মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। যা ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে আজ অনেকেই ঘর থেকে বের হয়েছেন নানা অজুহাতে, জরুরি সেবার নামে চলতে দেখা যায় বিভিন্ন যানবাহন।

শুধু তাই নয়, মাস্ক ছাড়াই জরুরি সেবা কিংবা কাজের নামে বেরিয়ে জরিমানাও গুনতে হয়েছে কাউকে।

সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে প্রতিপালন ও মাস্ক পরিধানের ওপর সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজধানীর মিরপুর দারুস সালাম সড়কে চেকপোস্ট বসায় পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

বেলা সাড়ে ১১টায় র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হকের উপস্থিতিতে অভিযান শুরু হয়। সেখানে বিভিন্ন অজুহাতে বের হওয়া মানুষ ও যানবাহন ব্যবহারকারীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। ওই স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাব-৪ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান।

মিরপুরে সরেজমিন দেখা যায়, কেউ বের হয়েছেন ব্যাংকের জরুরি সেবা, কেউ যাবেন হাসপাতালে, কেউ যাবেন বিমানবন্দরে। আবার এক বৃদ্ধ দম্পতিকে দেখা যায় আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন। জরুরি ওষুধ বিপণনের কাজে বের হলেও মাস্ক না পরায় সুজন মিয়া নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত।

অভিযানে দেখা যায়, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কর্মী ভর্তি একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ঝ ১১-০৬৮৩)। বাসে আসনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় আরো ১০/১৫ জনকে। সবাই হাসপাতালটির নার্স। পরে সেখানে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান বাসের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা হাসপাতালটির কর্মীদের নামিয়ে দেন। তাদের পরে ওই অফিস বাস ফিরে এসে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন।

এব্যাপারে হাসপাতালটির একজন নার্স জানান, আমরা দুপুরের শিফটে হাসপাতালে ডিউটি করার জন্য হোস্টেল থেকে বেরিয়েছিলাম। আজকে হাসপাতাল থেকে মাত্র একটি বাস আমাদের নিয়ে যাওয়া আসার জন্য বরাদ্দ করায় ঝামেলাটা হয়েছে। অফিসের সঙ্গে কথা হয়েছে। অফিস জানিয়েছে আগামীকাল থেকে আরও একটি বাস অর্থাৎ মোট দুটি বাস আমাদের নার্সদের হাসপাতালে পৌঁছানো এবং হোস্টেলে পৌঁছানোর জন্য ব্যবহার করা হবে।

র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, সরকারি নির্দেশনা পরিপালনে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো মাঠে সজাগ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব। এরই অংশ হিসেবে মিরপুরে আমাদের এই চেকপোস্ট এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হচ্ছে।

অভিযানকালে দেখা যায়, অনেকেই বিভিন্ন অজুহাতে জরুরি সেবা ও জরির কাজের নাম করে ঘর থেকে বেরিয়েছেন। যাদের অনেকেরই বিধিনিষেধের শর্তানুযায়ী ঘরের বাইরে আসার সুযোগ ছিল না। আমরা কাউকে কাউকে ভৎসনা করেছি। কাউকে সতর্ক করেছি, অনেকের গাড়ি ঘুরিয়ে দিয়েছি, অনেককে ঘরে ফিরতে অনুরোধ করেছি। আবার যাদের জরুরি সেবা ও জরির কাজের অজুহাতকে যথাযথ মনে হয়েছে তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছি। তবে এই কঠোর লকডাউনের সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমাদের সবার সচেতনতা। না হলে করোনার সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব নয়।

জেইউ/জেডএস