বিস্ফোরণের ঘটনায় ১২ জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

রাজধানীর মগবাজারে ‘রাখি নীড়’ ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। প্রতিবেদনে বিস্ফোরণের কারণ ‘জমে থাকা গ্যাসে আগুনের স্পার্ক থেকে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ‘গ্যাস কীভাবে ও কোথায় জমেছে’ সেই উৎসের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

বুধবার (১৪ জুলাই) প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তদন্ত কমিটি। এতে কমিটির প্রত্যেক সদস্য স্বাক্ষর করেছেন।

আরও পড়ুন: শহর যেন মৃত্যুফাঁদ

ফায়ার সার্ভিসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া আলামত, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া কর্মীদের বর্ণনা, ভবন মালিক ও দোকান মালিকসহ অনেকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বিস্ফোরণের স্থান হিসেবে বেঙ্গল মিটের আউটলেটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও বিস্ফোরণের সম্ভাব্য তিন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।’

বিস্ফোরণের সম্ভাব্য তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করেছে ফায়ার সার্ভিস 

দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মগবাজারের ৭৯ আউটার সার্কুলার রোডের ভবনে বেঙ্গল মিটের শো-রুমে প্রচুর গ্যাস জমা ছিল। জমা গ্যাসের মধ্যে আগুনের স্পার্ক (অগ্নি স্ফুলিঙ্গ) সৃষ্টি হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে আগুনের স্পার্ক সৃষ্টি হওয়ার পেছনে বৈদ্যুতিক সুইচ চালু অথবা বন্ধ, মশা মারার ব্যাট অথবা মোবাইলের চার্জারের ভূমিকা থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ওই ভবনে এবং আউটলেটে গ্যাস জমে থাকার কথা উল্লেখ করলেও সেখানে গ্যাসের কোনো উৎস পায়নি ফায়ার সার্ভিস।

সূত্রটি জানায়, প্রতিবেদনে ফায়ার সার্ভিস কিছু সুপারিশ দিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঘরবাড়ি/দোকানে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক তারের গুণগত মান নিশ্চিত করা, রাস্তায় স্থাপিত খোলা তারের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন, অগ্নিকাণ্ডের সময় যেন উৎসুক জনতা উদ্ধারকাজে বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, ২৭ জুন সন্ধ্যায় মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ে ‘রাখি নীড়’ নামে ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিনই ৭ জন নিহত হয়েছিলেন। পরে এই সংখ্যা গিয়ে ঠেকে ১২তে। আহত হন শতাধিক মানুষ। আহতদের বেশিরভাগই ছিলেন আশেপাশের ভবন, কয়েকটি বাসের যাত্রী এবং পথচারী।

এদিকে ভবনে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স

বিস্ফোরণের পর ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে

কমিটির প্রধান ছিলেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন : অধিদফতরের উপপরিচালক (ঢাকা) দিনমনি শর্মা, সহকারী পরিচালক (ঢাকা) ছালেহ উদ্দিন আহমেদ, উপ-সহকারী পরিচালক (ঢাকা জোন-০১) মো. বজলুল রশিদ এবং ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর দেবব্রত মণ্ডল।

এই ঘটনায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে গত ২৯ জুন রমনা থানার পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। মামলাটি প্রথমে থানা–পুলিশ তদন্ত করলেও পরে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

এআর/এসকেডি