অনেক দেশই বাংলাদেশকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত টিকা দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, সবাই শুধু আশ্বাস দেয়, কিন্তু টিকা দেয় না।

মঙ্গলবার (২২ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর ধনী দেশগুলো ১০০ কোটি ডোজ টিকা দেবে বলে আমাদের জানিয়েছে। সবাই শুধু আশ্বাস দেয় টিকা দেবে, কিন্তু কেউ দেয় না। আবার দেওয়ার সময় বলে আমাদের অমুক বিষয়ে সমর্থন দিতে হবে। এখন দেখা যাচ্ছে, টিকাকে অন্য উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে চায় তারা।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা পাওয়া প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, টিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে চিঠি দিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অন্যান্য টিকা ছাড়াও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে। আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা চেয়েছি।

সোমবার (২২ জুন) হোয়াইট হাউস বিশ্বজুড়ে করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের নিজের মজুত থেকে কোভ্যাক্সের আওতায় এবং সরাসরি সাড়ে পাঁচ কোটি টিকা বণ্টনের পরিকল্পনা ঘোষণা করে।

হোয়াইট হাউসের ঘোষণায়, কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের পাশাপাশি এশিয়ার ১৮টি দেশকে নতুন করে ১ কোটি ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার কথা বলা হয়। এছাড়া বিশ্বের আরও ৩০টি দেশ ও জোটকে সরাসরি ১ কোটি ৪০ লাখ টিকা দেবে দেশটি।

টিকা মজুত প্রসঙ্গে ধনী দেশগুলোর সমালোচনা করেন ড. মোমেন। তিনি বলেন, প্রয়োজনের বেশি টিকা নিয়ে বসে আছে উন্নত দেশগুলো। টিকা বৈশ্বিক সার্বজনীন পণ্য গণ্য করার কথা থাকলেও নিজেরা মানে না। বড় বড় কথা বলে তারা কিন্তু সবাইকে টিকা দিচ্ছে না। তাদের যত জনসংখ্যা তার থেকে তাদের কাছে টিকা বেশি রয়েছে।

ধনী দেশগুলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তরিক নয়

বিশ্বের ধনী দেশগুলো মানবাধিকার নিয়ে বড় বড় কথা বললেও তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে আন্তরিক নয় বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চার বছরেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। মানবাধিকার নিয়ে যারা উচ্চবাচ্য করে তাদের আসলে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আন্তরিকতা নেই তারা শুধু বহুদলীয় গণতন্ত্র চায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নয়। বাংলাদেশ মিয়ানমারে কোনো সহিংসতা চায় না। তাদের (মিয়ানমার) মানুষগুলোকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাক।

রোহিঙ্গাদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হলেও সেখানে পশ্চিমা অনেক দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বেড়েছে অভিযোগ করে মোমেন বলেন, তাদের ব্যাংকগুলোর বাণিজ্য ১৫ ভাগ বেড়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের ব্যবসা ২৪ বিলিয়ন বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সফরে জাতিসংঘে ঢাকা ধনী দেশগুলোর ডাবলস্ট্যার্ন্ড তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে মোমেন বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনা করেছি। সেখানে ধনী দেশগুলোর ডাবলস্ট্যান্ডার্ড তুলে ধরা হয়েছে। জোরালোভাবে বিষয়টা তুলে ধরা হয়েছে, যাতে তারা বুঝতে পারে। বাংলাদেশ জাতিসংঘে ক্লিয়ারকার্ট রোডম্যাপ চেয়েছে।

দ্বৈত নাগরিকত্ব চান প্রবাসীরা

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিকত্ব চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা ডুয়েল সিটিজেনশিপ পেতে দাবি জানিয়েছেন। তারা বিদেশে থেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র চান। প্রবাসীদের এই আবদার নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলাপ করবেন বলে প্রবাসীদের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। প্রবাসীরা এক কোটি টাকা বন্ড ক্রয়সীমা তুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। এটা হলে তারা বেশি টাকা দেশে পাঠাতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।

এনআই/এসকেডি