বর্তমান সরকারের আগের ১২টি বাজেটের কোনটিই বাস্তবায়িত হয়নি বলে দাবি করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি বলেছেন, আমি নিঃসন্দেহে বলব বাংলাদেশের শেয়ার বাজার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছে। ব্যাংক বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

হারুনুর রশিদ বলেন, এবারের বাজেট অত্যন্ত বৈদেশিক নির্ভর। এবারের বাজেট ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ঘাটতির বাজেট। এই বাজেট বাস্তবায়ন করোনাকালে মোটেই সম্ভব নয়। সেই দক্ষতাও নেই। এই মহাজোট সরকারের এটি ১৩তম বাজেট। এর আগে ১২টি বাজেট সংসদে উত্থাপিত হয়। কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি।

তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্রের আর্থিক কাঠামোতে দৃষ্টি দিতে গেলে সেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থার দিকে তাকাতে হবে। আমি নিঃসন্দেহে বলব বাংলাদেশের শেয়ার বাজার ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছে। সেখানে চোখ একটু খুলছে, আবার বন্ধ করছে। চোখ খুলেই দেখে দরবেশ বাবা চারদিকে ঘিরে আছে। তখন চোখ বন্ধ করে রাখে।

বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, ব্যাংকগুলো সাংঘাতিকভাবে আক্রান্ত। লাখ লাখ-কোটি কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। কিন্তু ফেরত দিচ্ছে না। ঋণখেলাপি হচ্ছে না। তারা দেদারছে আনন্দ ফুর্তি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে কারণে ব্যাংকগুলো বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি। বঙ্গবন্ধু চিকিৎসক পরিষদের ডাক্তাররা এগুলোকে চিকিৎসা দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আর অন্যান্য যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলো নিঃসন্দেহে একটি ভয়াবহ দুর্যোগ কবলিত। আইলা আক্রান্ত উপকূলীয় মানুষ যেমন বিপর্যস্ত, সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একই রকম।

তিনি বলেন, আজ আমরা অপহরণ-গুম-খুনের কথা বলছি। এই কিছুদিন আগেই একজন আলেম নিখোঁজ হয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- খোঁজ নিচ্ছি। আজ যদি তাকে ফিরিয়ে দিতে না পারেন, এটা রাষ্ট্রের জন্য বড় ব্যর্থতা হবে। আদনানকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে। তার পরিবারের আহাজারি আপনাকে শুনতে হবে।

সংসদে সরকারি দলের এমপিরা বাস্তব আলোচনা করেন না দাবি করেন বিএনপির এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, এখন রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো দলিল নাই। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলা হচ্ছে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা। আমরা কি আর সেই জায়গায় আছি? বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী।

হারুনুর রশিদ বলেন, আমাদের ধর্ম কোরআন। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, কোরআনে ধর্ম নিরপেক্ষতার কোনো স্থান নাই। সুতরাং আমি মনে করি সংবিধানে একটি বড় অসঙ্গতি রয়েছে। সংবিধানের সভা-সমাবেশের কথা বলা হয়েছে। সেগুলোর কী কোনো অস্তিত্ব আছে? আজ ভিন্নমত প্রকাশের কোনো স্বাধীনতা আছে? কেউ ভিন্নমত প্রকাশ করতে পারছে।

তিনি বলেন, সংবিধানে যেকোনো দণ্ডিত আসামিকে রাষ্ট্রপতির মাফ করার ক্ষমতা রয়েছে। এই মহাজোট সরকার আমলে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন খুনি দণ্ডিত আসামিদের মাফ করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত নাড়া দিয়েছে বিশ্বকে। কিছুদিন আগে আল-জাজিরা অল প্রাইম মিনিস্টার ম্যান প্রতিবেদনটি যার প্রমাণ। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।

হারুন বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। আর দণ্ডিত আসামিদের আপনারা মাফ করে দিচ্ছেন। এটি হতে পারে না। আজ এখানে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী আছেন। আমি আশা করব, অবশ্যই তিনি তাকে সুচিকিৎসার সুযোগ দিবেন।

জাতীয় সংসদের সরকারি ও বিরোধী দল একাকার দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের বিরোধী দলনেতা বাইরে বলছেন বিরোধীদলের কোনো মূল্য নাই। সরকারি দলের মন্ত্রীরা বরাবরই বলছেন প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আমার কাছে কেউ অপরিহার্য নয়। এভাবে কী কোনো রাষ্ট্র চলতে পারে? সরকারি-বিরোধীদল সম্মিলিত মেধা শক্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।

তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ৫০ বছর বয়স হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত এখানে বিচারক নিয়োগের কোনো কাঠামো নীতিমালা তৈরি করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন দরকার কি? এটাকে বিলুপ্ত করে দেন। ইতিমধ্যেই শুনছি নির্বাচন কমিশনের এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছে।

দেশে সবার জন্য আইনের শাসন নেই দাবি করে তিনি বলেন, ৫০ বছর পর পাসপোর্ট থেকে আপনি ইসরাইলের শব্দটি বাদ দিলেন। নিঃসন্দেহে এটি অগ্রহণযোগ্য এবং এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করব।

হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা মনে করেছিলাম মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ক্রসফায়ার বন্ধ হবে। সেদিন পুলিশের প্রধান, সেনাবাহিনীর প্রধান জাতির কাছে আশ্বস্ত করেছিলেন। আমরা এ ধরনের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখতে চাই না। কিন্তু বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। এখান থেকে আমরা কখন ফিরে আসবো?

বক্তব্যের এক পর্যায়ে বিএনপির এই সংসদ সদস্য কিছুটা হাসির ছলে স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাকে সময় দেবেন স্পিকার। কারণ বিরোধী দলনেতা তো আমি।

এ সময় সংসদে উপস্থিত থাকা মসিউর রহমান রাঙ্গা এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। মাইক ছাড়াই রাঙ্গা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তখন হারুন বলেন, স্পিকার আমি আপনার প্রটেকশন চাই। স্পিকার রাঙ্গাকে আশ্বাস দেন হারুনের এই কথাটি এক্সপাঞ্জ করা হবে। এরপর সংসদ শান্ত হলে আবার বক্তব্য শুরু করেন হারুন।

এইউএ/এমএইচএস