সীমান্তে টাওয়ার বসিয়ে তথ্য নিচ্ছে মিয়ানমার
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছি
বাংলাদেশের সীমান্তে মিয়ানমারের মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সি টাওয়ার বসানোর বিষয়ে ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নিয়ে সর্বত্র তোলপাড় চলছে। মঙ্গলবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন এক সংসদ সদস্য। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আজ বুধবার (৩০ জুন) সকালে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছি’।
২৮ জুন রাত ৯টা ২০ মিনিটে ‘সীমান্তে টাওয়ার বসিয়ে তথ্য নিচ্ছে মিয়ানমার’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। এরপর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে এ বিষয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন অনলাইন ও জাতীয় দৈনিকও তাদের অনলাইন ভার্সনে নিউজটি ঢাকা পোস্টের সূত্রে প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
জাতীয় সংসদের আলোচনায় এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তথ্য ওঠে গতকাল মঙ্গলবার (২৯ জুন)। জাতীয় সংসদের আইন প্রণয়ন কার্যাবলীর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হারুনুর রশিদ এ সংক্রান্ত আলোচনার সূত্রপাত করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘এখানে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন। আমাদের বার্মার (মিয়ানমার) সীমান্তে তারা টাওয়ার বসিয়েছে। সংবাদমাধ্যমে (ঢাকা পোস্ট) খবর প্রকাশিত হয়েছে। এটি খুবই উদ্বেগের।’ ওই সময় অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
এ বিষয়ে বুধবার (৩০ জুন) সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সেখানে (মিয়ানমার সীমান্তে) সেলফোন কাজ করছে। সেখানে এ ব্যাপারে অনেকে সায় দিয়েছে। আমি তো বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এ নিয়ে মিডিয়া হৈ চৈ করেছিল। আমেরিকার ১০ জন আইন প্রণেতা আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন। ইউএনএইচসিআর-সহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলল, ফোর জি না হলে তারা কোনো কাজ করতে পারবে না। তারা কিন্তু কাজ করে কক্সবাজারে বসে। সেখানে ফোর জি, ফাইভ জি সব আছে। কিন্তু তারা চায় রোহিঙ্গাদের ফোর জি। ফোর জি হলে ফোন সেট লাগে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার। সাধারণ ফোনের দাম হয়ত পাঁচ-ছয় হাজার টাকা। রোহিঙ্গারা ফোর জির জন্য এত টাকার ফোন কিনবে কীভাবে? ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলো ফোর জি না হলে ওদের হবে না বলে ভাব দেখাল। আমার ধারণা, ফোর জির মাধ্যমে তারা ছবি-টবি আদান-প্রদান করে। তারা মেয়েদের ছবি তোলে, ট্র্যাফিকিং করে। ছবি দেখিয়ে সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়ায় মেয়েদের বিয়ে দেয়। একটি বিশেষ সংগঠনও তাতে জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘তারা এমনিতেই তথ্যপাচার করছে। টাওয়ার দেওয়া না দেওয়া সমান। ফোর জি ব্যবহারে মাদকদ্রব্য পাচারে সুবিধা হচ্ছে। আমরা তা বন্ধ করতে চেয়েছিলাম মানবপাচার বন্ধের জন্য।’
‘সীমান্তে টাওয়ার বসিয়ে বাংলাদেশে রেজিস্টার্ড (নিবন্ধিত) সিম পাঠাচ্ছে তারা। এসব সিম ব্যবহার করছে অপরাধীরা। তাদের ফোনকল নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বাংলাদেশ।’- ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদনে উঠে আসা এ তথ্যের বিষয়য়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছি’।
ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফে ইয়াবাসহ বাংলাদেশের জন্য হুমকি এমন নানা ডিল (লেনদেন) হচ্ছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এমপিটি’র (মিয়ানমার পোস্টস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস) ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে। এছাড়া টাওয়ার স্থাপনের ফলে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা খুব সহজেই বাংলাদেশের অনেক তথ্য পেয়ে যাচ্ছে।
সীমান্তে এমপিটি’র ব্যবহার এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব বিভাগ এ সিমের বিক্রির বিষয়ে জানে। স্থানীয়রা জানান, সীমান্তের এত কাছে এমপিটি’র টাওয়ারগুলো আগে ছিল না। ২০১৯ সালের আগস্টে কক্সবাজারে হঠাৎ করে একটি বড় আকারের রোহিঙ্গা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ সরকার। কক্সবাজার ও টেকনাফের আশপাশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এ সুযোগে বাংলাদেশের বাজার ধরা শুরু করে মিয়ানমার। তারা তাদের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এমপিটিকে এ কাজে ব্যবহার করে। গত দেড় বছরে এমপিটি সীমান্তে অন্তত ১২টি টাওয়ার স্থাপন করেছে। ২০১৯ সালের আগে সেখানে কোনো টাওয়ার ছিল না।
শুধু তা-ই নয়, ১১ লাখ রোহিঙ্গার বাজার ধরতে এমপিটি কম দামে সিমকার্ড এবং আকর্ষণীয় মিনিট ও ইন্টারনেটের অফার দিচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় এক লাখ এমপিটি সিমের ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে। অস্ত্র, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক চোরাকারবারিদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে এ সিম।
পিএসডি/এইচকে/জেএস