সাঈদ খোকনের ফাইল ছবি

সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হবে... ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের এমন মন্তব্যে সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন- তাপসের মানসম্মানের বাজারমূল্য কত? মামলার পূর্ণাঙ্গ বিবরণী পাওয়ার পর সেটা আমি জানতে পারবো। 

সোমবার (১১ জানুয়ারি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের পক্ষ থেকে তার জনসংযোগ কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম সুমনের পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

বিবৃতিতে সাইদ খোকন বলেন, এ মামলার আইনি মোকাবিলার পাশাপাশি রাজপথে দেনা পাওনার হিসেব হবে, ইনশাআল্লাহ।

এর আগে সকালে রাজধানীর মানিকনগর ওয়াটার স্লুইস গেট, ওয়াটার পাম্প হাউজ পরিদর্শনকালে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

তাপস বলেন, ‘সাবেক মেয়রের (সাঈদ খোকন) বক্তব্য মানহানিকর। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। বিভিন্নভাবে যারা টাকা লেনদেন করেছেন তারাই দুর্নীতির অভিযোগ করছেন।’

এদিকে গত রোববার (১০ জানুয়ারি) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নগর ভবনে অযান্ত্রিক যানবাহনের নিবন্ধন দেওয়ার কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএসসিসির সাবেক মেয়রের বক্তব্যের প্রসঙ্গে সংস্থাটির বর্তমান মেয়র বলেন, ‘ডিএসসিসির সাবেক মেয়র যা বলেছেন, এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত’।

শনিবার ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ ডিএসসিসির অভিযানে উচ্ছেদ হওয়া দোকান মালিকদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধন করা হয়। সেখানে উপস্থিত থেকে সংস্থাটির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বলেছিলেন, ‘ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।’

মানববন্ধনে তিনি বলেন, ‘তাপস মেয়র হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন। রাঘব বোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে দুর্নীতি মুক্ত করুন, তারপর চুনোপুঁটির দিকে দৃষ্টি দিন। মেয়র তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তরিত করেছেন। এই শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং করছেন। অপরদিকে অর্থের অভাবে করপোরেশনের গরিব কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তাপস সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯, দ্বিতীয় ভাগের দ্বিতীয় অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯ (২) (জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।’

সাবেক এ মেয়র আরও বলেন, ‘যে স্থানটির কথা বলা হচ্ছে সে জায়গাটি দখল ছিল, এখানে এটি একটি উচ্ছেদ কার্যক্রম। কেউ যদি ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে এমন মন্তব্য করেন তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। তবে আমার এই দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে কোনো ধরনের মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।’

সাঈদ খোকনের পক্ষ থেকে উত্থাপিত অভিযোগ বিষয়ে গতকাল ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘দেশের সকল বেসরকারি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ও নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি সংস্থাগুলো থেকে আমানত সংগ্রহ করে। মধুমতি ব্যাংকও তেমন একটি বেসরকারি ব্যাংক। তারাও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে আমানত সংগ্রহ করে চলেছে। সুতরাং এখানে কোনো আইনবহির্ভূত কিছু নেই। দুর্নীতি তখন হয় যখন কোনো কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য কমিশন নেওয়া হয়। দুর্নীতি তখন হয় যখন উৎকোচ গ্রহণ করা হয়, সরকারি প্রভাব খাটিয়ে অর্থ আদায় করে আত্মসাৎ করা হয়, তখন দুর্নীতি হয়। যে যতই তার ব্যক্তিগত আক্রোশের জায়গা থেকে নিজের মতো করে মন্তব্য করুক না কেন, আমাদের উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকবে।’

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে মামলা দুটি দায়ের করা হয়। মামলাগুলোর মধ্যে একটি করেছেন কাজী আনিসুর রহমান ও অপরটি অ্যাডভোকেট মো. সারওয়ার আলম।

এএসএস/এমএইচএস