স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স: অপেক্ষার অবসান ফেব্রুয়ারিতে
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ঢাকা কার্যালয়ে প্রতিদিনই ভিড় করছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাশীরা। বিভিন্ন সার্কেল ও জেলা কার্যালয়েও একই অবস্থা। সবার উদ্দেশ্য স্মার্ট লাইসেন্সপ্রাপ্তি। তবে কাগুজে লাইসেন্স দেওয়া হলেও মিলছে না স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স।
এই ভোগান্তি ২০ মাস ধরে। নতুনদের সঙ্গে বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন লাইসেন্স নবায়ন করতে দেওয়া চালক ও বিদেশ যেতে ইচ্ছুকরা।
বিজ্ঞাপন
বিআরটিএ’র সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, প্রায় ৯ লাখ চালক স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের অপেক্ষায়। এই স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাশীরা ‘অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ’ দেখিয়ে ড্রাইভিং করছেন।
লাইসেন্স প্রত্যাশীদের অভিযোগ, স্মার্ট কার্ড না পাওয়ায় দেশি-বিদেশি বেসরকারি চাকরিসহ সরকারি চাকরিতেও আবেদন করতে পারছেন না তারা। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বিদেশ যেতেও।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই লাইসেন্স প্রত্যাশীদের স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া শুরু হবে। আগে আবেদনকারীরা আগে পাবেন ভিত্তিতে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করা হবে।
রাজধানীর শ্যামলীর বাসিন্দা হাসিবুল সৈকত বলেন, পাক্কা দেড় বছর আগে টাকা জমা দিয়েছি। অনলাইনে লাইসেন্স দেখতে ডিএ চেকার (DL checker) অ্যাপসের শরণাপন্ন হয়েও লাভ হচ্ছে না। রেফারেন্স নম্বর দিলেও লেখা আসে সার্ভার বন্ধ। কবে সার্ভার চালু হবে, কবে প্রিন্ট করা স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স হাতে পাব জানি না।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা গণমাধ্যম কর্মী তৌহিদুজ্জামান তন্ময় ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্মার্ট কার্ডের খবর নেই। তবে একনলেজমেন্ট স্লিপে মোটরসাইকেল চালাচ্ছি। স্লিপের মেয়াদ শেষে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কিছু ট্রাফিক পুলিশ সমস্যা না বুঝে ভোগান্তিতে ফেলছেন। বাধ্য হয়ে গত সপ্তাহে আবারো ১১ মাসের জন্য সময় বাড়িয়েছি। সত্যিকার অর্থে সময় বাড়ানো কোনও সমাধান না। স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স দ্রুত সরবরাহ এই সমস্যার সমাধান।
যদিও বিআরটিএ’র দাবি, সেবাপ্রত্যাশীরা যাতে বিপাকে না পড়েন সেজন্য গ্রাহকদের বিআরটিএ থেকে একনলেজমেন্ট স্লিপ দেওয়া হচ্ছে। যা অস্থায়ী অনুমতিপত্র হিসেবে দেখানো করা যাবে। এর সাধারণ একটা মেয়াদ দেয়া থাকে। সেটা শেষ হলে আবার বাড়ানো যায়। মেয়াদ বৃদ্ধি না করলেও সমস্যা হবে না।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক সেবা বন্ধ ছিল। আর চালুর পর চাপ আরও বেড়েছে। তাছাড়া দীর্ঘসময় স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রিন্টিংয়ের কাজ বন্ধ থাকায় সংখ্যাটা এখন প্রায় ৯ লাখে পৌঁছেছে। যদিও এই সময়ে প্রায় ২ লাখ কাগুজে ড্রাইভিং লাইসন্স সরবরাহ করা হয়েছে।
বিআরটিএ’র মুখপাত্র পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিআরটিএ’র সাথে টাইগার আইটি’র চুক্তি ছিল। চুক্তি শেষে দুবার টেন্ডার হয়। গত বছরের ২৯ জুলাই পাঁচ বছরের জন্য ‘মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড’ নামক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি মেশিনারিজ ও সফওয়্যার-হার্ডওয়ারের কাজ শুরু করতে পারছিল না। এখন আর সেই সমস্যা নেই। মেশিনারিজ চলে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রেস বসছে বিআরটিএ’র সদর দফতরে। এই ফেব্রুয়ারিতেই স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স বিরতণ কার্যক্রম শুরু হবে। মন্ত্রণালয় থেকে সব কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগে আবেদনকারীরা স্মার্ট লাইসেন্স অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে পাবেন।
তিনি আরও বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষাসহ অন্যান্য সেবা চালু আছে। লাইসেন্স পেতে লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। স্মার্ট লাইসেন্স পেতে দেরি হওয়ায় অস্থায়ী অনুমোদনপত্র দেওয়া হচ্ছে। যা আক্ষরিক অর্থে লাইসেন্সই।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্মার্ট লাইসেন্স পেতে আবেদনকারীদের দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হতে চলেছে। ফেব্রুয়ারি থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড দেওয়ার কাজ শুরু হবে।
নতুন বছরের শুরুতে গত ২ জানুয়ারি সেতুমন্ত্রী বিআরটিএ কর্মকর্তাদের সাথে ভার্চুয়ালি মতবিনিময় সভায় একথা জানান। মন্ত্রী বলেন, আমি জানি অসংখ্য আবেদন অপেক্ষমান রয়েছে। বিআরটিএ লাইসেন্স কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নিতে প্রয়োজনে জনবল বাড়িয়ে ও বন্ধের দিন কাজ করে ব্যাকলগ ক্লিয়ারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিআরটিএ’র ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার কর্মকর্তারা জানান, ‘চুক্তি অনুসারে ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড আমদানি, পার্সোনালাইজেশন সেন্টার, প্রিন্টিং স্টেশন, নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি, অন-লাইন ইউপিএস, ডাটা সেন্টার, সার্ভার, স্টোরেজ মেইনটেইন, লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য গ্রাহককে এসএমএস প্রেরণসহ সব ধরনের সেবা দেবে ‘মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড’।
১২০ কোটি টাকার চুক্তি পাঁচ বছরের। চুক্তি অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে। যদি খুব দরকার হয় তবে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিআরটিএ এর চাহিদা পূরণ করতে হবে। প্রতি আট ঘন্টায় ৬ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেবে। লজিক ফোরাম নামে একটি বাংলাদেশি এজেন্ট প্রতিষ্ঠান তা কাজ বাস্তবায়ন করবে।
জেইউ/ওএফ/এফআর