পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারি
প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে বিদেশে থাকা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে) বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করেছে ইন্টারপোল।
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা ঢাকা পোস্ট-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে আজ (শুক্রবার) রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল। বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) অর্থাৎ ইন্টারপোলের ঢাকা শাখার অনুরোধে ইন্টারপোল এ রেড নোটিশ জারি করে।
এআইজি সোহেল রানা
এর আগে ৫ জানুয়ারি বিপুল অঙ্কের অর্থপাচারের অভিযোগে বিদেশে থাকা পি কে হালদারের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির জন্য ইন্টারপোলে নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানায় পুলিশ সদরদপ্তর।
এআইজি সোহেল রানা বলেন, ‘বাংলাদেশের পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে আজ (শুক্রবার) রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল। বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) অর্থাৎ ইন্টারপোলের ঢাকা শাখার অনুরোধে ইন্টারপোল এ রেড নোটিশ জারি করে।’
‘বাংলাদেশ পুলিশের ইন্টারপোল শাখা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস ও সাপোর্টিং এলিমেন্টস সহকারে ইন্টারপোল সদরদপ্তরে আবেদনটি প্রেরণ করে। ইন্টারপোলের একটি বিশেষ কমিটি আবেদন এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত ডকুমেন্টস ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আবেদনটি অনুমোদন করে। ইন্টারপোলের কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে প্রকাশের পাশাপাশি সারাবিশ্বে বিভিন্ন দেশে ইন্টারপোলের শাখাসমূহেও প্রেরণ করা হয়েছে এ রেড নোটিশ। এটি আগামী পাঁঁচ বছরের জন্য জারি থাকবে। তবে, প্রয়োজনে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়াদ নবায়নযোগ্য।’
রেড নোটিশে পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দায়ের করা দুর্নীতি দমন আইন, ২০০৪- এর ২১ (১) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পি কে হালদার জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হতে বসেছে এবং গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এসবের মধ্যেই পিকে হালদার গোপনে দেশ ছাড়েন। একপর্যায়ে তার বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও তার গ্রেপ্তারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান উচ্চ আদালত।
পি কে হালদার জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হতে বসেছে এবং গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এসবের মধ্যেই পিকে হালদার গোপনে দেশ ছাড়েন। একপর্যায়ে তার বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও তার গ্রেপ্তারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান উচ্চ আদালত
ওইদিন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ তথ্য জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবীন রব্বানী দীপা ও আন্না খানম কলি। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান।
আদেশের বিষয়টি ঢাকা-পোস্টকে নিশ্চিত করে আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের জন্য তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাঠানো চিঠি (নোটিশ) ইন্টারপোলের সদরদপ্তরে পৌঁছেছে। পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের জন্য ইন্টারপোলের কাছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পৌঁছানোর বিষয়টি আমরা আজ (৫ জানুয়ারি) আদালতকে জানিয়েছি।
