বিটকয়েন কেনাবেচা চক্রের চার সদস্য

রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে অবৈধ বিটকয়েন কেনাবেচা চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৪। গ্রেফতাররা হলেন, চক্রের অন্যতম হোতা হামিম প্রিন্স খাঁন (৩২) এবং সদস্য রাহুল সরকার (২১), সঞ্জিব দে ওরফে তিতাস (২৮) ও মো. সোহেল খান (২০)।

রোববার (২০ জুন) র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি র‌্যাবের গোয়েন্দা দল জানতে পারে, একটি চক্র অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রা, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও বিটকয়েন লেনদেনের সঙ্গে জড়িত এবং চক্রটি ডার্ক সাইট থেকে ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহার করে পর্নো কন্টেন্ট ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত। র‍্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল নজরদারি বাড়িয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। 

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চক্রের অন্যতম হোতা গ্রেফতার হামিম প্রিন্স খাঁন ২০১৩ সালে ফরিদপুরের একটি কলেজ থেকে ইংরেজিতে বি.এ (সম্মান) পাস করেন। একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে কম্পিউটারে দক্ষতা লাভ করেন। এরপর তিনি নিজেই একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে ৫০ জনকে বিটকয়েন জালিয়াতির প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিলেন। গ্রেফতারের সময় চারজনের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ ও দুটি ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হামিম বিট কয়েন ছাড়াও লিটকয়েন, ডগকয়েন, ইথারিয়াম, ব্রাস্ট, ন্যনো ইত্যাদি লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। তিনি মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডাসহ উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ কার্যক্রম চালিয়ে দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে অন্যের ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করে বিটকয়েন কিনে এ অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। ভার্চুয়াল জগতে তার ১৫-১৬টি ওয়ালেট রয়েছে।


 
গ্রেফতার রাহুল সরকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামিমের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে হামিমের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০২০ সালের শেষের দিকে তিনি বিটকয়েন লেনদেনের সঙ্গে জড়িত হন। তারও বেশ কয়েকটি ওয়ালেট রয়েছে।

গ্রেফতার সঞ্জিব দে ওরফে তিতাস ফরিদপুরের স্থানীয় একটি কলেজে অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের পর থেকেই হামিম তাকে লাভবান হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিটকয়েন লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি হামিমের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের নামে বিটকয়েনে ক্লোনিক্স ওয়ালেট ও বেটলেক্স ওয়ালেট নামে অ্যাকাউন্ট খুলে অর্থ লেনদেন করে আসছিলেন।

গ্রেফতার সোহেল খান মূলত সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েভ ডেভেলপিং ও গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে অল্প কিছু অর্থ উপার্জন করতেন। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপনে লোভে পড়ে হামিমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে বিটকয়েনে নিজের নামে ওয়ালেট খুলে এ অবৈধ লেনদেন করে আসছিলেন। তারও বেশ কয়েকটি ওয়ালেট রয়েছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন বলেন, চক্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ভার্চুয়াল মুদ্রা, ক্রিপ্টোকারেন্সি, বিটকয়েন অত্যন্ত লাভজনক বলে প্রচারণা চালায়। প্রচারণার মাধ্যমে যুবক-যুবতীদের অবৈধ লেনদেনে প্রলুব্ধ করত। চক্রটি অর্থের বিনিময়ে আগ্রহীদের ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এদের একটি গ্রুপ রয়েছে। গ্রুপে আগ্রহীদের যুক্ত করত চক্রটি। গ্রুপে কয়েক হাজার সদস্য রয়েছেন। তারা প্রতি মাসে প্রায় দেড় কোটি টাকা লেনদেন করেন।

এমএসি/আরএইচ