করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোধে রাজধানীর চার পাশে ঘিরে থাকা ৭ জেলায় লকডাউন সকাল ৬টা থেকে কার্যকর করা হয়েছে। যার ফলে ওইসব এলাকা থেকে আসা কোনো গণপরিবহনকে রাজধানী শহর ঢাকাতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

বাসগুলোকে আমিন বাজার ব্রিজের আগ থেকেই ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হঠাৎ কোনো গাড়ি যদি চলেও আসে, তবে সেটিকে সর্বোচ্চ আমিন বাজার ব্রিজ পার হয়ে গাবতলী সিগন্যাল থেকে ইউটার্ন নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। তবে দূরপাল্লার খালি বাসগুলো গাবতলী টার্মিনালের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেট কারসহ সব ধরনের যানবাহন মিলে ঢাকামুখী প্রবেশপথে গাড়ির জট আমিনবাজার থেকে ছাড়িয়ে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বেলা ১২টা) হেমাতপুর পর্যন্ত পৌঁছেছে। যার ফলে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে অফিসগামী যাত্রীরা। কেউ বিরক্ত হয়ে রাগে-ক্ষোভে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন গন্তব্যের দিকে। তাদের অনেকেই বলছেন, অফিস খোলা রেখে লকডাউনের নামে গণপরিবহন সংকট সৃষ্টি করা একটি ভোগান্তি ছাড়া কিছুই না।

দুই ঘণ্টাতেও পার হওয়া যাচ্ছে না গাবতলী সিগন্যাল
এদিকে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে গাড়ির সারি। সারির সবকটি গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। গাড়িতে চালকের আসনে বসে কেউ বিরক্ত বোধ করছেন, আবার কেউ ঘুমিয়ে পড়েছে। ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন গাড়িতে বসা অপেক্ষারত যাত্রীরা। কারণ টেকনিক্যাল থেকে গাবতলী মোড় পর্যন্ত আসতে গত কয়েক ঘণ্টায় প্রত্যেকটি গাড়িকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষরা বলছেন, সাত জেলায় লকডাউন দেওয়ার ফলে হঠাৎ গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। আর আমিনবাজার পয়েন্ট থেকে গাড়ি সামনের দিকে না টানার কারণে ঢাকার গাড়িগুলো বাইরে বের হতে পারছে না।

মঙ্গলবার (২২ জুন) সকাল ৯টা থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গাবতলী সিগন্যাল ও আমিন বাজার ব্রিজ ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকামুখী শতশত মানুষ হেঁটে আমিন বাজার ব্রিজ পার হয়ে আসছেন। আমিন বাজার ব্রিজ থেকে ঢাকামুখী রাস্তাটি অবশ্য পুরো ফাঁকা। অন্যদিকে, ঢাকার বাইরের গন্তব্যের গাড়িগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে গাবতলী সিগনালে। সবকটি গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ রেখে বিরক্তিকর সময় পার করছেন গাড়ি চালকরা। হাজারো গাড়ির ভিড়ে বর্তমানে নিশ্চুপ হয়ে আছে গাবতলী এলাকা।

গাবতলী সিগন্যাল থেকে ঢাকামুখী কোনো সিটি বাস না থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে অফিসগামীদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তারা কোনো বাস পাচ্ছেন না। কেউ অতিরিক্ত ভাড়ায় মোটরসাইকেলে চেপে যাচ্ছেন অফিসে। আর যাদের সেই সুযোগ নেই, তারা অপেক্ষায় করছেন। কখনো-সখনো দু-একটি বাস আসলে সেটাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দু এক মিনিটের মধ্যে বাসটি পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। বাস-বাইক এসব না পেয়ে কেউ আবার মন খারাপ করে হেঁটেই রওনা হয়েছেন গন্তব্যে।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এরাউন্ড ৪ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে দশটার সময় এখন গাবতলীতে। অথচ এই সময় আমার বনানীর অফিসে থাকার কথা ছিল। এখনও হাঁটছি, জানিনা কখন পৌঁছবো।

গাড়ির চালক জিহাদ বলেন, টেকনিক্যাল মোড়ে এসে জ্যামে পড়েছি। আড়াই ঘণ্টা পাড়ি দিয়ে এখন গাবতলি সিগন্যালে। পুলিশ সামনে যেতে দিচ্ছে না। তাই, গাড়ির বন্ধ রেখে বসে আছি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৬টার দিকে পুলিশ এখানে চেকপোস্ট বসানো। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে দুই দিকেই যানজট শুরু হয়। যানজট এখন অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এটা থেকে কখন মুক্তি মিলবে বলা যাচ্ছে না।

দারুসালাম ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট ফয়সাল ইসলাম বলেন, ‘সাত জেলায় লকডাউন যাওয়ার কারণে হঠাৎ করে চাপ বেড়ে গেছে। আমিন বাজার থেকে গাড়ি সামনের দিকে টানছে না। যার ফলে রাস্তায় জট লেগে আছে। বাধ্য হয়ে আমাদের এখানে গাড়ি আটকে রাখতে হয়েছে।'

দারুসালাম ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, 'আমরা জানতে পেরেছি ঢাকামুখী প্রবেশপথ জ্যাম থাকায় ঢাকা থেকে হেমায়েতপুর রোডে ব্যাপক পরিমাণে উল্টো যানবাহন ঢুকে গেছে। যার ফলে ঢাকা থেকে যারা বাইরে যাবেন এই সব গাড়ি আমরা ছাড়তে পারছি না। পুরো রাস্তাটা জ্যাম হয়ে আছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কেও দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে না। সোমবার করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে ও ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখতে আশপাশের ৭ জেলায় বিধিনিষেধের ঘোষণার পর মঙ্গলবার থেকে এ সড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঢাকার আশপাশের ৭ জেলায় বিধিনিষেধের কারণে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যাবে না, ঢাকায়ও কোনো দূরপাল্লার বাস প্রবেশ করবে না।

মঙ্গলবার (২২ জুন) ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, এ সড়কে কোনো দূর পাল্লার বাস চলাচল করছে না। শুধুমাত্র রাজধানীর মধ্যে গণপরিবহনগুলো চলাচল করছে। বৃষ্টির মধ্যে রাজধানীর গণপরিবহনের সংখ্যাও বেশ কম আছে। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা মোটামুটি রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিন এ সড়কে মহাখালী থেকে ছেড়ে আসা ও মহাখালীর উদ্দেশে যাওয়া বাস চলাচল করতে দেখা যায়। কিন্তু আজ সকাল থেকেই বড় বাস চলাচল করছে না। এ সড়কে ঢাকা থেকে ময়নমনসিংহ, নেত্রোকোণা, ভৈরব, গাজীপুর, নরসিংদী, নাটোর, বগুড়া, রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বাস চলাচল করে।

এমএইচএন/একে/এসএম