এক সপ্তাহে ঢাকায় সংক্রমণ বেড়েছে ১১৪ শতাংশ
দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ এটিকে তৃতীয় ঢেউ বললেও অনেকেই বলছেন দ্বিতীয় ঢেউ তার আকার বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চলতি বছর দেশে সংক্রমণের ২৪তম সপ্তাহে (গত এক সপ্তাহে) ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ১১৪.৪ শতাংশ করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে রংপুর বিভাগ, সেখানে সংক্রমণ বেড়েছে ৮৬.৭ শতাংশ।
সংস্থাটি আরও বলছে, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪০টিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে গত মঙ্গলবার (২২ জুন) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১৪ থেকে ২০ জুন- এই এক সপ্তাহের নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তের হার বিবেচনায় এসব তথ্য জানিয়েছে তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সংক্রমণের ২৪তম সপ্তাহে সব বিভাগে নতুন শনাক্তের হার বেড়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ১১৪.৪ শতাংশ বেড়েছে ঢাকা বিভাগে। আলোচিত সপ্তাহে ঢাকায় শনাক্ত হয়েছে আট হাজার ২১৫ জন, যা তার আগের সপ্তাহে ছিল তিন হাজার ৮৩১ জন। এরপরেই শনাক্ত বেড়েছে রংপুর বিভাগে, ৮৬.৭ শতাংশ। ওই সপ্তাহে বিভাগটিতে এক হাজার ৫৯৮ জন শনাক্ত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৮৫৬ জন।
ময়মনসিংহ বিভাগে শনাক্ত বেড়েছে ৬১.৯ শতাংশ। সপ্তাহটিতে এ বিভাগে ৬৩৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৯১ জন। এরপর বরিশাল বিভাগে শনাক্ত বেড়েছে ৪৯.৬ শতাংশ। এ বিভাগে আগের সপ্তাহের ২২৬ জন শনাক্ত থেকে শনাক্ত বেড়ে হয়েছে ৩৩৮ জন।
খুলনা বিভাগে শনাক্ত বেড়েছে ৪৯.৩ শতাংশ। এই বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ৪১৮ জনের, তার আগের সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছিল তিন হাজার ৬৩০ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে শনাক্ত বেড়েছে ৪২.২ শতাংশ। বিভাগে শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৯৩৩ জন, যা আগের সপ্তাহে ছিল দুই হাজার ৬২ জন।
এছাড়া সিলেট বিভাগে শনাক্ত বেড়েছে ২০.৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এই বিভাগে শনাক্ত ছিল ৫০৫ জন, গত সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছে ৬০৯ জন। রাজশাহী বিভাগে শনাক্ত বেড়েছে ১২.৯ শতাংশ। এই বিভাগে গত সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ২ জন, তার আগের সপ্তাহে শনাক্ত ছিল চার হাজার ৪৩১ জন।
৬৪টি জেলার ৪০টিই অতি উচ্চ ঝুঁকিতে
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪০টিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এর বাইরে আরও ১৫টি জেলা আছে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে। সংক্রমণের মধ্যম ঝুঁকিতে আছে ৮টি জেলা। বান্দরবানে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় সেটি বিবেচনায় আনা হয়নি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, খুলনা বিভাগের দশটি জেলার সবকটিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। রাজশাহী বিভাগের আট জেলার মধ্যে ছয়টি অতি উচ্চ ঝুঁকিতে, দুটি আছে উচ্চ ঝুঁকিতে। ঢাকা বিভাগের মধ্যে সাতটি জেলা আছে অতি উচ্চ ঝুঁকিতে। রাজধানীসহ দুটি জেলা আছে উচ্চ ঝুঁকিতে, আর চারটি জেলা আছে মধ্যম ঝুঁকিতে। রংপুর বিভাগের পাঁচটি অতি উচ্চ এবং তিনটি জেলা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রামসহ ছয়টি জেলা অতি উচ্চ, তিনটি জেলা উচ্চ এবং একটি জেলা মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ। বরিশাল বিভাগে তিনটি জেলা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে এবং মধ্যম ঝুঁকিতে তিনটি জেলা। সংক্রমণ এখনো তুলনামূলক কম সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে।
কয়েকটি জেলায় লকডাউন দেওয়া হলেও উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না; বরং তা দিনদিন খারাপ হচ্ছে। এখন পরিস্থিতির বেশি অবনতি হয়েছে খুলনা বিভাগে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৮৫ জনের মধ্যে ৩৬ জনই ছিলেন এই বিভাগের। এই বিভাগের খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, মেহেরপুরে রোগী বাড়ছে দ্রুত। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, পাবনা, বগুড়ায়ও রোগী বাড়ছে।
টিআই/জেডএস