প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির কারণে কৃষিতে অর্জিত সাফল্য বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেলে উন্নীত করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৪’ প্রদান উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির মধ্যে হওয়ায় অনুষ্ঠানটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই কৃষিখাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ১৯৯৬ সালে সরকার-গঠনের পর কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম ‘নতুন জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি, ১৯৯৬’ প্রণয়ন করে। এ নীতির ভিত্তিতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলে কৃষিতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়। অতীতের খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলা করে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে।

এ উপলক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা এবং যারা এ পুরস্কার পাচ্ছেন তাদেরও আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১২ বছরে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১ ভাগ, যার পরিমাণ ১০২ লাখ মেট্রিকটন। এছাড়া সবজি, ডাল, পেঁয়াজ, আলু ও তৈলবীজের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ৫৩৪, ৪৪৩, ২৪৮, ৯৬ ও ৭৫ ভাগ। এ সময়ে বিভিন্ন ফসলের ৬৫৬টি উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। সারের মূল্য কমিয়ে ডিএপি প্রতি কেজি ৯০ টাকা থেকে ১৬ টাকা, টিএসপি ৮০ টাকা থেকে ২২ টাকা, এমওপি ৭০ টাকা থেকে ১৫ টাকা ও ইউরিয়া ২০ টাকা থেকে ১৬ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, বিভিন্ন ফসলের বীজ সরবরাহ করা হয়েছে ১৪ লাখ ১ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন। বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন ও সহায়তা দেওয়া করা হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন ও  প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। 

সরকার প্রধান বলেন, প্রায় ৭০ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষি পুনর্বাসন ও প্রণোদনা বাবদ ৯৩ লাখ ৬৫ হাজার কৃষকের মাঝে প্রায় ১ হাজার ৩১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বিশেষ সুবিধার আওতায় ১০ টাকায় ৯৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৪ কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ ভাগ সুদে ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কৃষিঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, সেচ সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে ১১.১২ লাখ হেক্টর, খাল পুনঃখনন ১০ হাজার ৭৩৬ কিলোমিটার, সেচ নালা স্থাপন ২৬ হাজার ১১৪ কিলোমিটার, রাবার-ড্যাম নির্মাণ ১১টি, সেচ অবকাঠামো নির্মাণ ৯ হাজার ১৫টি, শক্তিচালিত পাম্পস্থাপন ৭ হাজার ৪৩৪টি, গভীর নলকূপ স্থাপন ও পুনর্বাসন ১৯ হাজার ১০৮টি এবং ৩৬ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমির জলাবদ্ধতা দূর করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার গৃহীত কৃষি বান্ধব নীতি ও কার্যক্রমের কারণে দানাদার খাদ্য-উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে পাট ও কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, ধান ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে তৃতীয় এবং বদ্ধ-জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। সকল কৃষিপণ্য উৎপাদনের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

তিনি বলেন, দেশের এক ইঞ্চিও জমি অনাবাদী রাখা যাবে না। আমরা মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণেও কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি, আমি কৃষিজমি রক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি মনোযোগী হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাই। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে টেকসই কৃষির উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন। জাতির পিতা ২৫ বিঘা পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফসহ উন্নত কৃষি উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে কৃষি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। ফলে কৃষিপণ্য উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য আসে।

তিনি বলেন, জাতির পিতার নির্দেশে ১৯৭৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার’ প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ট্রাস্ট আইন, ২০১৬’ প্রবর্তনের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’-কে আইনগত ভিত্তি দেওয়া হয়েছে। 

সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অপুষ্টি-ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ-আধুনিক জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৪’ এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

এইউএ/ওএফ