জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো দেশে বড় ধরনের আক্রমণাত্মক কোনো ঘটনা ঘটানোর সামর্থ্য নেই বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

মঙ্গলবার (২৯ জুন) দুপুরে র‍্যাব সদর দফতরে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা যেভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছি এতে জঙ্গিবাদের স্থান বাংলাদেশে হবে না। তাদের থেকে আমরা এক ধাপ এগিয়ে আছি। এই মুহূর্তে আমাদের গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, জঙ্গিদের আক্রমণাত্মক হওয়ার সামর্থ্য নেই। 

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, র‍্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত আড়াই হাজার এবং শুধুমাত্র হলি আর্টিজান হামলার পরে দেড় হাজার জঙ্গি গ্রেফতার করেছে। র‍্যাবের জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

তিনি আরও বলেন, র‍্যাবের কাছে ১৬ জন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে। তাদেরকে ডি-রেডিক্যালাইজেশনের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করতে চাইলে তাদেরকেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

জঙ্গিদের কার্যক্রম দুর্বল হলেও মাঝেমধ্যে র‍্যাবের বা বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জঙ্গিরা গ্রেফতার হচ্ছে। জঙ্গিদের কার্যক্রম এখন কীভাবে চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের ডিজি বলেন, জঙ্গিগোষ্ঠীর থেকে আমরা এক ধাপ এগিয়ে আছি। আমাদের সাইবার সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সাইবার জগতে জঙ্গি কার্যক্রমের মনিটরিং করা হচ্ছে। এই মনিটরিংয়ের মাধ্যমে যখনই আমরা তথ্য পাচ্ছি তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনছি। আমরা তাদের থেকে একধাপ এগিয়ে আছি বলেই এখন কোনো জঙ্গি সহিংসতা ঘটছে না। বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটার আগেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। র্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নে যেমন জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ একটি ইতিবাচক প্রতিযোগিতা রয়েছে, ঠিক তেমনি অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এই জঙ্গিবাদ দমনে একটা ইতিবাচক প্রতিযোগিতা রয়েছে। এর ফলে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

জঙ্গিদের মূল উদ্দেশ্যটা কী, এমন প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের ডিজি বলেন, জঙ্গিদের এখন মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সংঘটিত হওয়া। তবে তারা সংগঠিত হতে পারছে না। যখনই তারা অনলাইনে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই আমরা তথ্য পাচ্ছি এবং তাদের গ্রেফতার করছি।

বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে বাইরের কোনো জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এখানে যে জঙ্গিরা আছে তারা হোম গ্রো (দেশীয়ভাবে) তৈরি। বিদেশি জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের এখনো কোনো তথ্য আমরা পাইনি। আমাদের দেশের জঙ্গিরা অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও দেখে এবং দেশের জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংঘটিত হওয়ার চেষ্টাকালে আমরা খবর পেয়ে যাচ্ছি। তখনি তাদের গ্রেফতার করছি। এর ফলে আর কোনো বড় ধরনের জঙ্গি হামলার ঘটনা দেশে ঘটছে না।

হলি আর্টিজানের মতো এরকম আর কোনো ঘটনা ঘটলে সেক্ষেত্রে ওই ঘটনা মোকাবিলায় র‍্যাবের কতটুকু সক্ষমতা রয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে র‍্যাবের ডিজি বলেন, আমরা বলেছি, এখন তাদের সেই ক্যাপাসিটি আছে বলে মনে করি না। তবে যেকোনো ধরনের হামলার জন্য আমরা কিন্তু প্রস্তুত আছি। এই মুহূর্তে তাদের এই ধরনের হামলা করার সামর্থ্য নেই বলে কিন্তু আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগি না। আমাদের নিজেদের প্রশিক্ষণ এবং যে ধরনের প্রযুক্তি তারা তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি সেগুলো বৃদ্ধি করার কাজ আমরা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি। আমরা আশা করি যেকোনো ধরনের হামলা করার চেষ্টা করা হলে অনেক আগেই আমরা সেটি প্রতিহত করতে পারব।

জঙ্গিরা অনলাইনে কী ধরনের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে এখন সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে, এমন প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব প্রধান বলেন, জঙ্গিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা সবসময় একই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে তা কিন্তু না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় তারা বিভিন্নভাবে তাদের কার্যক্রম চালায়। তবে আমরাও কিন্তু তাদের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করি।

র‍্যাব ডিজি বলেন, হলি আর্টিজান পরবর্তী জঙ্গি অভিযানে শাহাদৎ বরণকারী লে. কর্নেল আজাদ এবং সব দেশপ্রেমী, অকুতোভয় র‌্যাব সদস্য যারা দেশের স্বার্থে দায়িত্বপালনের সময় জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে থেকে যেসব চিকিৎসক, নার্স, সাংবাদিক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য পেশাজীবীরা দেশ ও মানবপ্রেমে জাগ্রত হয়ে কাজ করছে তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

র‌্যাব জঙ্গি দমনে প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলছে জানিয়ে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতিষ্ঠা থেকে আমরা দুই হাজার পাঁচশ ৫১ জন জঙ্গি গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। জঙ্গি দমনে বিগত সময়ের অভিজ্ঞতায় হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় র‌্যাব। ঘটনার পরপরই র‌্যাব সদস্যরা হোটেল ও তার আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। চূড়ান্ত সম্মুখ অবস্থান নিয়ে রাত ১২টার মধ্যেই মূল অভিযান তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। নৃশংস এই হামলায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আদালতে চার্জশিট দাখিলের মাধ্যমে তদন্তকাজও শেষ হয়েছে এবং বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই এ হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে রায় কার্যকর হবে।

তিনি বলেন, র‌্যাবের অভিযানে হলি আর্টিজানের হামলার আসামিদের গ্রেফতারে র‌্যাবের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী জেএমবি আমির সারোয়ার জাহান র‌্যাবের অভিযানে পালাতে গিয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু হয়। এছাড়া গ্রেফতার করা হয় জেএমবির শূরা সদস্য মামুনুর রশীদ রিপন এবং অপর শীর্ষ নেতা শরিফুল ইসলাম খালিদ। তারা ঘটনার পরিকল্পনা, অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল। এছাড়া র‌্যাবের অভিযানে বন্ধ হয় হলি আর্টিজানের বিভৎস ছবি তাৎক্ষণিক প্রচার করা আত্-তামকীন ওয়েবসাইট এবং গ্রেফতার হয়েছিল অ্যাডমিনসহ বেশ কয়েকজন সদস্য।

এমএসি/জেডএস