পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের মোবাইল ছিনতাইয়ের এক মাসেরও বেশি সময় পার হয়েছে। গত ১ জুন ডিএমপির কাফরুল থানায় এ ঘটনায় একটি মামলাও হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফোনটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ফোন ছিনতাইয়ের পর কয়েক দফা হাত বদল হয়ে রাজধানীর হাতিরপুলের একটি দোকানে যায়।

সেই দোকান থেকে একজন ক্রেতা ফোনটি ৩০-৩৫ হাজার টাকায় কিনে নেন। তবে সেই ক্রেতার খোঁজ পাচ্ছে না পুলিশ। তাকে না পাওয়ায় ফোনটি উদ্ধার করা যাচ্ছে না বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

পরিকল্পনামন্ত্রীর ফোন ছিনতাইয়ের মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিকল্পনামন্ত্রীর ফোন ছিনতাইকারীসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা সবাই কারাগারে আছে। তাদের দেওয়া তথ্য মত, পুলিশ গত এক মাস ধরে ফোন উদ্ধারের কাজ করছে। কিন্তু সর্বশেষ যে ব্যক্তির হাতে ফোনটি গেছে তার সন্ধান না পাওয়ায় ফোন উদ্ধার করা যাচ্ছে না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, পরিকল্পনামন্ত্রীর ফোনটি এখন পর্যন্ত চার দফা হাত বদল হয়েছে। প্রথম ছিনতাইকারী ফোনটি একজনের কাছে হাজার ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। পরে সে আরেকজনের কাছে ফোনটি বিক্রি করে ১৫ হাজার টাকায়। ওই ব্যক্তি ফোনটি রাজধানীর হাতিরপুলের একটি ইলেকট্রনিক দোকানে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। পরে ওই দোকান থেকে পরিকল্পনামন্ত্রীর ফোনটি এক ক্রেতা ৩০-৩৫ হাজার টাকায় কিনে নেন। ফোনটি কিনলেও ওই ক্রেতা এখন পর্যন্ত অজানা কোনো এক কারণে ফোনে সিম কার্ড দিয়ে চালু করেননি। আর সিম কার্ড না থাকায় ফোনটিকে প্রযুক্তি ব্যবহার করেও উদ্ধার করতে পারছে না পুলিশ। সেই ক্রেতাকেও খোঁজাখুঁজি করে তার সন্ধান পাচ্ছে না পুলিশ।

পরিকল্পনামন্ত্রীর ফোন উদ্ধারের সার্বিক বিষয়ে মামলার তদন্তকারী এসআই জিএম ফরিদুল আলম বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রীর ফোন ছিনতাইকারী ও ফোন বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩-৪ জনকে গ্রেফতার করেছি। এখন ফোনের সর্বশেষ ক্রেতাকে আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। ফোন ছিনতাইয়ের বিষয়ে গণমাধ্যমে অনেক সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় ওই ক্রেতা ফোনটিতে আর সিম-কার্ড ব্যবহার করছেন না মনে হয়। ফলে প্রযুক্তি ব্যবহার করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তার সন্ধান পাওয়া গেলে ফোনটি উদ্ধার করা যাবে।

পরিকল্পনামন্ত্রীর ফোন উদ্ধারের বিষয়ে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) মামলার তদারকি কর্মকর্তা কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিমুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, ‘ফোনটি সর্বশেষ যিনি কিনেছেন তাকে আমরা খুঁজছি। তাকে পেলেই আশা করি ফোনের সন্ধান পেয়ে যাব। এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তদন্ত চলছে।’

গত ৪ জুন পরিকল্পনামন্ত্রীর ফোন ছিনতাইকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছিলেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন।

তিনি বলেছিলেন, ‘পরিকল্পনামন্ত্রীর ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় একজনকে আমরা শনাক্ত করেছি। ছিনতাইয়ের ঘটনার আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। তার নাম ঠিকানা ও পরিচয় পুলিশের হাতে এসেছে। তিনি রাজধানীর বিজয় সরণি এলাকায় ভাসমান অবস্থায় জীবন যাপন করতেন। বিজয় সরণি এলাকার উড়োজাহাজের ভাস্কর্যের নিচে প্রতি রাতে ঘুমাতেন।’

গত ৩ জুন কাফরুল থানা পুলিশ বলেছিল, চন্দ্রিমা উদ্যানের ভেতরের টোকাই-ছিনতাইকারী, শেরে বাংলা মাঠ সংলগ্ন এলাকার টোকাই, আগারগাঁওসহ আশপাশের এলাকার স্থানীয় ও সন্দেহভাজনদের থানায় আনা হয়েছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মোবাইলের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

একই দিনে পরিকল্পনামন্ত্রীর ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জিএম ফরিদুল আলম ঢাকা পোস্ট কে বলেছিলেন, ‘ফোন উদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। একাধিক লোককে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। এখনো ফোন উদ্ধারের মতো কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি। ছিনতাই হওয়ার জায়গা ও এর আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। তবে সিসিটিভি ফুটেজে ছিনতাইয়ের ঘটনার তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।’ 

এদিকে মামলার তদন্তের শুরুর দিকে মামলার ছায়া তদন্ত করা ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহাবুব আলম ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, ‘ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনাটি মূলত থানা পুলিশ দেখছে। আমরা থানা পুলিশকে এ বিষয়ে সাপোর্ট দিচ্ছি। ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের এলাকা সিসিটিভির আওতায় নেই। ঠিক কোন জায়গায় ছিনতাই হয়েছে সেই স্থানটি নির্দিষ্ট করা যায়নি। স্থান নির্ধারণ করা গেলে এবং ওই স্থানের আশপাশে অথবা রাস্তায় সিসিটিভি থাকলে তা দেখা হবে। ফোন উদ্ধারে ডিবি কাজ করে যাচ্ছে।’

যেভাবে ঘটেছিল ঘটনাটি

রোববার (৩০ মে) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে বের হয়ে বিজয় সরণি সিগন্যালের জটে পড়ে মন্ত্রীকে বহনকারী গাড়ি। এ সময় মন্ত্রী গাড়ির গ্লাস খুলে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। তখনই এক ছিনতাইকারী তার হাত থেকে মোবাইলটি ‘ছোঁ’ মেরে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে একই দিনে ডিএমপির কাফরুল থানায় মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী একটি মামলা করেন।

চুরি যাওয়া ফোন নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, ৩০ মে সন্ধ্যায় অফিস থেকে বের হয়ে ৬টা ৪৫ মিনিটে বিজয় সরণি এলাকায় গাড়িটি সিগন্যালে অপেক্ষা করছিল। এ সময় গাড়ির এসি বন্ধ করে দিয়ে গ্লাস নামিয়ে দেই।

এম এ মান্নান বলেছিলেন, গাড়িটা দাঁড়িয়ে ছিল। আমি পেছনের সিটে বসা ছিলাম, আমার হাতে মোবাইল ছিল। আমি মোবাইলে কিছু একটা করছিলাম। হঠাৎ এক ঝলকে অবিশ্বাস্য রকম ঝড়ের মতো গতিতে এসে হাত থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে চলে গেল। আমি দেখিনি লোকটাকে। আমাদের লোক গাড়ি থেকে নামল। কিন্তু ৩০-৪০ সেকেন্ডের মধ্যে লোকটা কোথায় মিশে গেল।’

এমএসি/ওএফ