলে বড় গরুর দাম কমবে।

এমআই/এসএসএইচ