বিদেশগামীদের টিকা মিলবে চলতি সপ্তাহে, আগে পাবেন যারা
কয়েক দফা ঘোষণা দিয়েও বিদেশগামীদের টিকাদান কার্যক্রম এখন পর্যন্ত শুরু করা যায়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশগামীদের টিকা দেওয়ার জন্য জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডাটাবেজে যে নিবন্ধন চলছে তার সুফল মিলবে চলতি সপ্তাহেই। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) থেকে সুরক্ষা অ্যাপের কার্যক্রম চালু হবে। আর শুরুতেই টিকা মিলবে সৌদি আরব ও কুয়েতগামী কর্মীদের।
রোববার (৪ জুলাই) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বিদেশগামীদের টিকা নিয়ে যে সংকট দেখা দিয়েছে তা অচিরেই কেটে যাবে। বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধিতদের জন্য সোমবার (৫ জুলাই) না হলেও মঙ্গলবার (৬ জুলাই) থেকে সুরক্ষা অ্যাপ চালু করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা যে রেজিস্ট্রেশনগুলো নিচ্ছি এগুলো সুরক্ষা অ্যাপে সফল হবে। সুরক্ষা অ্যাপ চালু হলেই এর সুফল মিলবে। সুরক্ষা অ্যাপ কাল বা পরশু থেকে চালু হবে। তবে সুরক্ষা অ্যাপ চালু হলেই যে লাখ লাখ প্রবাসী টিকা পেয়ে যাবেন এটা ভাবা ঠিক হবে না। একটু সময় লাগবে। চলতি সপ্তাহ থেকে বিদেশগামীরা টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে সুখবর পাবেন। আগে টিকা পাবেন সৌদি আরব ও কুয়েতগামীরা। এরপর অন্য দেশের কর্মীদের দেওয়া হবে।’
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার (৫ জুলাই) বিকেলে আইসিটি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় একটি ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সুরক্ষা অ্যাপের উদ্বোধন করবেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চালু হতে যাওয়া সুরক্ষা অ্যাপে দুটি ক্যাটাগরি থাকবে। একটি থাকবে সৌদি-কুয়েতগামীদের জন্য। অপর ক্যাটাগরি থাকবে সৌদি-কুয়েত বাদে বাকি দেশগুলোর জন্য। এই ক্যাটাগরি সিস্টেম চালু করা হবে সুরক্ষা অ্যাপ চালুর একদিন পর। সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধিত কর্মীরা তাদের ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট দেখিয়ে অ্যাপ-এ নির্দেশিত তারিখ ও স্থানে টিকা নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সৌদি-কুয়েতগামীদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে শুধু রাজধানী ঢাকাতেই। তবে অন্যান্য দেশের কর্মীরা রেজিস্ট্রশনের পর ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলো থেকেও টিকা নিতে পারবেন।
গত ১৭ জুন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হবে। শুরুতে চীন থেকে আসা উপহারের ছয় লাখ টিকা থেকে কিছু টিকা তাদের দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু সৌদি আরব ও কুয়েত সরকার চীনের সিনোফার্মের টিকার অনুমোদন না দেওয়ায় ঝুলে যায় প্রবাসীদের টিকার বিষয়টি।
১৯ জুন প্রবাসীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে আরেক দফা ঘোষণা দেওয়া হলেও নিবন্ধনের সমাধান না হওয়ায় টিকা দেওয়া শুরু করা যায়নি। এরই মধ্যে কয়েকটি জেলার সিভিল সার্জন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, প্রবাসী কর্মীদের আগে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে নিবন্ধন করে আসতে হবে। এরপর গত ২৪ জুন বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মীরা ছুটে আসেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। ঢাকায় এসেও কোনো সমাধান না পেয়ে মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।
ওই দিন সিভিল সার্জনদের এ ধরনের কাজকে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, সিভিল সার্জনদের বিভ্রান্তিকর একটি সার্কুলারের কারণে বিদেশগামী কর্মীদের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এতে কর্মীরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।
গত ২৯ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঘোষণা দেন, প্রবাসী কর্মীদের সাতটি কেন্দ্রে ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে। এ ঘোষণার পর অনেক প্রবাসী ওই সাত কেন্দ্রে হাজির হন। কিন্তু তাদের কোনো টিকা মেলেনি। এরপর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করে। সেদিন ১২৭ জন প্রবাসীকে টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রবাসীদের বিক্ষোভের কারণে সেটিও সম্ভব হয়নি।
এনআই/ওএফ/জেএস