জেনোসাইড বা গণহত্যার মতো ইকোসাইড বা প্রতিবেশ ধ্বংসকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় এখতিয়ারভুক্ত করতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। 

রোববার (২০ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। 

সভা শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জেনোসাইড বা গণহত্যা যেমন অপরাধ, ইকোসাইডও একটি অপরাধ বলে আমরা মনে করি। ইকো সিস্টেম না থাকলেও তো আমরা কেউই বাঁচতে পারব না।

তিনি বলেন, আমরা ইকোসাইডকে ক্রাইম (অপরাধ) হিসেবে দেশি আইনের এখতিয়ারভুক্ত করার কথা বলেছি। এক্ষেত্রে, সিআরপিসিতে এটা অনুভুক্ত করা যায় কি না বা নতুন কোনো আইন করা সম্ভব কি না তা দেখতে বলেছি।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, বন অধিদফতর গত আট মাসে দুই হাজার ৪৬৮ দশমিক ২০ একর জবরদখল হওয়া ভূমি উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে ঢাকা বন বিভাগের ৬৪২ দশমিক ৫৮ একর, টাঙ্গাইল বন বিভাগের ৬৩৬ দশমিক ৪৯ একর, ময়মনসিংহ বন বিভাগের এক দশমিক ৫০ চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের ৭২৩ দশমিক ৪০ একর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের ২৩০ দশমিক ৬৫ একর, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ১৪৪ দশমিক ১৫ একর, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের ২৪ দশমিক ১৯ একর, উপকূলীয় বন বিভাগ চট্টগ্রামের ২৯ দশমিক ৭০ একর, সামাজিক বন বিভাগ রাজশাহীর ১৯ দশমিক ৪৯ একর এবং বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, চট্টগ্রামের ১৬ দশমিক শূন্য পাঁচ একর।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, বনভূমি উদ্ধার কার্যক্রমে আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছি। যে কাজ অতীতে কখনও করা সম্ভব হয়নি, সে কাজ শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সুপারিশ হচ্ছে, এর গতি বাড়াতে হবে। কারণ, যে গতিতে চলছে তাতে বছরের পর বছর সময় লেগে যাবে। এজন্য কীভাবে গতি বাড়ানো যায়, আগামী বৈঠকে তার একটি রোডম্যাপ দিতে বলা হয়েছে।

বিশ্বের বন উজাড়ের হারের তুলনায় বাংলাদেশের বন উজাড়ের হার যেন কম থাকে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বৈঠকে কমিটি সুপারিশ করেছে। 

এ বিষয়ে সাবের হোসেন বলেন, জাতিসংঘ কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বড় উজাড়ের হার বিশ্বের দ্বিগুণ। পৃথিবীর বন উজাড় হওয়ার গড় হার এক দশমিক তিন শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশে এটা দুই দশমিক ছয় শতাংশ। আমরা বলেছি, এভাবে চলতে থাকলে তো বনই আমাদের থাকবে না। এটি কেন হচ্ছে, তা কীভাবে রোধ করা যায়, তার জন্য একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে বলেছি।

জীববৈচিত্র্য বিষয়টি পরিবেশ অধিদফতরের নাকি বন অধিদফতরের অধীনে থাকবে তা বৈঠকে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে সভাপতি বলেন, জীববৈচিত্র্য এখন পরিবেশ অধিদফতরের অধীনে আছে। আমাদের মনে হয়েছে এটি বনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। পরিবেশ তো এমনিতেই অনেক কাজ করে। এজন্য জীববৈচিত্র্য আলাদাভাবে বা বনের সঙ্গে যুক্ত করা যায় কি না সেটা দেখতে বলেছি। মন্ত্রণালয়ের রুলস অব বিজনেসে ইকো সিস্টেম, বায়োডাইভার্সিটি ইত্যাদি বিষয়গুলো নেই। এগুলো অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছি।

কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনভিত্তিক অভিযোগ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ড্যাশবোর্ড করার সুপারিশ বৈঠকে করা হয়েছে বলে সাবের হোসেন চৌধুরী জানান।

তিনি বলেন, আমরা গাছ কাটা, বন্যপ্রাণী মেরে ফেলাসহ বিচ্ছিন্নভাবে নানা অভিযোগ শুনি। কিন্তু এগুলোর ফলোআপ হয় না। যথাযথ মনিটরিং হয় না। এজন্য অভিযোগ গ্রহণের একটি ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার সুপারিশ করেছি। যাতে অনলাইনে কোনো অভিযোগ করতে পারে তার জন্য স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকেই সফটওয়্যার ডেভেলপ করব। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পর্যন্ত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। যিনি অভিযোগ করবেন তিনিও সেটা আপডেট জানতে পারবেন।

বৈঠকে জানানো হয় বর্তমানে বন অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন গেজেটভুক্ত সংরক্ষিত বনের পরিমাণ ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৯০৭ দশমিক ৫২ একর। এর মধ্যে বন বিভাগের রেকর্ডকৃত জমির পরিমাণ পাঁচ লাখ ২৮ হাজার ২৬৩ দশমিক ১৪ একর। তিনটি পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সুন্দরবনের সংরক্ষিত জরিপ বহির্ভূত বনের জমি ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭১ দশমিক ১৮ একর। অবশিষ্ট তিন লাখ ৯৫ হাজার ২৭৩ দশমিক ২০ একর সংরক্ষিত বনভূমির রেকর্ডের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও অংশ নেন কমিটি সদস্য পরিবেশন, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, মো. রেজাউল করিম বাবলু, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এবং মো. শাহীন চাকলাদার। 

এইউএ/আরএইচ