কদমতলীর ৩ মৃত্যু পারিবারিক কলহের জেরে, ধারণা পুলিশের
রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে বাবা-মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মেয়ে মেহজাবিন আক্তার মুনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ধারণা করছে, পারিবারিক কলহের জেরে মুন পরিবারের সবাইকে কৌশলে বিষাক্ত কিছু পান করিয়ে হত্যা করেছেন।
শনিবার (১৯ জুন) বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ ঢাকা পোস্টকে জানান, মুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরিবারের সবাইকে তিনি বিষাক্ত কিছু খাইয়ে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কী কারণে এই মৃত্যু সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
আজ (শনিবার) সকালে কদমতলীর মুরাদপুর রজ্জব আলী সরদার রোডের ৫ম তলা বাসার দ্বিতীয় তলা থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪০) ও মেয়ে জান্নাতুল (২০)। অচেতন অবস্থায় মেয়ের জামাই শফিকুল ইসলাম ও নাতনি তৃপ্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন : কদমতলীতে মা-বাবা-বোনকে হত্যা করে পুলিশে ফোন দেন মুন
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নিহত মৌসুমী ইসলাম উচ্চবিত্তদের মেয়ে সাপ্লাই দিতেন। তার মেয়ে মুন ছিলেন এক নেতার বেডপার্টনার। মা-মেয়ের মধ্যে দেহব্যবসা নিয়ে ঝামেলা হয়।
এর রেশ ধরে মুন পরিকল্পিতভাবে সবাইকে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। জানা গেছে, মুনের মা মৌসুমী সাবেক একজন বিএনপি নেতার পিএস হত্যা মামলার আসামি। মুনের বাবা মাসুদ রানা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি স্ত্রী-মেয়ের ব্যবসার বিষয় জানতেন।
পুলিশ আরও জানায়, মরদেহগুলো হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিষাক্ত কিছু প্রয়োগের আলামত পাওয়া গেছে। আলামতগুলো পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। মরদেহগুলো সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
এ ঘটনায় সংকটাপন্ন অবস্থায় আটক মুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও তাদের শিশুসন্তান তৃপ্তিকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে শফিকুলকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের শিশুসন্তান আশঙ্কামুক্ত রয়েছে। তাকে ঢামেকের ২১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
মুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, তাদের বাসা রাজধানীর কদমতলীর বাগানবাড়ি এলাকায়। শুক্রবার (১৮ জুন) রাত ৯টার দিকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যান। যাওয়ার সময় আম-কাঁঠাল কিনে নেন। রাতে মুন তাদের সবাইকে নুডুলসসহ অনেক কিছু খেতে দেন। তারা বাসার সবাই খেয়েছে, কিন্তু পরে কী হয়েছে এ বিষয়ে তার কিছুই স্পষ্ট মনে নেই। স্ত্রী মুনের সঙ্গে গত তিন মাস ধরে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। মুনের সঙ্গে তার বাবা-মায়েরও সম্পর্ক ভালো ছিল না বলে জানায় শফিকুল।
পুলিশ জানায়, কদমতলী মুরাদনগর এলাকায় মুনের বাবা মাসুদ রানা স্ত্রী মৌসুমী ও মেয়ে জান্নাতুলকে নিয়ে বসবাস করতেন। অপর মেয়ে বিবাহিতা মুন বাগানবাড়িতে স্বামীর বাসায় বসবাস করতেন। তাদের একটি মেয়ে শিশুসন্তান রয়েছে।
কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৩ জন নিহতের ঘটনায় পরিবারের এক মেয়ে মেহজাবিন মুন সবাইকে বিষাক্ত কিছু পাণ করিয়ে হত্যা করতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পারিবারিক কলহের জেরে তিনি এমন ঘটনা ঘটাতে পারেন। মুনকে আটক করে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এসএএ/এইচকে