দেশে মহামারি করোনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলায় আইসিইউ ও অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই অবস্থায় ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে সংকট। জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই রোগী নিয়ে রাজধানীতে আসছেন। তাদের অধিকাংশই ছুটছেন সরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে, স্বজনের জন্য খুঁজছেন আইসিইউ। কিন্তু আইসিইউ খালি নেই ঢাকার বেশিরভাগ করোনা হাসপাতালে। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্যমতে, রাজধানীর ৫টি হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই। এছাড়া তিনটিতে আইসিইউ শয্যার কোনো ব্যবস্থাই নেই। 

আইসিইউ খালি নেই যেসব হাসপাতালে

উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, ৫০০ শয্যার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিট, ৫০০ শয্যার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

আইসিইউর ব্যবস্থা না থাকা তিনটি হাসপাতাল হলো- মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলোজি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস এন্ড হসপিটাল।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে যত মৃত্যু হয়েছে তার সাড়ে ৭৭ শতাংশই হয়েছে আইসিইউ সুবিধা কম থাকা সাত বিভাগে। আর সাড়ে ২২ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে।

আইসিইউ খালি আছে কোথায়, কতটি 

ঢাকার প্রধান প্রধান করোনা হাসপাতগুলোতে এই মুহূর্তে আইসিইউ বেড খালি নেই। অন্য করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে কিছু আইসিইউ বেড খালি আছে। তবে তাও সংখ্যায় কম।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ২০টির মধ্যে মাত্র তিনটি আইসিইউ বেড খালি আছে। এছাড়া ২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৫টির মধ্যে ৮টি, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ৬টির মধ্যে ১টি, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৫টির মধ্যে ২টি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১০টির মধ্যে ৪টি, ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালে ৫টির মধ্যে ৩টি, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১০টির মধ্যে ৪টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) করোনা হাসপাতালে ২১২টির মধ্যে ১০২টি আইসিইউ বেড খালি রয়েছে।

সবমিলিয়ে সরকারি পর্যায়ে করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষিত ১৫টি হাসপাতালের মধ্যে ১২টি হাসপাতালে সর্বমোট ১২৭টি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা রয়েছে। এই ১২৭টি শয্যার মধ্যে ১০২টিই মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালে।

আইসিইউ সুবিধা নেই সারাদেশের ৫২ করোনা হাসপাতালে

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ১০০টি হাসপাতালের মধ্যে ৫২টিতেই আইসিইউ সুবিধা নেই। এর মধ্যে ৩৫টি জেলা সদর হাসপাতাল। মোট আইসিইউর প্রায় ৭৫ শতাংশই ঢাকা বিভাগে, ২৫ শতাংশ বাকি সাত বিভাগে।

সংক্রমণ বাড়ার কারণ উদাসীনতা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সংক্রমণ বাড়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান কারণ হলো- দেশের অধিকাংশ মানুষই নিয়ম মেনে মাস্ক পরেননি। স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা ছিল, মানেননি। এই মাস্ক পরা ও সামজিক দূরত্ব বজায় রাখা, এই দুটি উপায় ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘গত একমাস যাবত বলা হচ্ছিল সংক্রমণটা আবার বাড়বে, কিন্তু কোনো মানুষই কোনো ধরনের বিধিনিষেধ, সামাজিক দূরত্ব ও সচেতনতা মানেনি। এক্ষেত্রে শুধু সরকার নয়, সাধারণ জনগণকেও আন্তরিক হতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ তো বিশ্বাসই করে না যে করোনাভাইরাস বলে কিছু আছে। দেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে এক কোটি মানুষ হয়তো বিশ্বাস করে, তাও তাদের সবাই মাস্ক পরেন না। তাহলে এই দেশে কীভাবে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে?’

দেশে করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি

শনিবার (৩ জুলাই) জানানো হয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা দেশে এক দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৯১২ জনের। এই একদিনে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ২১৪ জন। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৫৬।  

টিআই/জেডএস/জেএস