এদিকে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার সম্পর্কিত বিষয়ে জানানোর জন্য আগামী ২০ জানুয়ারি মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত। ওইদিন পি কে হালদারের বিষয়ে আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত আদালতের স্বপ্রণোদিত হয়ে জারি করা রুলের মামলায় পাঁচজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করেন হাইকোর্ট। পিপলস লিজিংয়ের কাছে পাওনাদার পাঁচ ব্যক্তি এ মামলায় পক্ষভুক্ত হয়ে ওই ২৫ জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন।
আজ আমি একজন ক্যানসারের রোগী। আমার এখন আর চাকরি নেই। করোনা আসার পর থেকে আমার স্বামীরও চাকরি নেই। আমি আর আমার স্বামী মিলে আমাদের জীবনের কষ্টার্জিত টাকা পিপলস লিজিংয়ে আমানত হিসেবে রেখেছিলাম। এখন আমারা আমাদের টাকা পাচ্ছি না! এতটা অসহায় হয়ে গেছি যে, এবার বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারিনি।
সামিয়া বিনতে মাহবুব, আমানতকারী
২৫ জন হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর এস কে সুর এবং প্রতি সপ্তাহে পি কে হালদারের সঙ্গে যোগাযোগকারী হারুনুর রশিদ (ফাস ফাইন্যান্স), উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সামি হুদা, অমিতাভ অধিকারী, অবন্তিকা বড়াল, শামীমা (ইন্টারন্যাশনাল লিজিং), রুনাই (ইন্টারন্যাশনাল লিজিং), আই খান (ইন্টারন্যাশনাল লিজিং), সুকুমার মৃধা (ইনকাম ট্যাক্স আইনজীবী), অনিন্দিতা মৃধা, তপন দে, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, অভিজিৎ চৌধুরী, রাজিব সোম, ইরফান উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (সাবেক এমডি ব্যাংক এশিয়া), অঙ্গন মোহন রায়, নঙ্গ চৌ মং, নিজামুল আহসান, মানিক লাল সমাদ্দার ও সোহেল সামস। এছাড়া পি কে হালদারকে বিভিন্নভাবে তথ্য দিয়ে সহায়তাকারী মাহবুব মুসা, এ কিউ সিদ্দিকী, মোয়াজ্জেম হোসেন ও লিলাবতী হালদারেরও বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ লিলাবতী হালদার হলেন প্রশান্ত কুমার হালদারের মা।
গত ৩ জানুয়ারি পি কে হালদারের প্রতারণার শিকার সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়েসহ ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা রুল শুনানিতে পক্ষভুক্ত হন। ওইদিন পি কে হালদারের প্রতারণার শিকার সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়েসহ ভুক্তভোগীরা আত্মসাৎকরা অর্থ ফিরিয়ে দিতে আদালতের কাছে আকুতি জানান।
তারা উচ্চ আদালতকে বলেন, আর্থিক ও মানসিক কষ্টে আমরা মারা যাচ্ছি, আমাদের বাঁচান।
পি কে হালদারের বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের রুল
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, পি কে হালদার জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হতে বসেছে এবং গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এসবের মধ্যেই পিকে হালদার গোপনে দেশ ছাড়েন। একপর্যায়ে তার বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও তার গ্রেপ্তারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান উচ্চ আদালত।
দুই ভাই মিলে ভারতে হাল ট্রিপ টেকনোলজি নামে কোম্পানি খোলেন ২০১৮ সালে, যার অন্যতম পরিচালক প্রিতিশ কুমার হালদার। কলকাতার মহাজাতি সদনে তাদের কার্যালয়। আর কানাডায় পিঅ্যান্ডএল হাল হোল্ডিং ইনক নামে কোম্পানি খোলা হয় ২০১৪ সালে, যার পরিচালক পি কে হালদার, প্রিতিশ কুমার হালদার ও তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা। কানাডা সরকারের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কানাডার টরন্টোর ডিনক্রেস্ট সড়কের ১৬ নম্বর বাসাটি তাদের।
