বাজেট আলোচনায় যা বললেন সংসদ সদস্যরা
জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন সংসদ সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বাজেট আলোচনায় উঠে আসে নানা প্রসঙ্গ।
প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জিল্লুল হাকিম বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাবের সমর্থন করে এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
পাংশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী জিল্লুল হাকিম বলেন, বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই ভাতা বৃদ্ধি অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য। যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তাদেরকে ভাতা বৃদ্ধি করা হোক। ২০ হাজার কেন এই ভাতা আরও বেশি করা হোক। কারণ মুক্তিযোদ্ধারা আর কয়দিন..। এখনই মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হওয়ার অভিযোগ তুলে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাকিম বলেন, এখন নানানভাবে মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হচ্ছে। এখন মুক্তিযোদ্ধা হওয়া লাগে না। আমাদের দেশে কোর্টও রায় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বানাচ্ছেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিতে অমুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ দিয়েছি। তারা কোর্টে গিয়ে রায় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধা তো বানানো যায় না। মুক্তিযোদ্ধা তো হতে হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর প্রথা বাদ দিতে হবে। এটা বাতিল করতে হবে।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে আরেকটি পদ্মা সেতু নির্মাণের দাবি করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি যে প্রতিশ্রুতি দেন তা পালন করেন। আশা করব এই সেতু নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু হবে।
এ দিকে বাজেটের ওপর আলোচনায় বিএনপির হারুনের বক্তব্যের জবাবে সরকারি দলের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ বলেন, বিএনপির সংসদ সদস্য সংবিধানকে প্রতারণার দলিল বলেছেন, নিজেকে স্বঘোষিত বিরোধী দলীয় নেতা দাবি করেছেন। এগুলো এক্সপাঞ্জ করতে হবে।
তিনি বলেন, সংবিধান বুটের তলায় পিষ্ট করে জঞ্জালের রাজনীতি শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। ব্যাংক লুটপাটের হোতা জিয়াউর রহমান। তার আমল থেকেই ব্যাংকে লুটপাট শুরু। ১৯৭৭ সালের হা না ভোট, ১১০ শতাংশ ভোট কাস্টিং যারা করেছিল তারা ভোটের কথা বলে। এক কোটি ৩০ লাখ ভুয়া ভোটার করেছিল। তারা মনে হয় চায়, আওয়ামী লীগ তাদের ভোটের এজেন্টও দিয়ে দেবে।
তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সুশসানের অভাব বাজেট বাস্তবায়নের অন্তরায়।
ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য লুৎফুননেসা খান বলেন, স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তারচেয়ে বড় কথা এই অর্থ যথাযথ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবহার করা হয় না। গবেষণা খাতের সব টাকাই রয়ে গেছে। ক্রয়ে অভাবনীয় দুর্নীতি হয়েছে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য শফিউল আলম বলেন, বিরোধী দলকে ১৫ মিনিট সময় দিচ্ছেন আর আমরা পাচ্ছি সাত মিনিট। এটা বৈষম্য। বেশি সুযোগ দেন তারপরও তারা বলেন সময় দেওয়া হয় না। কথা বলতে দেওয়া হয় না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেসরকারি ব্যবস্থাপনার উচ্চ শিক্ষায় ১৫ শতাংশ করারোপের ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের এই এমপি বলেন, বাজেট গণবান্ধব করতে হলে কিছু ক্ষেত্রে সংশোধন প্রয়োজন। বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫ লাখ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট মহলে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই বাড়তি কর শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করবে। এতে উচ্চ শিক্ষা ব্যয় বাড়বে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক অভিভাবকই এই বাড়তি ব্যয় নির্বাহে অক্ষম।
তিনি বলেন, করোনার প্রভাবে মধ্যবিত্তের আয় কমেছে বেকার হয়েছে অনেকে। কিন্তু সংসারের খরচ কমেনি। বরং করোনার মধ্যে সন্তানকে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেট কিনতে বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। হ্যান্ডসানিটাইজার, মাস্কসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী নিত্যপণ্যে পরিণত হয়েছে। ওই তুলনায় মধ্যবিত্তদের সুবিধা নিতে আয়কর সীমা বাড়ানো হয়নি। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করছি।
স্বাস্থ্যখাতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাত মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। কোভিডের সময় এ খাতের অনেক অনিয়ম ও অসঙ্গতি জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। চলতি অর্থ বছরে এডিপির টাকা খরচের সবচেয়ে হতাশার চিত্র দেখা গেছে এ মন্ত্রণালয়ে। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় সক্ষমতার অভাব কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
বিকল্প ধারার মহাসচিব মান্নান বলেন, এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র হতাশাব্যঞ্জক। ১১ মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৫৮ শতাংশ। বছরের শুরুতে আশানুরূপ খরচ হবে না আর শেষ দুই/তিন মাসে খরচের হিড়িক পড়বে- এটা যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এ কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের গুণগত মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
কালো টাকায় জমি কেনার সুযোগ দেওয়ার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে জমিদাররা আরও বেশি জমির মালিক হবে। আর ভূমিহীনরা আরও বেশি ভূমিহীন হয়ে পড়বেন। এতে সমাজে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবে। তিনি অর্থনৈতিক অঞ্চল, শেয়ারবাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে কালোটাকা বিনিয়োগের পক্ষে মত দেন।
এইউএ/ওএফ