প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকার প্রয়োগ চলছে। টিকা স্বল্পতার কারণে এরইমধ্যে অধিকাংশ কেন্দ্রে প্রয়োগ বন্ধ রয়েছে। রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এখন পর্যন্ত টিকা কার্যক্রম চালু থাকলেও বুধবার (২৩ জুন) বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কোনো টিকা আসেনি। 

এদিকে মঙ্গলবার (২২ জুন) রাতেই টিকা গ্রহীতাদের টিকা নিতে আসার জন্য এসএমএস পাঠিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে সকাল থেকে টিকা গ্রহীতারা এসে অপেক্ষা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালটির টিকা কেন্দ্রে কর্মরত একজন নার্স জানান, দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৬২ জন টিকা গ্রহীতা টিকা নিতে এসেছেন। হাসপাতালে টিকা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন সকালে সিটি করপোরেশন থেকে চাহিদামতো টিকা পাঠানো হয়। কিন্তু আজ বেলা সাড়ে ১২টা বাজলেও কোনো টিকা আসেনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও আমাদেরকে অপেক্ষমানদের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল (২২ জুন) দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেন ৭০ জন। এর মধ্যে ৪৬ জন পুরুষ ও ২৪ জন নারী। সবমিলিয়ে হাসপাতালটিতে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ২৭ হাজার ৫৩২ জন। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৩৯৮ জন পুরুষ এবং ১০ হাজার ১৩৪ জন নারী। এছাড়াও এসময়ে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ২৫ হাজার ১৭৮ জন। যাদের মধ্যে ১৬ হাজার ৫৪৬ জন এবং নারী ৮ হাজার ৬৩২ জন। হাসপাতালটিতে এখনও প্রথম ডোজের টিকা নেওয়া বাকি ২ হাজার ৩৫৪ জন।

রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে টিকা নিতে আসেন মো. জাহাঙ্গীর আলম। শনিবার রাতে এসএমএস পেয়ে বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রে আসেন টিকা নিতে। টিকা কেন্দ্রে কর্তব্যরত নার্সদের কাছে নিবন্ধনের ফরম জমা দেওয়ার পর জানতে পারেন, এখনও টিকা আসেনি।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গতকাল এসএমএস পেয়ে টিকা নিতে এসেছি। এক ঘণ্টা বসে থেকেও জানতে পারিনি টিকা নিতে পারব কি না। বাইরে অতিরিক্ত কোনো চেয়ারও নেই যে বসে অপেক্ষা করব। তাই হাঁটছি, আর সময়ক্ষেপণ করছি।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা কর্মজীবী মানুষ, টিকা নিতে অফিস থেকে এক ঘণ্টার জন্য বেরিয়েছি। আমাদের জন্য তো প্রতিটি ঘণ্টাই গুরুত্বপূর্ণ। এখন আজ যদি টিকা না নিতে পারি কাল আবার আসতে হবে।

শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমরা গতকালও টিকা দিয়েছি। আজ এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশন থেকে টিকা আসেনি। তারা জানিয়েছে ৫০ জনের চাহিদা পেলে তাদের জানাতে, তাহলে সেই অনুপাতে টিকা পাঠাবে। আজ যেহেতু এখনও আসেনি, তাহলে হয়ত কাল আসবে।

তিনি বলেন, গতকাল যখন আমরা এসএমএস পাঠিয়েছি, তখনও জানতাম না যে টিকা এখন পর্যন্ত আসবে না। তারা আমাদেরকে আগে কিছুই জানায়নি। আপনারা জানেন দেশে এখন টিকা সংকট চলছে। গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি প্রায় ১৫ লাখ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে। এখন তো আসলে আমাদের কিছুই করার নেই। সিটি করপোরেশনে আর কতো ডোজ টিকা সংরক্ষণে আছে বা কতদিন আমরা টিকা পাব, তাও জানি না। হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেলে কিছু লোক তো দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার বাকি থাকবেই।

টিকা না পাওয়া ব্যক্তিদের টিকা নিতে আসার জন্য আবারও এসএমএস পাঠানো হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ যারা টিকা নিতে পারবে না, তাদেরকে আর এসএমএস পাঠানো হবে না। সংশ্লিষ্টদেরকে বলে দেওয়া হয়েছে যেন তারা টিকা গ্রহীতার মোবাইল নাম্বার বা তাদের নাম্বার যেন দিয়ে দেয়, পরে আমাদের হাতে টিকা এলে তারা যেন যোগাযোগ করে টিকা নিতে আসতে পারে। দেখা গেল যে আজ আবার এসএমএস পাঠিয়ে বললাম কাল আসতে, কিন্তু কালও কোনো কারণে টিকা এল না, এক্ষেত্রে তো তারা আবারও ঘুরে যাবে।

অক্সফোর্ডের ১ কোটি ৯৬ হাজার ডোজ শেষ

দেশে এ পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার উদ্ভাবিত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড টিকা এসেছে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ। এর থেকে দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়েছে এক কোটি ৯৬ হাজার ৫২৫ ডোজ। সেই হিসাবে এই টিকা মজুত আছে আর মাত্র এক লাখ তিন হাজার ৪৭৫ ডোজ।

মঙ্গলবার (২২ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো টিকাদান বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এ পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৬৫ জন এবং নারী ২২ লাখ ১০ হাজার ৯৫০ জন।

আর কোভিশিল্ড টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ৭৬ হাজার ৫১০ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ২৭ লাখ ৩১ হাজার ৮৫৪ জন এবং নারী ১৫ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, প্রথম ডোজ নেওয়া ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জনের মধ্যে ১৪ লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। তাদের সবাইকেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও দুই কোম্পানির দুই ডোজের টিকা গ্রহণের কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।

দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলে। টিকার সংকট দেখা দেওয়ায় ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২ মে’র পর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় টিকার জন্য নিবন্ধনও।

টিআই/জেডএস