ঘড়িতে তখন ১২টা বেজে ২৩ মিনিট। স্থান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিট। চাদঁপুর মতলব থেকে করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স কেবলই থেমেছে ঢামেকের করোনা ইউনিটের সামনে। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী অ্যাম্বুলেন্সের সামনে গিয়ে রোগীকে নামানো থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো তারা সবাই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বৃহন্নলার সদস্য। কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই রোগীদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন তারা। অ্যাম্বুলেন্স থেকে রোগীদের নামিয়ে কোভিড জরুরি বিভাগ, এমনকি ওয়ার্ডে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি কারও অক্সিজেন মাস্ক না থাকলে বিনামূল্যে অক্সিজেন মাস্ক সরবরাহ করছেন তারা। এছাড়া গরিব অসহায় রোগীদের ঢাকার মধ্যে বিনামূল্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন এ সংগঠনের সদস্যরা।

মঙ্গলবার (৬ জুলাই) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। চলতি বছরে মার্চ থেকে ঢামেকে এ সেবা চালু করেন বৃহন্নলার সদস্যরা। মাঝখানে দেশে করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় বন্ধ রাখা হয়। তবে সম্প্রতি আবারও করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ায় পুনরায় এ সেবা চালু করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

আরও পড়ুন : কিছু মনে করবেন না, একটু এগিয়ে দিয়ে আসি?

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অনেকেই বিরক্তি বা আতঙ্কের চোখে দেখেন। ঢাকায় তো কথাই নেই! পার্ক, রাস্তা ও গণপরিবহনে রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সরব উপস্থিতি। হাত বাড়িয়ে অথবা গায়ে পড়ে টাকা দাবি করেন তারা। টাকা না দিলে গালিগালাজের ঘটনাও ঘটে। তাদের চিরচেনা সেই অভ্যাস পরিবর্তন করে মানুষের বিপদে এগিয়ে আসতে দেখে অবাক অনেকেই।

কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা হোসনে আরা। করোনা উপসর্গ নিয়ে ১ জুলাই ৯০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন তিনি। অক্সিজেন লেভেল ভালো থাকায় আজ মঙ্গলবার (৬ জুলাই) তাকে ছাড়পত্র দিয়েছেন চিকিৎসক। গত কয়েক দিন হোসনে আরার দেখভাল করেছেন তার ভাগ্নে সাগর।

তিনি বলেন, আমার খালাকে আজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কীভাবে বাড়ি ফিরব তা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। এ সময় বৃহন্নলার স্বেচ্ছাসেবীরা বিনাভাড়ায় আমাদের কেরানীগঞ্জ পৌঁছে দেওয়ার কথা জানান। আমরা তাতে রাজি হয়ে যাই। প্রতিদিনই তারা অসংখ্য রোগীকে এভাবে বিনাখরচে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন।

কথা হয় সেচ্ছাসেবী হাসনার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা করোনা আক্রান্ত বা করোনা উপসর্গ দিয়ে যেসব রোগী হাসপাতালে আসছেন তাদের অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে জরুরি বিভাগে দিয়ে আসি। এছাড়া অর্থের অভাবে যারা অক্সিজেন মাস্ক কিনতে পারছেন না তাদের আমরা কিনে দিই। 

বৃহন্নলার প্রতিষ্ঠাতা সাদিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে ২০১৭ সালের নভেম্বরে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করি। এরপর থেকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি শুরু। আমাদের উদ্দেশ্য মানুষকে সাহায্য করা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমরা কাজ করেছিলাম। পরে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমে যাওয়ায় এখানে আর কার্যক্রম পরিচালনা করিনি। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ দিতে সাতক্ষীরা গিয়েছিলাম।আবারও করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ায় ঢামেকে কার্যক্রম শুরু করেছি আমরা। করোনা সংক্রমণ না কমা পর্যন্ত এখানে সেবা দিয়ে যাব আমরা।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে টিম চালাতে প্রতিদিন অনেক টাকা খরচ হয়। আমরা চেষ্টা করছি অনুদান সংগ্রহের। পর্যাপ্ত অনুদান পাওয়া গেলে আমাদের কার্যক্রম আরও প্রসারিত করা যাবে।

এসএএ/এসকেডি