তিতাস গ্যাস ফিল্ডে স্থাপন করা হবে ওয়েলহেড কম্প্রেসর

• ব্যয় কমছে ১৯৩ কোটি ও সময় বাড়ছে তিন বছর
• ঋণের অব্যয়িত অর্থে ০.২৫ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি দিচ্ছে সরকার
• ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে বিলম্ব হয়েছে

সাড়ে চার বছর মেয়াদি ‘তিতাস গ্যাস ফিল্ডের লোকেশনে ওয়েলহেড কম্প্রেসর স্থাপন (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয় ২০১৬ সালে। সে অনুযায়ী ২০২০ সালে শেষ হয় এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ। তবে মেয়াদ শেষে এর আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে মাত্র এক দশমিক ২২ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে সিংহভাগ অর্থই ঋণ হিসেবে দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)।

এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বলছে, ঋণের টাকায় প্রকল্প নিলে নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করতে হয়। নাহলে ঋণের অর্থের ০.২৫ শতাংশ কমিটমেন্ট (চুক্তি) ফি দিতে হয় সরকারকে। এ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও সেটা অব্যাহত আছে এবং আগামী আরও তিন বছর দিতে হবে।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ এর ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করেছে। সভার কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সভায় কয়েকটি সুপারিশ করেছে পিইসি।

এর আগে, ২০১৬ সালের নভেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। মূল অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী, ডিসেম্বর ২০২০ সালে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ৯১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৫৩ কোটি টাকা এডিবি ও এআইআইবি ব্যাংক দিচ্ছে।

বর্তমানে প্রকল্পটি প্রথম সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সংশোধনী ডিপিপিতে ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয় কমিয়ে আরও তিন বছর মেয়াদ অর্থাৎ ডিসেম্বর ২০২৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো- ৯টি কূপের গ্যাসের চাপ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাতটি ওয়েলহেড কম্প্রেসর ক্রয়, স্থাপন ও কমিশনিং এবং পরামর্শকসেবা প্রতিষ্ঠান নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক কার্যাদি সম্পন্ন করা। বর্তমানে এটি ওয়েলহেড কম্প্রেসর ক্রয়ের লক্ষ্যে ঠিকাদারের উদ্ধৃত দরের আলোকে ওয়েলহেড কম্প্রেসর ক্রয়, স্থাপন ও কমিশনিং বাবদ ব্যয় হ্রাস, পরামর্শক সেবার ব্যয় বৃদ্ধিসহ কয়েকটি অঙ্গের পুনঃপ্রাক্কলন করে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের অন্যতম অঙ্গ সাতটি ওয়েলহেড কম্প্রেসর ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করতে প্রায় দুই বছর বিলম্ব হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের আনুষ্ঠানিকতা, এডিবি ও বিজিএফসিএল বোর্ডের অনুমোদন ও চুক্তি স্বাক্ষর ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পন্ন করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দেরি হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রথম দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু সর্বনিম্ন দরদাতা পারফরম্যান্স গ্যারান্টি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রথম টেন্ডারটি বাতিল করা হয়।

প্রকল্প পরিচালক আবুল কাসেম খান

তিনি বলেন, ‘বর্তমান দরপত্র আহ্বানের হিসেবে প্রকল্পের টাকা অনেক কমে এসেছে। ইতোমধ্যেই আমাদের সব কার্যক্রম শেষ, এখন প্রকল্পটি সংশোধনের অনুমোদন পেলেই বাকি কাজগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে পারব। মূলত ব্যয় কমানো ও মেয়াদ বাড়ানোর জন্যই প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) উপসচিব কাওসার জাহান বলেন, ‘লোন নেগোসিয়েশনের সময় উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করে গ্রেস পিরিয়ড নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এতে ঋণ পরিশোধ শুরুর আগেই প্রকল্পের সুফল পাওয়া যায়। কিন্তু এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ধীরগতির কারণে এ সুবিধা নেয়া সম্ভব হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এআইইবি লোনের ক্ষেত্রে অব্যয়িত অর্থের ওপর সরকারকে বাৎসরিক ০.২৫ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট ফি দিতে হয়। কিন্তু এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন অবস্থা মাত্র এক শতাংশ হওয়ায় প্রায় পুরো প্রকল্প ঋণের ওপর সরকারকে কমিটমেন্ট ফি দিতে হচ্ছে। এখন তিন বছর মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, সরকারকে অনুরূপ ফি দিতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি প্রস্তাবিত মেয়াদে যাতে সম্পন্ন করা যায় এবং ভবিষ্যতে আর কোনো মেয়াদ যেন বৃদ্ধির প্রয়োজন না হয় সেদিকে প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে।’

পিইসি সভার সুপারিশগুলো হচ্ছে- প্রকল্পের অগ্রগতি অত্যন্ত কম হওয়ার কারণ প্রয়োজনীয় প্রমাণিকসহ আরডিপিপিতে উল্লেখ করতে হবে। প্রস্তাবিত মেয়াদকালে প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট সময় কর্মপরিকল্পনা পুনর্গঠিত আরডিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ প্রকল্পের আর কোনো সংশোধন বা মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন না হয় সেদিকে কর্তৃপক্ষকে সচেতন থাকতে হবে।

প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে সম্মানি, বিজ্ঞাপন ও অনিয়মিত শ্রমিক মজুরি খাতগুলোর ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি উল্লেখপূর্বক যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করতে হবে। অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা অঙ্গের জন্য পূর্তকাজের ড্রয়িং, ডিজাইনসহ এর ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে পুনর্নির্ধারণ করা। পরামর্শক অঙ্গের ব্যয় তিন কোটি টাকা বৃদ্ধির যৌক্তিকতা পুনর্গঠিত আরডিপিপিতে উল্লেখ করতে হবে।

এছাড়া, প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও কার্যপরিধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের বিষয়সমূহ পুনর্নির্ধারণপূর্বক কোন দেশে কতজন কর্মকর্তা কত দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে সে বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ পুনর্গঠিত আরডিপিতে উল্লেখ করতে হবে। কম্প্রেসরের আয়ুষ্কাল এবং কূপসমূহ থেকে গ্যাস প্রাপ্যতার সময়কাল বিবেচনা করে আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংশোধন করতে হবে। পরিপত্র অনুযায়ী প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে তিন মাস পূর্বে পাঠানোর কথা থাকলে আলোচ্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে তা কেন অনুসরণ হয়নি তা ব্যাখ্যা করতে হবে।

প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক ব্যয় বিভাজনে থোকের পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট একক পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। প্রকল্পের হালনাগাদ অঙ্গভিত্তিক ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতির বিবরণ আরডিপিপিতে সংযোজন করতে হবে এবং উপরে বর্ণিত আলোচনা ও সিদ্ধান্তের আলোকে পুনর্গঠিত আরডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে দ্রুত পাঠাতে হবে বলেও পিইসির সভায় সুপারিশ করা হয়েছে।

এসআর/এফআর