চট্টগ্রাম বন্দরে রফতানিপণ্য জাহাজিকরণে বড় ধরনের কোনো সমস্যা নেই। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে জাহাজ এবং খালি কন্টেইনারের সংকট নেই বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী। 

বুধবার (৭ জুলাই) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষ থেকে ‘চট্টগ্রাম বন্দরে রফতানিপণ্য জাহাজিকরণ সংক্রান্ত’ এক ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন সচিব।

সচিব বলেন, আজকের আলোচনায় উঠে এসেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজিকরণের কোনো সমস্যা নেই। এখন পর্যন্ত বড় কোনো সমস্যা হয়নি। তবে অদূর ভবিষ্যতের সমস্যা মোকাবিলায় আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। গত ১৫ দিনে বাংলাদেশ থেকে ২৬টি জাহাজ ছেড়ে গেছে। সেগুলোর ক্যাপাসিটি ছিল ৩৮ হাজার টিইইউএস (বিশ ফুটের কন্টেইনার)। কিন্তু জাহাজগুলো পণ্য পরিবহন করেছে ২৭ হাজার টিইইউএস। অর্থাৎ, ১১ হাজার টিইইউএস স্পেস অব্যবহৃত থেকেছে। চট্টগ্রাম বন্দর এবং বিভিন্ন অফডকে প্রায় ৪০ হাজার টিইইউএস খালি কন্টেইনার রয়েছে।

সভায় জানানো হয়, পণ্য ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর ২৪ ঘণ্টা চালু রেখে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণজনিত লকডাউনের সময়েও চট্টগ্রাম বন্দর ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে। জাহাজ থেকে পণ্য এবং কন্টেইনার আনলোডিং, আমদানিকারক বরাবর ডেলিভারি এবং রফতানি কন্টেইনার জাহাজে বোঝাই কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬ টিইইউএস কন্টেইনার, ১১ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৩ টন কার্গো এবং ৪ হাজার ৬২টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে। যেখানে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২ টিইইউএস কন্টেইনার, ১০ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৭২ টন কার্গো এবং ৩ হাজার ৭৬৪টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কার্গো, কন্টেইনার এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১১.৯৮ শতাংশ, ৩.০৯ শতাংশ এবং ৭.৯২ শতাংশ ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

সভায় আরও জানানো হয়, ছোট-খাটো যেসব সমস্যা আছে সেগুলো নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। ভবিষ্যতে বন্দরের চাহিদা মোকাবিলা করা এবং সম্ভাব্য সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) সুলতান আব্দুল হামিদের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বন্দর, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ কন্টেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফা), বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) এবং সংশ্লিষ্টরা যুক্ত থাকবেন।

বাংলাদেশ থেকে রফতানিপণ্য ও দ্রব্য বোঝাই কন্টেইনার দ্রুত রফতানির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কয়েকটি প্রস্তাবনা পেশ করা হয় আজকের সভায়। প্রস্তাবনাগুলো হলো- শিপিং এজেন্ট এবং মেইন লাইন অপারেটরগণের (এমএলও) মধ্যে ‘কমন ক্যারিয়ার এগ্রিমেন্ট’ করা, ডাইরেক্ট কলিং অব শিপ টু ফাইনাল ডেস্টিনেশন, এমএলওগণের মধ্যে কন্টেইনার সরাসরি ইন্টারচেঞ্জ, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডগণ কর্তৃক অফডকসমূহকে বিলম্বে কার্গো লোডিং প্লান প্রদান না করা, অফডকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। এগুলো বাস্তবায়ন হলে জাহাজ ও কন্টেইনার জট কমে আসবে। অধিক হারে কন্টেইনার রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধি পাবে।

এসআর/এইচকে