হালকা জ্বর ও শরীরে দুর্বলতা নিয়ে খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা সাবিয়া বেগম করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন গত রোববার। পরদিন সোমবার জানতে পারেন তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। মঙ্গলবার জ্বর তেমন না থাকলেও হঠাৎ শরীরে শক্তি কমে আসে। রাতে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। 

এ অবস্থায় স্বামী সাইফুল ইসলাম সাবিয়াকে নিয়ে আজ (বুধবার) যান মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সঙ্গে সঙ্গে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয় তাকে। জরুরি বিভাগে বসা ছিলেন আরও দু’জন, তারাও করোনা আক্রান্ত। চিকিৎসা নিতে এসেছেন। করোনায় আক্রান্ত এমন ১০০-এর বেশি রোগী এখন প্রতিদিন আসছেন চিকিৎসা নিতে; মাসের শুরুতে যা ছিল ৬০ থেকে ৭০ জনের মতো।  মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরেজমিন দেখে এবং চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত এক কর্মী ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ করে করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে। মাঝে রোগী কম ছিল। গত দুই সপ্তাহ ধরে রোগী বেশি আসছে। এখন দৈনিক ১০০-এর মতো রোগী আসছে। যাদের অবস্থা খারাপ তাদের ভর্তি করা হচ্ছে। আর যাদের অবস্থা একটু ভালো তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ওষুধ দিয়ে বাসায় থাকতে বলা হচ্ছে।
 
রোগী নিয়ে আসা শামীম নামে একজন বলেন, আমি আমার মামাকে নিয়ে এসেছি। হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় তাকে করোনা টেস্ট করিয়েছি, পজিটিভ এসেছে। এখন তিনি হাসপাতালে ভর্তি, অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। 

শামীর আরও জানান, তার মামার বয়স ৬০-এর বেশি। স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করছিলেন তিনি। জ্বর আসার একদিন পরই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কোভিড টেস্ট করে জানলাম তিনি করোনা আক্রান্ত। আজব একটা রোগ, কে যে আক্রান্ত, কে না, কিছুই বোঝা যায় না।

এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, বেশ কিছুদিন নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তা বাড়তে শুরু করেছে। এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে সামনে অবস্থা খারাপ হতে পারে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। তবে আগের সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে খুব বেশি বাড়েনি। এখন প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ জন করে করোনা রোগী ভর্তি হচ্ছেন। আমাদের সাধারণ ৩০০ বেডের মধ্যে আজ বেডে রোগী আছে ১২৯ জন। গতকাল ছিল ১২১ জন, তার আগের দিন ছিল ১১৫ জন। এছাড়া ২৪টি আইসিইউ (ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট) বেডে ২৩ জন রোগী ভর্তি আছেন।

আক্রান্ত বাড়লেও এখনও এ হার খুব বেশি নয় উল্লেখ করে হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, ভয়াবহ প্রভাব ঠেকাতে সতর্ক হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যদি আক্রান্তের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ে আর পরিস্থিতি আস্তে আস্তে অবনতি হয়, তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ, সঠিক সময়ে আমরা পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন পাচ্ছি না। তাই বিধিনিষেধ বা লকডাউনের চেয়ে বড় কথা- সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। এ বিষয়টিতে বেশি জোর দেওয়া জরুরি।

তিনি জানান, চলতি মাসের শুরুতে প্রতিদিন গড়ে ৭০ জনের মতো করোনা রোগী চিকিৎসা নিতেন, এখন তা ১০০ ছাড়িয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে গড়ে ১০০-এর বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভর্তির হার জুন মাসের শুরুতে ছিল ৫ থেকে ৬ জন; এখন বেড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জনে দাঁড়িয়েছে।

করোনার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে  ডা. অসীম কুমার জানান, সার্বিকভাবে বলতে গেলে পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে না। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। এখানে এক জেলা থেকে অন্য জেলার যোগাযোগ খুব বেশি। মানুষ অনেক মুভমেন্ট করে। তার মানে যতই কড়াকড়ি করা হোক, রোগটা ছড়াবেই। 

যেভাবে রোগী বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে এ মাসের শেষে বা জুলাইয়ের শুরুর দিকে আমাদের জন্য খারাপ সময় আসতে পারে বলেও আশঙ্কা তার। আর এ জন্য সতর্ক হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না এই চিকিৎসক। 

অসীম কুমার আরও বলেন, আমাদের এ ভাইরাস ঠেকানোর কোনো পদ্ধতি নেই। একটা অস্ত্র আছে টিকা (ভ্যাকসিন)। যা আমরা ভালোভাবে দিতে পারিনি পর্যাপ্ত না থাকার কারণে। এখন আমাদের আরেকটি অস্ত্র মাস্ক। এটা যদি পরি তাহলে ভালো থাকব।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে আক্রান্তের হার যেটা দেখি তা খুবই সামান্য। কারণ, আমাদের পরীক্ষাই হয় খুব কম। আইসিডিডিআর,বির (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) এক জরিপের তথ্য বলছে, রাজধানী ঢাকায় ৭১ শতাংশ মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে এবং তাদের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। যখন দেখা যাবে পর্যাপ্ত টিকা আসবে তখন টিকার আর প্রয়োজন হবে না। 

এসআই/এনএফ/জেএস