তাপস মেয়র থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন: সাঈদ খোকন
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাঈদ খোকন।
রাজধানীর গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ ডিএসসিসি’র অভিযানে উচ্ছেদ হওয়া দোকান মালিকদের এক মানববন্ধনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে শনিবার (০৯ জানুয়ারি) দুপুরে হাইকোর্ট সংলগ্ন কদম ফোয়ারায় ওই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্প্রতি গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ডিএসসিসি’র সাবেক ও বর্তমান মেয়রের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নিজের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর দোকান মালিকদের ওই মানববন্ধনে উপস্থিত হন সাবেক মেয়র খোকন।
অবিভক্ত ঢাকার প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হন। সর্বশেষ নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসকে বেছে নেয় আওয়ামী লীগ। পরে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য পদে সাঈদ খোকনকে মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মানববন্ধনে তিনি বলেন, তাপস মেয়র হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন। রাঘব বোয়ালের মুখে চুনোপুটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে দুর্নীতি মুক্ত করুন, তারপর চুনোপুটির দিকে দৃষ্টি দিন। মেয়র তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তরিত করেছেন। এই শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং করছেন। অপরদিকে অর্থের অভাবে করপোরেশনের গরীব কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না।
সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তাপস সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯, ২য় ভাগের ২য় অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯ (২) (জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন খোকন।
সাবেক মেয়র বলেন, ফুলবাড়িয়া মার্কেটে সিটি করপোরেশন যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে তা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। কারণ, মহামান্য আদালতের নির্দেশনায় ব্যবসায়ীদের বৈধ করতে করপোরেশনের বোর্ড সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মার্কেটের নকশা সংশোধন এবং বকেয়া ভাড়া আদায় সাপেক্ষে বৈধ ব্যবসা পরিচালনার অনুমতির সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক, সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ নকশা সংশোধন করে এবং রাজস্ব বিভাগ ৭-৮ বছরের বকেয়া ভাড়া আদায় করে ব্যবসায়ীদের বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দেয়।
সাঈদ খোকন আরও বলেন, মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সফলতার সাথে তা পালন করি। ভৌত-অবকাঠামো ও নাগরিক সেবা নিশ্চিতসহ আমার অন্যতম লক্ষ্য ছিল, কর্মসংস্থান ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা। নাগরিকদের জীবনমানের সামগ্রিক উন্নয়ন সাধন করা। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার। এর ধারাবাহিকতায় আমি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করি। ফুলবাড়িয়াসহ গুলিস্তান এলাকার বিভিন্ন দোকানদারকে বৈধতা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দেওয়া ছিলো এ লক্ষ্যের অন্যতম পদক্ষেপ।
সাম্প্রতিক বৈরিতার শুরু যেভাবে
ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ অবৈধ দোকান উচ্ছেদে গত ৮ ডিসেম্বর মার্কেটে অভিযান শুরু করে ডিএসসিসি। প্রথমদিনের অভিযান দোকানিদের বাধার মুখে পড়লেও ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৪১টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়।
মেয়র ফজলে নূর তাপস ব্যবসায়ী নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলুকে দিয়ে নোংরামি করাচ্ছে। যার মাধ্যমে তার নিজের ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন
দোকান বৈধতা দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৯ ডিসেম্বর সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। সাঈদ খোকন ছাড়াও ডিএসসিসির সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাজেদ, কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদকে মামলায় আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ৩১ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ রয়েছে
মামলার আবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২১ জুন থেকে ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর এ ব্লকে নির্মিত নকশাবহির্ভূত স্থাপনাগুলো বৈধতা দেওয়ার কথা বলে আসামিরা বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৫৭৫ টাকা নিয়েছেন। তবে পরে তাদের সেসব দোকান উচ্ছেদ হলেও তারা টাকা ফেরত পাননি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, উচ্চ আদালতের নির্দেশ এবং সিটি করপোরেশন সভার মাধ্যমে এসব দোকানের বৈধতা দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। প্রতিটি দোকানের বিপরীতে ট্রেড লাইসেন্স এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া আদায় করেছে ডিএসসিসি। কিন্তু এই দোকানগুলো অবৈধ উল্লেখ করে সেগুলো উচ্ছেদে নেমেছেন বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
তিনি অভিযোগ করেন, মেয়র ফজলে নূর তাপস ব্যবসায়ী নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলুকে দিয়ে নোংরামি করাচ্ছে। যার মাধ্যমে তার নিজের ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের কার্যক্রম চলমান থাকবে। নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে চলমান অভিযান কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, সকল অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে। কোনভাবেই এই কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। আমরা কোনোভাবেই সেটাতে আপস করব না।
মেয়র ফজলে নূর তাপস
সম্প্রতি ডিএসসিসির ৪ নম্বর ওয়ার্ডে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের (এসটিএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, সুশাসিত ঢাকা আমাদের ইশতেহারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। সুশাসিত ঢাকা ছাড়া উন্নত ঢাকা গড়া সম্ভব নয়। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি এতে হেয় প্রতিপন্ন হন, লজ্জিত হন, সেটা সেই ব্যক্তির বিষয়।
তিনি এসময় বলেন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের কার্যক্রম চলমান থাকবে। নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে চলমান অভিযান কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, সকল অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে। কোনভাবেই এই কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। আমরা কোনোভাবেই সেটাতে আপস করব না।
এএসএস/এসআরএস