পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও কোনো গাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে না

রাজধানীর রাসেল স্কয়ার থেকে গাবতলী ব্রিজ পর্যন্ত যেতে পুলিশের মোট পাঁচটি চেকপোস্ট চোখে পড়ে। কোনো চেকপোস্টে পুলিশের ২/১ জন সদস্য ছাতা মাথায় নির্বাক দাঁড়িয়ে আছেন। আবার কোনোটিতে কেউই নেই। কোথাও কোথাও আবার কিছুটা চেকিং।

সোমবার (৫ জুলাই) সকাল ১০টায় রাজধানীর মিরপুর রোড ধরে রাসেল স্কয়ার থেকে গাবতলী ব্রিজ পর্যন্ত এমন চিত্রই দেখা গেছে। অন্যগুলোতে ঢিলেঢালা ভাব থাকলেও কিছুটা কঠোর অবস্থানে গাবতলী পুলিশ চেকপোস্ট। আর রাসেল স্কয়ার চেকপোস্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের যৌথ কার্যক্রম লক্ষ্য করা গেছে।

আজ থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুলেছে। যার ফলে মানুষের চাপ বেড়েছ রাজধানীর সড়কে। গতকাল যে চেকপোস্টে গাড়ির জটলা বেঁধেছিল, এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো দিয়ে আজ গাড়িগুলো সাই সাই করে বেরিয়ে যাচ্ছে। তবে সড়কে দায়িত্বে থাকা কয়েকটি চেকপোস্টের পুলিশ সদস্যরা বলছেন, কল্যাণপুর-গাবতলীর দিকে সকালের পর হঠাৎ গাড়ির চাপ কমে গেছে। তাই মনে হতে পারে রাস্তায় পুলিশ শিথিলতা দেখাচ্ছে।

মিরপুর সড়ক ঘুরে দেখা যায়, কল্যাণপুর ফুটওভার ব্রিজের নিচের চেকপোস্টে তিন থেকে চারজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। টেকনিক্যাল মোড়ে থাকা চেকপোস্ট আছেন দুই-তিনজন সদস্য। এই দুটি চেকপোস্টে কোনো গাড়িকে দাঁড় করিয়ে চেক করতে দেখা যায়নি।

টেকনিক্যাল মোড় পার হয়ে গাবতলীর দিকে যেতে আরও দুটি চেকপোস্ট রয়েছে। তবে সেখানে কোনো পুলিশ সদস্যের দেখা পাওয়া যায়নি। এই সড়কের সর্বশেষ গাবতলী পুলিশ চেকপোস্ট। সেখানে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

গাবতলী থেকে ফেরার পথে মাজার রোড মোড়, টেকনিক্যাল মোড় পুলিশ চেকপোস্টে কোনো চেকিং তৎপরতা নেই। তবে কিছুটা শক্ত অবস্থানে দেখা গেছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে থাকা শেরে বাংলা নগর থানার বসানো চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের। আর এরপর রাসেল স্কয়ার মোড়ে দেখা মিলেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ কর্মকাণ্ড। সেখানে বেশিরভাগ গাড়িই চেক করার পর ছাড়া হচ্ছে।

লকডাউনের পঞ্চম দিনে সড়কে মানুষের উপস্থিতি অনেকটা বেশি। কমবেশি তাদের সবাইকে ম্যাজিস্ট্রেটের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রয়োজনের পাশাপাশি অজুহাতের কমতি ছিল না আজও। ডাক্তার দেখানো, ওষুধ আনতে যাওয়া, রোগী দেখতে যাওয়া, ব্যাংকে টাকা জমা ও তুলতে যাওয়া, দোকানে যাওয়াসহ নানান কারণ নিয়ে বের হচ্ছেন মানুষ। কারণ যৌক্তিক হলে যেতে পারছেন, অন্যথায় গুনতে হচ্ছে জরিমানা।

সড়কে পুলিশ শিথিলতা দেখাচ্ছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধানমন্ডি ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহিদ আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পুলিশ কোনোভাবেই শিথিলতা দেখাচ্ছে না। বরং কঠোর অবস্থানে আছে। আজ থেকে ব্যাংকগুলো খোলা। তাই রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। আমরা দেখেছি ব্যাংকের প্রায় বেশিরভাগ কর্মকর্তারই নিজস্ব গাড়ি রয়েছে। সেগুলো তো আটকে রাখা সম্ভব সম্ভব না। তাই তাদের যেতে দিচ্ছি। না হলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে, আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন না।’

একই প্রশ্নের জবাবে দারুসসালাম ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইত্তেখায়রুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সকালের দিকে গাড়ির চাপ কিছুটা বেড়েছিল, দুপুরের দিকে কমেছে। কারণ, আমাদের এই দিকে যাতায়াতটা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেইজড। গাবতলীর পথ দিয়ে যারা যাতায়াত করেন তাদের বেশিরভাগই সাভার-আশুলিয়ার যান। গাড়ির চাপ কম থাকায় বিষয়টি শিথিল হয়েছে মনে হত পারে। তবে আমরা শিথিলতা দেখাচ্ছি না।’

রাসেল স্কয়ার মোড়ে দায়িত্ব পালন করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিদ ফরহাদ শামীম বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলায় আজ সড়কে চাপ বেড়েছে। এদিকে কয়েকটি হাসপাতাল থাকায়, সবাই হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে। এছাড়া ব্যাংকে লেনদেন করতে যাওয়ার কথাও বলে মানুষ। তাদের তো আটকানো যায় না। অন্যদিকে অনেকে ফার্মাসিটিক্যাল ও প্রেসের স্টিকার ব্যবহার করছেন। এসব যানবাহনে যাদের সন্দেহ হচ্ছে, তাদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এমএইচএন/এমএইচএস