ক্ষুব্ধ হয়ে নিজেই কাজে হাত লাগালেন আতিকুল
মিরপুরের কাজীপাড়ার বাসিন্দারা আগেই জেনে গিয়েছিলেন তাদের এলাকা পরিদর্শনে আসছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। মেয়রকে সামনাসামনি নিজেদের দুর্ভোগ-ভোগান্তির কথা জানাতে অপেক্ষা করছিলেন তারা।
মেয়র এলেন আর সঙ্গে সঙ্গেই অভিযোগের ঝুড়ি খুলে বসলেন বাসিন্দারা। কাজীপাড়ার বড় রাস্তা সংলগ্ন একটি বাড়ির মালিক হাজি মনির হোসেন। তিনি অভিযোগ জানিয়ে বলেন, এখানকার কোনো ড্রেন পরিষ্কার করা হয় না। ড্রেনগুলো বদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এতে পানি মোটেই নিষ্কাশন হতে পারে না। বৃষ্টি হলেই এখানে হাঁটু পানি কখনো বা কোমর পানি জমে যায়। আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।
বিজ্ঞাপন
শুধু হাজি মনির হোসেনই নন, এমন অভিযোগ করেন স্থানীয় দোকানিরাও। তাদের সঙ্গে যোগ দেন, এখানকার ভাড়াটিয়ারা। অভিযোগ শুনে এ এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিদর্শন শুরু করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
পরিদর্শনে মেয়র দেখতে পান ড্রেনগুলো বদ্ধ অবস্থায় আছে। আবর্জনা আর কাদামাটিতে ড্রেনগুলো পরিপূর্ণ। যেখানে কোনোভাবেই পানি নিষ্কাশন সম্ভব নয়। এ অবস্থা দেখে দায়িত্বরতদের ওপর ক্ষিপ্ত হন মেয়র।
এ এলাকার ড্রেনগুলো নিজেদের আওতায় হলেও মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এসবের দেখভাল এবং পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব অস্থায়ীভাবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে উত্তর সিটি করপোরেশন। সে অনুযায়ী এই ড্রেনগুলো পানি প্রবাহের উপযোগী করে রাখার দায়িত্ব ছিল মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার না করায় ড্রেনগুলো ব্লক হয়ে আছে। যে কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই এখানে হাঁটু পানি জমে যায়।
সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে, ড্রেনগুলো কেন এমন হলো, কেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না- উপস্থিত মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান এবং তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়র বলেন, এই মুহূর্ত থেকে পরিষ্কারের কাজ করুন। মেট্রোরেলের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা নির্দেশ পেয়ে এ সময় ড্রেন পরিষ্কারের কাজ শুরু করেন।
একটু সামনে গিয়ে মেয়র আতিকুল দেখতে পান, কাজীপাড়ার ভেতরের দিক থেকে আসা রাস্তা ও মূল সড়কের সংযোগস্থলে ড্রেনের ওপর স্টিল প্লেট দিয়ে ঢালাই করা এবং পুরো ড্রেন বন্ধ। এতে পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। এ অবস্থা দেখে ক্ষুব্ধ মেয়র নিজেই শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে স্টিল প্লেট তুলে ফেলতে চেষ্টা করেন।
কিন্তু ঢালাইয়ের কারণে সেটি তুলে ফেলা সম্ভব না হলে তিনি উপস্থিত মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে বলেন, এটা কী করেছেন, এখানে কোন পানি যেতে পারে না, পুরোটাই বন্ধ হয়ে গেছে। জবাবে দায়িত্বরত মেট্রোরেল কর্মকর্তা বলেন, স্যার এখনই ক্রেন এনে এটা তুলে ফেলছি। অভিযোগ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই মেয়রের এমন অ্যাকশন দেখে স্থানীয়রা সাধুবাদ জানান এবং করতালি দেন।
বুধবার (১৬ জুন) দুপুরের দিকে মেয়র কাজীপাড়া এলাকা ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করেন। জলাবদ্ধতাসহ এলাকার অন্যান্য সমস্যা নিয়ে মানুষের অভিযোগ-অনুযোগ শোনেন। এসময় মেয়র আতিকুল বলেন, মেট্রোরেলের কাজ শুরুর পর এসব স্থান, ড্রেন, পানি নিষ্কাশনের সব কার্যক্রম আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অস্থায়ীভাবে হস্তান্তর করেছি। তাদের কাজ হলো এগুলো সব কিছু সচল রেখেই মেট্রোরেলের কাজ করা। এখানে যেভাবে সবকিছু ঠিক রাখার কথা তারা কিন্তু কিছুই ঠিক রাখেনি। এ কারণে যখন জলাবদ্ধতা হচ্ছে কোমর পানি জমছে তখন এলাকাবাসীর গালি খেতে হচ্ছে আমাকে, সিটি করপোরেশনকে। এখন আমি নিশ্চিত করতে চাই, যেন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এগুলো ঠিক করার উদ্যোগ নেয়। জনগণের যেন আর কোনো ভোগান্তি না হয়, যেখানে ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, সেখানে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
মেট্রোরেলের দায়িত্বে থাকার পরও কেন এসব কাজ করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে মাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (সিভিল) আব্দুল বাকি মিয়া বলেন, আমরা নিজেরা চেষ্টা করছি কাজগুলো করার। তবে এখানকার জলাবদ্ধতা সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। তাই হঠাৎ করেই আমরা এর সমাধান করতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমাদের সড়কে অর্থাৎ নিচে আর কোনো কাজ নেই। কিন্তু বিভিন্ন জায়গার ময়লা আবর্জনা এসে ড্রেনে জমা হয়। আমরা চেষ্টা করছি এর সমাধান করতে। মেয়র আজ নির্দেশ দিয়েছেন। এখন আমরা আরও ভালোভাবে কাজগুলো করব।
মেয়রের স্টিল প্লেট তোলা প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সিভিল সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাজীপাড়ার ভেতরের রাস্তা প্রধান সড়কে যুক্ত হওয়ার স্থানে ড্রেনের ওপর স্টিল প্লেট দিয়ে রেখেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। ফলে এর নিচের ড্রেন পুরো কলাপস হয়ে আছে, পানি প্রবাহিত হতে পারে না, নিয়মিত এখানে জলাবদ্ধতা হয়। তাই মেয়র মহোদয় রেগে গিয়ে নিজেই এটা তুলে ফেলতে চেষ্টা করেন। পরে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে ড্রেন পরিষ্কার করার জন্য কড়া নির্দেশ দেন তিনি।
এএসএস/আরএইচ/জেএস