ঢাকায় ৭১ শতাংশ ও চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশ মানুষের মধ্যে 'করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি’ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআর,বির গবেষণার বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আইসিডিডিআর,বির গবেষণা অনুযায়ী মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি পাওয়া মানেই হার্ড ইমিউনিটি নয় বলে মন্তব্য করেছেন অধিদফতরের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন।

বুধবার (২৩ জুন) দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনের প্রশ্নোত্তর পর্বে ঢাকা পোস্ট প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই ভিন্নমতের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ঢাকার ৭১ শতাংশ মানুষের অ্যান্টিবডি মানেই সবার দেহে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে এটা বলা ঠিক হবে না।

মঙ্গলবার (২২ জুন) আইসিডিডিআর,বি তাদের গবেষণায় জানায়, ঢাকায় ৭১ শতাংশ ও চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশ মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। উভয় শহরের বস্তি ও বস্তি সংলগ্ন এলাকার মানুষদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

এই প্রসঙ্গে রোবেদ আমিন বলেন, সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে বস্তিবাসী ও বস্তিবাসী ছাড়া মানুষের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে। তারা দাবি করেছে ঢাকার ৭১ শতাংশ মানুষের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। আমি বলব, কোনো পরীক্ষা করার জন্য দেশের নির্দিষ্ট কিছু স্থান থেকে তিন থেকে চার হাজার নমুনা সংগ্রহ করছে, এটা দিয়ে কোনো দেশের অবস্থান বোঝানো যাবে না।

দ্বিতীয়ত, অ্যান্টিবডি থেকে যাওয়া মানে দেশের ৭১ শতাংশ মানুষের দেহে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে এটা বলা সঠিক নয়। অনেকেই এমন মনে করছেন অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে মানে আপনার দেহে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে, এটা বলা যাবে না। অ্যান্টিবডি মানে আপনি করোনা প্রতিরোধী এটা ভাবাও সঠিক নয়, যোগ করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মানুষের দেহে কতটুকু অ্যান্টিবডি থাকলে করোনা প্রতিরোধী এটা এখনও কোনো গবেষণায় পরিষ্কার হয়নি। এছাড়া দেশের সব এলাকায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষের অ্যান্টিবডি তৈরি হলে বলা যাবে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। এই ছোট গবেষণা দিয়ে হার্ড ইমিউনিটির বিষয়ে বলা যাবে না। এছাড়া মানুষের দেহে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে এটার মাধ্যমে সে করোনা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়ে পড়েছে তাও পরিষ্কারভাবে বলা যাবে না।

এসময় তিনি স্বাস্থ্যবিধি পালনের ওপর জোর দিয়ে আরও বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প কিছুই নেই। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে করোনা সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।’

আইসিডিডিআর,বির সমীক্ষাটি ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি সময়ের মধ্যে পরিচালনা করা হয়। এটি ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শহরে বস্তি এবং বস্তিসংলগ্ন বাইরের এলাকায় বসবাসকারী মোট ৩ হাজার ২২০ জনের মধ্যে একটি আন্তঃবিভাগীয় গবেষণা হিসেবে পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় গৃহস্থালী পর্যায়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ, রক্তচাপ ও শরীরের পুষ্টি পরিমাপ এবং রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

টিআই/জেডএস