গ্রেফতার হওয়া তিন ছিনতাইকারী

চট্টগ্রামে স্বামী-স্ত্রীসহ চার সদস্যের একটি ছিনতাইকারী চক্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) রাতে নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় থেকে তাদের গ্রেফতার করে ডবলমুরিং থানা পুলিশ।

শুক্রবার (২৫ জুন) বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন।

তিনি বলেন, ছিনতাইকারী চক্রের কাছ থেকে ৮ পিস ডায়মন্ড, বিভিন্ন সময় ছিনতাই করা ১৬টি ব্যাগ, ছিনতাই করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১১টি মোবাইল সেট, নগদ ২০ হাজার টাকা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার হুড কেটে নেওয়ার একটি কাটার উদ্ধার করা হয়।

অভিযুক্তরা হলেন : ছিনতাইকারী চক্রের প্রধান মো. আকাশ (২৪), তার স্ত্রী তানিয়া বেগম (২৫), আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (৪৫) এবং মো. তাজুল ইসলাম (৪০)। আকাশ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় ৩টি মামলা রয়েছে।

ওসি মহসিন বলেন, গত রমজানে সিএনজিচালিত অটোরিকশার পর্দা কেটে এক নারীর ব্যাগ ছিনিয়ে পালিয়ে যায় আকাশ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই নারী নগরীর ডবলমুরিং থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তখন থেকেই তাকে ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ। অবশেষে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন)  রাতে আকাশ ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়।

উদ্ধার  হওয়া মোবাইল ফোন, ব্যাগ ও টাকা

অভিনব পন্থায় ভয়ংকর ছিনতাই

অভিনব পন্থায় ভয়ংকরভাবে ছিনতাই করত আকাশ। তার প্রধান টার্গেট সিএনজিচালিত অটোরিকশা। চলন্ত সিএনজিতেই সে অভিনব পন্থায় পেছনে উঠে যেত। এরপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পর্দা কেটে ভেতরে থাকা যাত্রীর ব্যাগ, মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যেত আকাশ। পুরো ঘটনা ঘটাতে তার সময় লাগে মাত্র ২০ সেকেন্ড!

ওসি মহসিন বলেন, গাড়ির জানালার পাশে বসা যাত্রীদের মোবাইল ছিনিয়ে নিতেও পারদর্শী আকাশ। জানালার পাশে বসা কোনো যাত্রী ফোনে কথা বললে চোখের পলকেই সেটা নিয়ে হাওয়া হয়ে যায় আকাশ।

৩ বছরেই ২ শতাধিক ছিনতাই

আকাশ ছিনতাই করে গত ১০ বছর ধরে। আগে সে নারী ছিনতাইকারী ফারজানার গ্রুপে কাজ করত। পরে ফারজানার গ্রুপ থেকে বের হয়ে এখন নিজেই আরেকটি চক্র তৈরি করেছে।

ওসি মহসিন আরও বলেন, গত ৩ বছরে ২ শতাধিক ছিনতাই করে আকাশ। ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা পর্যন্ত তার মূল অপরাধ সীমানা। সে একদিনে একটি ছিনতাই করত। ভালো আয় হলে কয়েকদিন চুপ থাকত। কিন্তু খারাপ হলে একইদিনে একাধিক ছিনতাইও করত। আকাশ একসময় বন্দরে শ্রমিকের চাকরি করত। তখন বন্দরে চলাচলরত গাড়িগুলো থেকে কৌশলে চালকের মোবাইল ছিনিয়ে নিত সে।

ছিনতাই করেন স্বামী, জামিন করান স্ত্রী

গ্রেফতার হওয়া তানিয়া আকাশের স্ত্রী। তিনি আকাশ সম্পর্কে সবই জানেন। সব জেনেই বিয়ে করেন কম বয়সী আকাশকে। শুধু জেনেই বসে থাকেননি, স্বামীর অপকর্মে সহযোগিতাও করেছেন সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে। আকাশ ছিনতাইয়ের পর সব মালামাল জমা রাখত স্ত্রীর কাছেই। আবার স্বামী ধরা পড়লে আদালত পাড়ায় ছুটতেন স্ত্রী তানিয়া। আকাশ আগেও তিনবার গ্রেফতার হয়। প্রতিবারই জামিন করান স্ত্রী তানিয়া।

উদ্ধার হওয়া হীরা

ওসি বলেন, সর্বশেষ এপ্রিলেও গ্রেফতার হয় আকাশ। জেলও খাটে। তাকে আবারও জামিন করান তানিয়া। কিন্তু জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজে নেমে এবার ধরা পড়ে সে।

পাথর মনে করে হীরা ফেলে দেয় আকাশ

ছিনতাই শেষে অধিকাংশ মালামাল চোরাই মার্কেটে বিক্রি করে আকাশ। কিছু কিছু মালামাল আবার ফেরি করেও বিক্রি করে। মোবাইল ফোন, ব্যাগ আর টাকা ছাড়া বাকি জিনিসপত্র ফেলে দেয় আকাশ। ছিনতাই করা একটি ব্যাগে হীরা পায় সে। কিন্তু সেগুলো পাথর মনে করে রাস্তায় ফেলে দেয়। পরে তাজুল ও আনোয়ারের কাছে জানতে পারে এগুলো হীরা! সঙ্গে সঙ্গে আবার কুড়িয়ে নেয় সে। শুধু এ হীরার ক্ষেত্রেই নয়; অজ্ঞতার কারণে আরও অনেক মূল্যবান জিনিসও কম দামে বিক্রি করে দিত সে। এর মধ্যে লাখ টাকার আইফোন বিক্রি করে মাত্র ৬৫০ টাকায়। ৯০ হাজার টাকা মূল্যের এস৮+ মোবাইল বিক্রি করে ২ হাজার টাকায়!

ছিনতাই করে আকাশ, ভাগ পায় তাজুল-আনোয়ার

গ্রেফতার আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নিজেকে পুলিশের সোর্স বলে পরিচয় দেয়। আর তাজুল সম্পর্কে আকাশের মামা। এই পরিচয়ের সুবাদে ছিনতাই করা মালামালের চার ভাগের তিন ভাগই তাদের দিতে হয়।

মো. আকাশ জানান, ছিনতাই কাজের একটি ভাগ প্রতি সপ্তাহেই কথিত এ ২ সোর্স তাজুল ও আনোয়ারকে দিতে হয়।

পুলিশের অভিযানেও এই তথ্যের সত্যতা মেলে। উদ্ধারকৃত ৮টি ডায়মন্ডের মাত্র দুইটি পাওয়া গেছে আকাশের স্ত্রী তানিয়ার কাছে। বাকি ৬টি ডায়মন্ডের ৩টি উদ্ধার করা হয়েছে আনোয়ারের কাছ থেকে এবং বাকি তিনটি তাজুলের কাছ থেকে। চারজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং  থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কেএম/এসকেডি