এদিকে পি কে হালদারের বিষয়ে স্বপ্রণোদিত রুল জারি হয়েছে জেনে হাইকোর্টের কাছে নিজেদের সীমাহীন কষ্টের কথা বলতে দুদক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ জানুয়ারি দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান হাইকোর্টকে বলেন, পিপলস লিজিংয়ের কয়েকজন আমানতকারী কিছু বলতে চান। একপর্যায়ে অনুমতি নিয়ে হাইকোর্টে নিজেদের দুর্দশার কথা বলেন চার আমানতকারী।
সামিয়া বিনতে মাহবুব নামের এক আমানতকারী অশ্রুসিক্ত নয়নে হাইকোর্টকে বলেন, মাই লর্ড, আজ আমি একজন ক্যানসারের রোগী। আমার এখন আর চাকরি নেই। করোনা আসার পর থেকে আমার স্বামীরও চাকরি নেই। আমি আর আমার স্বামী মিলে আমাদের জীবনের কষ্টার্জিত টাকা পিপলস লিজিংয়ে আমানত হিসেবে রেখেছিলাম। এখন আমারা আমাদের টাকা পাচ্ছি না! এতটা অসহায় হয়ে গেছি যে, এবার বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারিনি। গত এক বছর বাচ্চাদের একটু মাছ মাংস খাওয়াতে পারিনি। আমরা আর্থিক-মানসিক কষ্টে মারা যাচ্ছি। আমারা এখন কার কাছে যাব? মাই লর্ড, আপনাদের কাছে আকুল আবেদন আমাদের বাঁচান।
একপর্যায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে ড. নাশিদ কামাল হাইকোর্টকে বলেন, মাই লর্ড, আমার বাবা এবং আমিসহ পরিবারের পাঁচ জন পিপলস লিজিংয়ে টাকা আমানত রেখেছি। আমারা সরল বিশ্বাসে আমাদের টাকাটা রেখেছিলাম। আমারা গণমাধ্যমে জেনেছি, পি কে হালদার এখান থেকে টাকা নিয়ে পালিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং। তাই এখানকার আমানতকারী হিসেবে আমি আমারা আমাদের টাকাটা ফেরত চাই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মো. শওকতউর রহমান হাইকোর্টকে বলেন, মাই লর্ড, দেশটা কি স্বাধীন করেছিলাম এভাবে নিজে প্রতারিত হওয়ার জন্য? আমি আমার আমানতের টাকাটা ফেরত চাই।
বিনিয়োগকারীদের এসব কথা শুনে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলের শুনানিতে তাদের পক্ষভুক্ত করে নেন। একইসঙ্গে এফিডেভিট আকারে বিনিয়োগকারীদের এই বক্তব্য আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।
পি কে হালদারের কত টাকা
পি কে হালদারের নামে ব্যাংক এশিয়া, এনআরবি গ্লোবাল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ কয়েকটি ব্যাংকের হিসাবে বিভিন্ন সময়ে জমা হয় ২৪০ কোটি টাকা। হাল ট্রাভেল (হাল ট্রিপ) এজেন্সির চেয়ারম্যান পি কে হালদার নিজে। বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা হাল ট্রিপের হিসাবে জমা হয় ৪০৭ কোটি টাকা। ফার্স্ট কমিউনিকেশনের পরিচালকও তিনি। এর ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ৮২৩ কোটি টাকা।
সুখাদা লিমিটেডে পি কে হালদারের শেয়ার ৯০ শতাংশ ও মা লীলাবতী হালদারের ৫ শতাংশ। এ হিসেবে ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকা জমা হয়।
লীলাবতী হালদারের ৩টি ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ১৬০ কোটি টাকা। রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে নেওয়া ৩ গ্রাহকের ঋণের ৬৩ কোট টাকাও লীলাবতী হালদারের হিসাবে জমা হয়। ওই সময়ে রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি ছিলেন পি কে হালদার। একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের হিসাবে এত টাকা জমা হওয়া নিয়ে কোনো ব্যাংক কখনোই প্রশ্ন তোলেনি।
ভাই প্রিতিশ কুমার হালদারের ব্যাংক হিসাবে ৫০ লাখ টাকা জমা থাকলেও তার নামে রয়েছে হাল টেকনোলজি, হাল ট্রিপ টেকনোলজি, পিঅ্যান্ডএল হোল্ডিং, মাইক্রো টেকনোলজিস, নর্দান জুটসহ আরও নানা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ৫০০ কোটি টাকার বেশি জমা হয়, ঋণও রয়েছে।
এত টাকার গন্তব্য কোথায়
ব্যাংক এশিয়ার ধানমন্ডি শাখায় পি কে হালদারের দুটি হিসাবে বিভিন্ন সময়ে ২৪৪ কোটি টাকা জমা হয়। এই হিসাব থেকে রিলায়েন্স ব্রোকারেজে যায় ২০৫ কোটি টাকা, লীলাবতী হালদারের হিসাবে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা, পিঅ্যান্ডএল অ্যাগ্রোতে ১১ কোটি টাকা, আনন কেমিক্যালে ৩ কোটি ও এফএএস ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টে যায় ৪০ লাখ টাকা।
