পার্কটি রাগ ভাঙাবে কবে থেকে?
সালটা ছিল ২০১৮। সে বছরের জানুয়ারি মাসে রাজধানীর ওসমানী উদ্যানের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছিল। সে সময়ই উদ্যানটির নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। কথা ছিল ১০ মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ করে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে উদ্যানটি। কিন্তু সাড়ে ৩ বছরেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি উদ্যোনের কাজের।
প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে টিন আর কংক্রিটে আবদ্ধ ওসমানী উদ্যান। রাজধানীর গুলিস্তান সংলগ্ন আর সচিবালয়ের প্রধান ফটকের ঠিক উল্টো দিক এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগরভবনেরও ঠিক উল্টো দিকে অবস্থিত উদ্যানটিই ওসমানী উদ্যান। ২০১৮ সালে নতুন করে অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শুরুর আগে এর নাম ঠিক করা হয়েছিল ‘গোসসা নিবারণী পার্ক’ বা সহজ ভাষায় রাগ ভাঙানোর পার্ক।
বিজ্ঞাপন
এই পার্কে আগতদের মন ভালো করতে, উৎফুল্ল রাখতে এখানে থাকবে জলের আধার, চা, কফি, স্যান্ডউইচ খাওয়ার ব্যবস্থা, বিশ্বকাপ বা অন্য কোনো খেলা দেখার জন্য এই পার্কের ভেতরেই থাকবে বড় কয়েকটি টিভি স্ক্রিন। ভেতরে ঢুকতেই পার্কটির জলাধারের পাশ থেকে পুরনো দিনের গান ভেসে আসবে। শোনা যাবে নতুন দিনের নানা সঙ্গীতও, যা মনকে সতেজ করবে।
সে সময় বলা হয়েছিল- পথ চলতে চলতে কোনো পথচারীর যেকোনো বিরক্তির কারণে মেজাজটা গরম? অথবা কারও ওপর রাগ ভর করেছে, এমন নানান সমস্যায় জর্জরিত নাগরিকদের মন ভালো করে দিতে বা রাগ-গোসসা নিবারণ করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এই ‘গোসসা নিবারণী পার্ক’। গুলিস্তান সংলগ্ন ওসমানী উদ্যানে তৈরি হচ্ছে এই অত্যাধুনিক পার্কটি। প্রায় ২৪ একর জায়গায় পার্কটির প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। তবে কাজের খুব ধীর গতির কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।
এখানে সাড়ে তিন বছর ধরে আটকে রেখে অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলছে একেবারেই ধীরগতিতে। এছাড়া চারদিকে টিন দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। প্রধান ফটকও আটকে রেখে সামনে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ’। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এখানে হাঁটতে আসা স্থানীয়রা।
বঙ্গবাজার সংলগ্ন পুরান ঢাকার বাসিন্দা মকিদুর রাহমান বলেন, আগে এখানে নিয়মিত হাঁটতে আসতাম। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে পার্কের নির্মাণকাজ করা হচ্ছে বলে চারেদিক দিয়ে প্রবেশ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কবে যে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে, আর কবে যে এই পার্ক মানুষের রাগ ভাঙাবে তা কেউ বলতে পারে না।
উদ্যানটির বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন হলে পার্কটি পুরোপুরি বদলে যাবে। আমাদের প্রকৌশলী বিভাগ তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী পার্কটির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
তবে ডিএসসিসি প্রকৌশলী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত সাড়ে তিন বছরে পার্কটির কাজের সার্বিক অগ্রগতি মাত্র ৬৫ শতাংশ হয়েছে। উদ্যানটির উন্নয়নকাজের দায়িত্ব পেয়েছিল দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা খুব ধীরগতিতে তাদের কাজ করছে। একাধিকবার তাগাদা দেওয়ার পরও ঠিকাদারের কাজের গতিতে সন্তুষ্ট নয় ডিএসসিসি। এ জন্য তাদের কার্যাদেশ বাতিলের প্রাথমিক সিদ্ধান্তও হয়েছে। কার্যাদেশ বাতিল হলে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে বাকি কাজ দ্রুত শেষ করতে চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
জানা গেছে, অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উদ্যানটির দুটি জলাশয় সংস্কার করে সারাবছর পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা এবং সার্বিক পরিবেশ উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে উদ্যানের ভেতর স্বাধীনতা চত্বর, পাঠাগার, নগর জাদুঘর ও শিশু কর্নার নির্মাণ, সাউন্ড সিস্টেম যুক্ত করা, ফ্রি ওয়াইফাই জোন, টেবিলটেনিস, বিলিয়ার্ডসহ বিভিন্ন ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এখানে। সেই সঙ্গে ফুড কর্নার, ওষুধের দোকান এবং এটিএম বুথ বসানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
এএসএস/এইচকে