ম্যাজিস্ট্রেট হতে চেয়েছিলেন অভিনেত্রী আশা
আশা সব সময় বলত আব্বু দেখবে আমাদের এই দুঃখ বেশি দিন থাকবে না। আমি আইন পড়াটা শেষ করেই বিসিএস-এর জন্য প্রস্তুতি নিব। আব্বু তুমি দেখবে তোমার আশা একদিন ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে তোমার সামনে আসবে। তখন তুমি আম্মু আর আমি এক সঙ্গে থাকব।
মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো উঠতি অভিনেত্রী আশার স্মৃতির কথা এভাবেই বলছিলেন তার বাবা আবুল কালাম। ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের কাছে মেয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পরেন আবুল কালাম।
বিজ্ঞাপন
বোর্ডবাজার এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন আবুল কালাম। সেখানে তার কাপড়ের দোকানও আছে।
রাজধানী মিরপুরের দারুস সালাম এলাকায় সোমবার (৪ জানুয়ারি) রাতে দ্রুতগামী ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছেন টেলিভিশন অভিনেত্রী আশা চৌধুরী।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) আইন বিভাগের ছাত্রী আশা মিরপুরের রূপনগরের ২০ নম্বর রোডের ৩৭ নম্বর বাসায় থাকতেন। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিশুশিল্পী ছিলেন। বর্তমানে নিয়মিত প্যাকেজ নাটক, টেলিফিল্ম ও ধারাবাহিকে অভিনয় করতেন।
আশার মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর দারুস সালাম থানায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা হয়েছে। এ মামলায় আশার পরিবারের অভিযোগে মোটরসাইকেল চালক শামীম আহমেদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সড়ক দুর্ঘটনার ২ ঘণ্টা আগে আশার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল তার বাবার। আশা তখন বনানী থেকে বাসায় যাচ্ছিল বলে জানায়।
আশা তার মায়ের সাথেও কথা বলেন।
আশার বাবা জানান, রাত ১টা ৩০ মিনিটে শামীম আমাদের ফোনে দিয়ে শ্যামলী টেকনিক্যাল মোড়ে যেতে বলে। জিজ্ঞাসা করলে সে তখন ফোন কেটে দেয়। আবারো শামীমকে ফোন করলে সে ফোন রিসিভ করে জানায় যে আমার সোনার টুকরা মেয়ে আশা নাকি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
কথাগুলো বলতে বলতে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন আবুল কালাম। কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলিয়ে আবারও আশার স্মৃতিচারণ করেন সন্তানহারা পিতা আবুল কালাম।
তিনি বলছিলেন, আশা বিইউবিটিতে আইন বিষয়ে অনার্স পড়ছিল। তারা ইচ্ছা ছিল অনার্স শেষ করে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবে। বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হবে। আশা প্রায়ই বলত, ‘আমি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে বেতনের টাকা জমিয়ে তোমাকে দিব। সেই টাকার সঙ্গে তুমিও টাকা দিবে। টাকা দিয়ে ছয় তলা বাড়ি নির্মাণের পর আমরা সবাই একসঙ্গে থাকব।’
এসময় আবুল কালাম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়ে আজ নেই কিন্তু তার স্বপ্নগুলো রয়ে গেছে। তার এই কথাগুলো যতবার মনে পড়ছে ততবার আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
এদিকে অভিনেত্রী আশা নিহতের ঘটনায় এখনো ঘাতক চালক ও ট্রাকটির সন্ধান পায়নি পুলিশ।
দারুস সালাম জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনো চালক ও ট্রাকটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। চালক ও ট্রাকের সন্ধানে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।
আশা যে মোটরসাইকেলে ছিলেন সেটির চালক শামীম আহমেদের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাব শামীমের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু আশার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। বুধবার শামীমকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
শামীমকে কেন আশার পরিবার সন্দেহ করছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম ঢাকা পোস্টকে জানান, শামীমের সঙ্গে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক নেই। তবে আশা তাকে ‘ভাই’ সম্বোধন করত। শামীম প্রায়ই আশাকে মোটরসাইকেলে বাড়ি পৌঁছে দিত।
দুর্ঘটনার ২-৩ দিন আগে আশা বলেছিল, ‘আম্মু শামীম ভাইয়ের মোটরসাইকেলে উঠতে আমার ভয় লাগে, উনি যেন কেমন করে চালায়' বলছিলেন আবুল কালাম।
আশার বাবা জানান, ঘটনার দিন শামীম ফোন দিয়ে বলে যে আশাকে রাত ১১টার মধ্যে বনানী থেকে মিরপুরে বাসায় পৌঁছে দেবে। এরপর রাত দেড়টা পর্যন্ত কেন তারা বাসায় ফেরেনি? আড়াই ঘণ্টা কোথায় ছিল? তাই আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, আশার দুর্ঘটনার পেছনে তার হাত রয়েছে।
এমএসি/ওএফ