গত ১১ বছরে ১০ দফায় বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১১৮ শতাংশ ও খুচরা পর্যায়ে ৮৯.৬৩ শতাংশ বেড়েছে বলে দাবি করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এছাড়াও প্রতি বছর বিদ্যুৎ খাতে ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়, যা দামের সঙ্গে যুক্ত হলে বিদ্যুতের প্রকৃত মূল্য আরও বেশি হবে।

সোমবার (২১ জুন) অনলাইনে ক্যাব আয়োজিত ‘জ্বালানি রূপান্তরে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

ওয়েবিনারে লিখিত প্রবন্ধে সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বলেন, পিডিবি ভেঙে দুটি কোম্পানি হওয়ায় জনবল বাবদ ব্যয় বেড়েছে। তারা যে তথ্য-উপাত্ত দেয় তাতে এই ব্যয়ের বিষয়গুলো দেখা যায়। কিন্তু অনিয়মের অনেক খবর আড়ালে থেকে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রি করে বেসরকারি মালিকানায় দেওয়া হচ্ছে। এই কোম্পানিগুলোর অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর করে রাখা হচ্ছে। পরবর্তীতে কিন্তু এই শেয়ারের অর্থ কোথায় যাচ্ছে তা কেউ জানে না। বিগত বছরগুলোয় ভোক্তাসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দেখানো হয়েছে, বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রয়োজন নেই, বরং তা কমানো যেতে পারে। অথচ বিদ্যুতের দাম গত ১১ বছরে ১০ দফায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। অনিয়ম-অসঙ্গতিতে কোম্পানির বোর্ড সদস্যদের দায় থাকে না। লাভ লোকসানের দায় তারা নেন না। একই ব্যক্তি যখন সচিবালয়ে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তিনি যখন আবার কোম্পানিতে এসে মূল্য নির্ধারণ করেন তখন নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য বাধাগ্রস্ত হয়।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সঠিক দাম ও মানে পাওয়া আমাদের অধিকার। একইসঙ্গে পরিবেশ রক্ষার দিকটিও নিশ্চিত করেছে। জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমাদের থেকে বিদ্যুতের মূল্য কম। জ্বালানি খাত উন্নয়নে রূপান্তরের প্রশ্ন আসছে, রূপান্তর নিয়ে দেশে ১৭ বছর আগে কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানিকে বশে আনতে সরকার দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। কোম্পানিগুলোকে ন্যূনতম মূল্যহার নির্ধারণ করা হলেও তা কোম্পানিগুলো তোয়াক্কা করছে না।

তিনি বলেন, রেগুলেটরি কমিশনের দায়িত্ব ছিল ভোক্তা অধিকার রক্ষা করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসা। এখন দেখা যাচ্ছে, বিনিয়োগের প্রফিট মার্জিন এতো বেশি রাখা হয়েছে, এখানে বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দুর্নীতির জন্য প্রকৃত দামের চেয়ে দুই থেকে আড়াই গুণ বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি ও অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা চায় জ্বালানি খাতে পরিকল্পিত হস্তক্ষেপ বন্ধ হোক ও বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকুক।

মূল প্রবন্ধের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ১১ বছরে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বেড়েছে ১১৮ শতাংশ। এই পাইকারি দাম বৃদ্ধি প্রভাব ফেলেছে ভোক্তাপর্যায়ে। এখানে কুইক রেন্টালসহ বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকৃত খরচ কেউ জানে না। সরকার বিদ্যুৎ খাতে একটি ইনডেমনিটি আইন করেছে যেটি গ্রহণযোগ্য নয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে এবং ভোক্তাকণ্ঠ সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান ও ক্যাব সংগঠক সৈয়দ মিজানুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আরও যুক্ত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক, দৈনিক বণিক বার্তার উপব্যবস্থাপনা সম্পাদক  মুসা মিয়া প্রমুখ।

এমএইচএন/এসকেডি