মুনের বোন জান্নাতুল, বাবা মাসুদ রানা ও মা মৌসুমী ইসলাম

রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুর এলাকার ৩ খুন পরকীয়া ও সম্পত্তির লোভে পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিহত মাসুদ রানা ও মৌসুমী ইসলামের ভাই-বোনেরা। তাদের অভিযোগ, মৌসুমীর মেয়ে মেহজামিন মুন ও মুনের স্বামী শফিকুল এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। 

শফিকুলকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সোমবার (২১ জুন) তাকে আদালতে হাজির করা হবে। এদিকে, বাবা-মা ও বোনকে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় মেহজামিন মুনের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার (২০ জুন) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস রিমান্ডের আদেশ দেন। নিহত মাসুদ রানার বড় ভাই সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে কদমতলী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। 

আরও পড়ুন : মা-বাবা-বোনকে হত্যা করেও ‘অনুশোচনা নেই’ বললেন মুন

এর আগে শনিবার (১৯ জুন) সকালে কদমতলীর মুরাদপুর রজ্জব আলী সরদার রোডের ৫ তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪০) ও মেয়ে জান্নাতুল (২০)। অচেতন অবস্থায় মুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও মেয়ে তৃপ্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। 

নিহত মৌসুমীর বোন ইয়াসমিন আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুনের বিয়ের আগে তাকে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. আমিন প্রাইভেট পড়াত। সেসময় মুনকে ব্ল্যাকমেইল করে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে আমিন। বিষয়টি জানাজানি হলে শফিকুলে সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর থেকে শফিকুল সন্দেহ করত আমিনের সঙ্গে মুনের সম্পর্ক এখনও আছে। ২০১৬ সালে আমিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে শফিকুল।

হত্যার ঘটনায় শফিকুল ইসলাম, তার শাশুড়ি মৌসুমী, খালা শাশুড়ি শিউলি আক্তার ও স্ত্রী মুনকে আসামি করে মামলা হয়। সেই মামলায় তারা জেলও খেটেছেন। মুনকে আদালত খালাস দেন। 

ইয়াসমিন আরও বলেন, শফিকুল একজন হিংস্র মানুষ। সে মুনকে ব্যবহার করে আমার দুলাভাইয়ের (মাসুদ রানা) সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে চায়। শফিকুল ও মুন মিলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার বোন-দুলাভাইকে হত্যা করেছে বলে আমার বিশ্বাস।

নিহত মৌসুমীর ছোট বোন শিউলি আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বোনের ২ মেয়ে। মুন আর জান্নাতুল। মুনের সঙ্গে বিয়ের পর জান্নাতুলকে ব্ল্যাকমেইল করে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে শফিকুল। বিষয়টি মুন জেনে গেলে শফিকুল নিজের মেয়েকে মেরে ফেলার ভয় দেখাত। মুনকে মারপিটও করত শফিকুল। 

শিউলি বলেন, এক পর্যায়ে শফিকুল জান্নাতুলকে স্ত্রী হিসেবে দাবি করে। জান্নাতুলের বিয়ের কোনো প্রস্তাব এলে বিয়ে ভেঙে দিতে শুরু করে। সে আমিন হত্যা মামলার আসামি। আমাকেও ওই মামলায় আসামি করা হয়। আমার দুলাভাই (মাসুদ) বিদেশ থেকে ফেরার পর নানা রকম তালবাহানা করে সম্পত্তি ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতে চায়। আমিন হত্যা মামলা শেষ করার জন্য ২০-৩০ লক্ষ টাকা চায় শফিকুল। কিন্তু আমার বোন তাকে টাকা দিতে রাজি হয় না। এজন্য পরিকল্পনা করে মুন ও শফিকুল মিলে চা ও পানির সাথে চেতনানাশক ঔষধ খাইয়ে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে দুলাভাই মাসুদ রানা, মৌসুমী আপা এবং জান্নাতুলকে হত্যা করে। এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। শফিকুলকে রিমান্ডে নিলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

নিহত মাসুদ রানার বড় ভাই ও মামলার বাদী সাখাওয়াত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাই দীর্ঘ ২৬ বছর সৌদি আরব ছিল। মাত্র ৩ মাস আগে সে দেশে আসে। দেশে এসে পরিবারের এসব বিষয় দেখে খুবই মর্মাহত হয়। সে আবার বিদেশ চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু তার আগেই তাকে দুনিয়া ছাড়া করা হলো। 

তিনি আরও বলেন, বাবা-মা-বোনকে হত্যার পরও আমার ভাতিজি মুনের মধ্যে কোনো বিকার দেখলাম না। 

নিহত মৌসুমীর আরেক বোন সোনিয়া আক্তার বলেন, মুনকে বিয়ের পর শফিকুল অনেক মারপিট করত। শফিকুলের বাসা থেকে মেয়েকে নিয়ে একবার সে পালিয়েও যায়। শফিকুল সেসময় থানায় অভিযোগ করে। মুন তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠায়। পরে মীমাংসা করে তারা আবার সংসার শুরু করে। আমার আরেক ভাগ্নি জান্নাতুলের সঙ্গেও সে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। আমার বোনের কোনো ছেলে নেই। শফিকুল হয়ত ভাবত, জান্নাতুল আর মুনকে একসঙ্গে পেলে তাদের বাবার সব সম্পত্তি হাতের মুঠোয় নেওয়া যাবে। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কদমতলী থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৩ খুনের ঘটনায় নিহত মাসুদ রানার বড় ভাই সাখাওয়াত হোসেন মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় শফিকুলকে ১ নম্বর আসামি ও মুনকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। আমরা মুনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আজ (রোববার) আদালতে হাজির করি। আদালত ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। 

তিনি বলেন, শফিকুলকে হাসপাতাল থেকে পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছে। আগামীকাল (সোমবার) তাকে আদালতে হাজির করা হবে। পরিবারের অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে মামলাটি তদন্ত করা হবে।

এসএএ/এইচকে/জেএস