স্বাস্থ্যসুরক্ষা, আত্মরক্ষা এবং সম্ভাবনাময় ক্রীড়া হিসেবে কারাতে-কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাধ্যতামূলক ক্রীড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি বলে মনে করছেন এক অনুষ্ঠানের বক্তারা। তারা বলছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৬টি ক্রীড়া বাধ্যতামূলক করেছে। আমরা মনে করি একটি সুস্বাস্থ্যসম্পন্ন ও ক্রীড়ামুখী বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। 

শনিবার (২৬ জুন) পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও সারাদেশের কারাতে সংগঠকদের সমন্বয়ে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

তারা বলেন, পরিতাপের বিষয় হলো- ১৬টি ক্রীড়া ইভেন্টের মধ্যে কারাতেকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অথচ স্বাস্থ্যসুরক্ষা, আত্মরক্ষা এবং ক্রীড়া ইভেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে কারাতে বেশ জনপ্রিয়। দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত ‘সাফ গেমসে’ বাংলাদেশের কারাতে খেলোয়াড়দের রয়েছে প্রশংসনীয় অর্জন। আমরা মনে করি বহুমুখী উপকারিতা বিবেচনায় কারাতেকে বাধ্যতামূলক ক্রীড়া হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।

আলোচনায় পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, সারাদেশের খেলার মাঠগুলো ধীরে ধীরে দখল এবং সংকুচিত হয়ে গেছে, ফলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক বিকাশের সুযোগ নেই বললেই চলে। এখন কারাতের মতো ইনডোর ইভেন্টগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চর্চা জরুরি। 

পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, কারাতের বিশেষ সুবিধা হলো স্বাস্থ্যসুরক্ষার পাশাপাশি আত্মরক্ষার কৌশল এখানে শেখা যায়। ইনডোর গেমস হিসেবে কারাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য উপযোগী একটি ক্রীড়া।

মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আতিক মোরশেদ বলেন, কারাতের বেশ কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। যেমন- অল্প জায়গায় অনেকে একসাথে অনুশীলন করতে পারে, প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চতর পর্যায়ের সকল ক্লাসের জন্য সুনির্দিষ্ট সিলেবাস রয়েছে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্লাসভিত্তিক প্রশিক্ষণ এবং মূল্যায়ন করা যাবে সহজেই। সারাদেশে কারাতের প্রচুর মানসম্পন্ন প্রশিক্ষক রয়েছে, সেই সাথে রয়েছে বিপুল সংখ্যক প্রশিক্ষণার্থী। কারাতে প্রশিক্ষণে শ্রদ্ধা, শৃঙ্খলা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা প্রশিক্ষণার্থীর সুন্দর জীবন গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। 

১৩তম এসএ গেমসে বাংলাদেশ কারাতের প্রশিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের কারাতে খেলোয়াড়দের সম্ভাবনা রয়েছে, যথাযথ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কারাতে চর্চার সুযোগ থাকলে আরও ভালো ভালো খেলোয়াড় বের হয়ে আসবে।

অন্যান্যরা আরও বলেন, নির্দেশনায় যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, এক্ষেত্রে কারাতের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের মাধ্যমে প্রতিবছর অনেকগুলো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, যেখানে সারাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে থাকে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কারাতের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ১১তম সাফ গেমসে বাংলাদেশের ১৮টি স্বর্ণ পদকের মধ্যে ৪টিই আসে কারাতে ইভেন্ট থেকে এবং ১৩তম সাফ গেমসে ৩টি স্বর্ণসহ রেকর্ড সংখ্যক রৌপ্য ও তাম্র পদক জিতে আমাদের কারাতে প্রতিযোগীরা। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা, আত্মরক্ষা, আত্মশৃঙ্খলা এবং ক্রীড়া মাধ্যম হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাধ্যতামূলক ক্রীড়া হিসেবে কারাতেকে অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবী।

আলোচনায় যুক্ত ছিলেন এস এ গেমসে স্বর্ণজয়ী হুমায়রা আক্তার অন্তরা, পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মু. হাফিজুর রহমান ময়না, এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, ওয়ার্ল্ড কারাতে ফেডারেশনের রেফারি ও কোচ মো. আওলাদ হোসেন, তুল-উ-সামস, জাপান কারাতে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রতন তালুকদার, ক্রীড়া সংগঠক শোয়েব শামীম প্রমুখ।

এমএইচএন/এইচকে