২০১৫ সালে পিপলস লিজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় আনান কেমিক্যাল। এফএএস ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ও রিলায়েন্স ব্রোকারেজের মাধ্যমে এই শেয়ার কেনা হয়।
লীলাবতী হালদারের ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন সময়ে ১৬০ কোটি টাকা জমা হয়। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে তার হিসাবটি ২০১৩ সালের ৭ মার্চ খুলে ওই বছরের ২৬ আগস্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই ৫ মাসে ওই হিসাবে ১৯ কোটি টাকা জমা করে ইমেক্সকো, বর্ণা ও ওরিয়াল নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান। আরেকটি হিসাবে জমা করে ৯ কোটি টাকা, যা ৩০ দিনের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ তিন প্রতিষ্ঠানই রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে ৬৩ কোটি টাকা ঋণ পায়। ওই সময়ে পি কে হালদার ছিলেন রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি। পুরানা পল্টনের ইস্টার্ন ট্রেড সেন্টারের ১০ তলায় এ তিন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, যা তিন মাস ধরে বন্ধ।
হাল ট্রাভেল সার্ভিস মূলত ট্রাভেল এজেন্সি প্রতিষ্ঠান, যা হাল ট্রিপ নামে পরিচিত। এর চেয়ারম্যান পি কে হালদার ও এমডি তাজবীর হাসান। পি কে হালদারের শেয়ারই ৯০ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির কয়েকটি ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন সময় জমা হয় ৪০৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইন্টারনেট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান (আইজিডব্লিউ) ফার্স্ট কমিউনিকেশনের পরিচালক পি কে হালদার। প্রতিষ্ঠানটির ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের হিসাবে বিভিন্ন সময় জমা হয় ৮২৩ কোটি টাকা। পি কে হালদার এমডি থাকাকালে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানটিকে ঋণ দিয়েছিল, যার বর্তমান স্থিতি ৪৩ কোটি টাকা।
পি কে হালদারের বাংলাদেশ মাইক্রোটেকনোলজি ও হাল টেকনোলজি একীভূত হয়ে বর্তমানে হাল টেকনোলজি। এর চেয়ারম্যান ব্যাংক এশিয়ার সাবেক এমডি ইরফানউদ্দিন আহমেদ, তিনি অংশীদারও।
কে এই পি কে হালদার
পি কে হালদারের জন্ম পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দিঘিরজান গ্রামে। বাবা প্রয়াত প্রণনেন্দু হালদার ও মা লীলাবতী হালদার। তার মা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পি কে হালদার ও প্রিতিশ কুমার হালদার— দুই ভাইই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়াশোনা করেন।
২০০৮ সাল পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইআইডিএফসিতে উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পরিচালক ছিলেন পি কে হালদার। ১০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিয়েই ২০০৯ সালে তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি হয়ে যান। এরপর ২০১৫ সালের জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুই ভাই মিলে ভারতে হাল ট্রিপ টেকনোলজি নামে কোম্পানি খোলেন ২০১৮ সালে, যার অন্যতম পরিচালক প্রিতিশ কুমার হালদার। কলকাতার মহাজাতি সদনে তাদের কার্যালয়।
আর কানাডায় পিঅ্যান্ডএল হাল হোল্ডিং ইনক নামে কোম্পানি খোলা হয় ২০১৪ সালে, যার পরিচালক পি কে হালদার, প্রিতিশ কুমার হালদার ও তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা। কানাডা সরকারের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কানাডার টরন্টোর ডিনক্রেস্ট সড়কের ১৬ নম্বর বাসাটি তাদের।
জেইউ/এমএআর