কোপা-ইউরো ঘিরে জমজমাট অনলাইন জুয়া : টাকা পাচার হচ্ছে বিদেশে
কোপা আমেরিকা ও ইউরো ফুটবল কাপকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনলাইন জুয়ার আসর চলছে। দেশি-বিদেশি ফুটবল, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ঘুরে এক শ্রেণির অনলাইন জুয়াড়ি জুয়া খেলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জুয়ার এসব টাকা পাচার হচ্ছে দেশের বাইরে।
কোপা আমেরিকা ও ইউরো কাপকে ঘিরে অনলাইন জুয়া পরিচালনার সঙ্গে জড়িত তিন জুয়াড়িকে আটকের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব। আটকরা হলেন- কামাল হোসেন (৩৩), টুটুল মোল্লা (৩২) ও মিজানুর রহমান (৩৩)।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (১০ জুলাই) দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি দল ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় থেকে অনলাইনে জুয়া খেলার অপরাধে মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন নথিপত্রসহ আটক করে।
রোববার (১১ জুলাই) বিকেল ৪টায় মিরপুর পাইকপাড়ায় র্যাব-৪ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে র্যাবের কাছে অভিযোগ আসে যে, দেশি-বিদেশি ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা যেমন- আইপিএল, বিপিএল, পিএসএল, এসপিএল, সিপিএলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজ এবং ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, লা-লিগা, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিসহ বিবিধ খেলায় এক শ্রেণির অনলাইন জুয়াড়ি জুয়া খেলে দেশে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সম্প্রতি ইউরো কাপ ফাইনাল ও কোপা আমেরিকা ফাইনাল খেলাকে কেন্দ্র করে অনলাইন জুয়াড়িরা দেশের বেশিরভাগ তরুণ ও খেলাপ্রেমীদের ওপর ভিত্তি করে আরো সক্রিয় হয়ে উঠে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে তিন জুয়াড়িকে আটক করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা অনলাইন জুয়ার সাইটে ইউজার আইডি খুলে বেটিং সাইটের এজেন্টের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ডলার ও ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রয় করে এসব বেটিং সাইটে ডিপোজিট করে দীর্ঘ দিন ধরে জুয়া খেলছে।
তারা অনলাইন জুয়া খেলার ওয়েবসাইটে খেলাধুলার বাজি পরিচালনা করে। এছাড়াও পলাতক আসামিদের সহযোগিতায় বাজির টাকা ডলারে কিংবা ডলার টাকায় রূপান্তরিত করে জুয়া খেলা পরিচালনা করত। তারা নিজেরা বিকাশ নম্বরে টাকার লেনদেন করত।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ওয়েবসাইটে তাদের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তারা অনলাইনে জুয়ার বাজি ধরার টাকা পলাতক আসামিদের সহযোগিতায় ডলারের মাধ্যমে লেনদেন ও স্থানান্তর করে থাকে। অনলাইন ভিত্তিক এসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে তরুণদের বিভ্রান্তির মাধ্যমে দেশের আর্থিক ক্ষতি করে আসছিল। অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে তারা বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাচার করত। প্রতিদিন বিকাশ এজেন্ট নম্বরে তিন লাখ টাকা থেকে চার লাখ টাকা লেনদেন হতো। তারা সরকারের অনুমোদনহীন ও অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার সাইট ব্যবহার করে বিভিন্ন জুয়াড়িদের সঙ্গে অনলাইনে জুয়া খেলত।
আটক কামাল হোসেন জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে পেশায় একজন বিকাশ এজেন্ট। তার মোবাইলে একটি অ্যাপস ডাউনলোড করেন। যার মাধ্যমে তার নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বর সবার কাছে চলে যেত। যারা বাজি ধরে তারা বিদেশে টাকা পাঠাত। যারা বাজিতে জিতে তাদের নম্বর ও টাকার পরিমাণ কামালের মোবাইলে চলে যায়। তখন তাদের টাকা কামাল বিকাশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মোবাইল নম্বরে পাঠিয়ে দেয়। বর্তমানে এই অ্যাপসে প্রতিদিন ৩-৪ লাখ টাকা আসে। বাজিতে ৫০০-৩০০০ টাকা ধরা হয়। এখানে জুয়াড়িদের উপস্থিত থাকতে হয় না। এটি অনলাইনেই খেলা যায়। যারা জিতে তাদের টাকা বিকাশে পাঠানো হয়। বিকাশের এজেন্ট কামাল প্রতি লাখে ৪০০ টাকা কমিশন পেতেন এবং বাকি টাকা এই চক্রের প্রধান অভিযুক্ত পলাতক সারোয়ার ও তার সহযোগী মিরাজকে হাতে হাতে দিতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আটক টুটুল মোল্লা জানান, তিনি পেশায় একজন মুদির দোকানদার। প্রায় ছয় মাস আগে মোবাইলে একটি অ্যাপস ডাউনলোড করে বিভিন্ন খেলায় বাজি ধরা শুরু করেন। আরও ৩-৪ জন সহযোগী নিয়ে বাজি খেলতেন। তিনি এ পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক টাকার বাজি খেলেছেন বলে স্বীকার করেন। তার এ সহযোগীদের মধ্যে কেউ বাজিতে জিতলে তাদের টাকা তিনি পরিশোধ করতেন। তার একাউন্টে টাকা জমা থাকত।
অপর আটক মিজানুর রহমান পেশায় একজন ফলের দোকানদার। প্রায় এক বছর আগে মোবাইলে দুটি জুয়ার অ্যাপস ডাউনলোড করে বিভিন্ন খেলায় বাজি ধরা শুরু করেন। তিনি নিজে বাজি খেলার পাশাপাশি অন্যান্যদেরও খেলায় উদ্ধুদ্ধ করতেন। তার এই অ্যাপসে ১০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা যায়। মিজানুরই মূলত আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় এই বাজি খেলা উঠতি বয়সী তরুণ ও যুবকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে।
আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। পলাতক অনলাইন জুয়াড়িদের বিরোধী বিশেষ নজরদারি এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জেইউ/ওএফ