গত দু’মাসে সংক্রমণের ৭০-৮০ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট
গত দুই মাসে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। মঙ্গলবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর।
করোনা ভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটির কারণেই বিপর্যস্ত হয়েছে প্রতিবেশি দেশ ভারত। মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৭ জন। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৩ কোটি ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৯৭ জন। ভারতে এ সর্বনাশের সিংহভাগই হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউয়ে।
বিজ্ঞাপন
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, আইইডিসিআর নিয়মিত ভিত্তিতে কোভিড-১৯ এর উচ্চ সংক্রমিত এলাকাগুলোতে আক্রান্ত রোগীদের কেস ইনভেস্টিগেশন, কন্টাক্ট ট্রেসিং এবং সন্দেহজনক রোগীদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করছে। এখন পর্যন্ত গত দুই মাসে যে নমুনাগুলোর সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে, তার মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বলে শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে টানা তিন দিন শতাধিক মৃত্যু দেখল বাংলাদেশ। গত ২৭ জুন করোনায় ১১৯ জনের মৃত্যু হয়, ২৮ জুন মৃত্যু হয় ১০৪ জনের, আর আজ মৃত্যু হয়েছে ১১২ জনের।
এর আগে গত ৪ জুন আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, ৫০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করে ৪০টিতেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় বলা যায়, দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) হয়েছে।
ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, সংক্রমণের গতিবিধি বিবেচনায় বলা যায় হয়তো কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় সংক্রমণ কমে যাবে, তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আরও বাড়বে।
এ অবস্থায় এক সতর্কবার্তায় আইইডিসিআর জানিয়েছে, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাসহ অন্যান্য জেলায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ কোভিড-১৯ এর অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতে আইইডিসিআর জনসাধারণকে ঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি (যেমন বিনা প্রয়োজনে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া ইত্যাদি) মেনে চলার জন্য অনুরোধ করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের বিস্তারের মুখে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোসহ ৪০টি জেলা। এ অবস্থায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ১৪ দিনের সম্পূর্ণ শাট ডাউন দেওয়ার সুপারিশ করেছিল।
তবে শাট ডাউনের পথে না গিয়ে ২৮ জুন থেকে ১ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত সীমিত পরিসরে লকডাউন এবং তার পরবর্তী ৭ দিন সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করেছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে সারাদেশেই উচ্চ সংক্রমণ, পঞ্চাশটির বেশি জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। এটি প্রতিরোধে খণ্ড খণ্ডভাবে নেওয়া কর্মসূচির উপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অন্যান্য দেশ, বিশেষত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা হলো, কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া এর বিস্তৃতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ভারতের যেসব স্থানে পূর্ণ ‘শাটডাউন’ প্রয়োগ করা হয়েছে সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে।
টিআই/এনএফ/জেএস