রাজধানীর যেসব স্থানে বসবে কোরবানির পশুর হাট
প্রতিবার কোরবানির ঈদের আগে পশুর হাটকে কেন্দ্র করে দেশে এক ধরনের উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এবারের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। প্রথম দিকে স্থায়ী দুইটি হাটসহ মোট ২৫টি কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় সংস্থাগুলো হাটের সংখ্যা কমিয়ে এনেছে। নির্ধারিত এই হাটগুলোতে করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় পৃথক দুটি স্থায়ী হাটসহ সংস্থা দুটি আরও বেশ কয়েকটি হাট নির্ধারণ করেছে। প্রাথমিকভাবে স্থায়ী সারুলিয়া পশুর হাটের পাশাপাশি আরও ১৩টি স্থানে হাট বসাতে চাইলেও পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১০টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতে স্থায়ী গাবতলী পশুর হাটের পাশাপাশি আরও ১০টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হলেও করোনা বিবেচনায় উত্তর সিটিতে পাঁচটি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা দক্ষিণ সিটির যে ১০টি হাট নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক ই,এফ,জি এইচ, সেকশন ১ ও ২ এর খালি জায়গা।
এছাড়া অন্য হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে- গোলাপবাগের ডিএসসিসি মার্কেটের পেছনের খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধুপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ও রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটির যে পাঁচ স্থানে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) ব্লক-ই-সেকশন ৩ এর খালি জায়গা, কাওলা শিয়াল ডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গা ও উত্তরখান মৈনারটেক হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গা। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবার বড় পরিসরে ডিজিটাল হাট বসিয়েছে, তারা এবার এই ডিজিটাল হাটকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানিয়েছেন, করোনা মহামারি বিবেচনায় তিন পশুর হাট বাতিল করেছে ডিএসসিসি। বাতিল করা পশুর হাটগুলো হলো- লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা এবং শ্যামপুর কদমতলী বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা।
তিনি বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ করপোরেশন এলাকায় ১৩টি অস্থায়ী পশুর হাটের ৩ পর্যায়ে দরপত্রের আহ্বান জানিয়ে ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের দরপত্র শেষে ১০টি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা দেওয়া হয়। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় তৃতীয় পর্যায়ের দরপত্র শেষে আর কোনো পশুর হাট ইজারা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাটগুলোতে ঈদুল আজহার দিনসহ মোট ৫ দিন হাটে পশু কেনাবেচা করা যাবে। হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনসহ অন্যান্য শর্তাবলী সাপেক্ষে অস্থায়ী ১০ পশুর হাট ইজারাপ্রাপ্তদের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করা হচ্ছে।
তবে হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি কি আদৌ মানানো সম্ভব হবে? এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, হাট মানেই প্রচুর লোকের সমাগম। যে কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। ক্রেতা বিক্রেতার সরব উপস্থিতিতে হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানানো একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। খুব ভালোভাবে হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানানো অতটা সহজ কাজ নয়। হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আমরা একটি প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। সরকারি আয়োজনে কোনো দামাদামি না করে একদামে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি করা যেতে পারে। তারপরও যদি হাট বসাতেই হয়, সেক্ষেত্রে কার্যকরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনায় হাট যত কম করা যায়, ততই উত্তম।
করোনাকালে হাট বসলে সংক্রমণ এড়াতে গতবছরের মতো স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কাজ করবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। করপোরেশনগুলো বলছে, হাট বসানোর ক্ষেত্রে মানা হবে স্বাস্থ্যবিধি। যদিও এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোরবানির পশু নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকে।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গতবছর করোনাকালে হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর লক্ষ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল কর্তৃপক্ষ। এবারও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- কোরবানির পশুর হাটের নির্ধারিত সীমানা বহাল থাকবে। ইজারা গ্রহীতা নিজ ব্যবস্থাপনায় হাটের চৌহদ্দি সংরক্ষণপূর্বক চৌহদ্দির বাইরে যাতে পশুর হাট প্রসারিত না হয় তা নিশ্চিত করবে। এছাড়া হাটের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব কর্মী নিযুক্ত করা হবে। হাটের মধ্যে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না। ইজারা গ্রহীতাকে হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যক অস্থায়ী টয়লেট স্থাপন করতে হবে। হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক সাবান রাখতে হবে। গায়ে জ্বর থাকলে কাউকে হাটে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। হাটে প্রবেশকারীকে গ্লাভস, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি সম্বলিত ব্যানার, পোস্টারিং করে ধারাবাহিকভাবে প্রচারণা চালাতে হবে। জীবাণুনাশক দিয়ে হাটের সর্বত্র ও আশপাশের সংশ্লিষ্ট জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ক্রেতা, বিক্রেতা ও ইজারাদারের নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক পরে হাটে আসতে হবে। হাটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাবান, পানির ড্রাম ও বেসিন রাখতে হবে। হাটে প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য পৃথক গেট করতে হবে। এছাড়াও বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিকে হাটে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এএসএস/এমএইচএস