বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রদত্ত গার্ড অব অনারে নারী কর্মকর্তার উপস্থিতি সম্পর্কে আপত্তি জানিয়ে ১৩ জুন প্রস্তাব করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এটি নারী বিদ্বেষী ও সংবিধানবিরোধী সুপারিশ বলেও মন্তব্য করেছে কমিটি।

সোমবার (১৪ জুন) সংগঠনের কেন্দ্র ও উপদেষ্টা পরিষদের পাঠানো এক যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রদত্ত গার্ড অব অনারে সরকারের নারী কর্মকর্তা বা পুলিশ বাহিনীর নারী সদস্যদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি যে সুপারিশ করেছে, এ বিষয়ে আমরা হতভম্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নারীর মর্যাদা ও সমঅধিকার এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ মর্যাদার জন্য যেসব কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি ধর্মের দোহাই দিয়ে কীভাবে এ ধরনের নারী বিদ্বেষী, মানবাধিকারবিরোধী, সংবিধানবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী সুপারিশ করতে পারে তা আমাদের বোধের অতীত। আমরা এই ন্যক্কারজনক প্রস্তাবের তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি।’

এতে আরও বলা হয়, ‘জামায়াতে ইসলামি ও হেফাজতে ইসলামসহ জঙ্গী মৌলবাদী কোনো ওয়াহাবী, সালাফী, মওদুদীবাদী সংগঠন আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছে ইসলামের দোহাই দিয়ে এ ধরনের দাবি জানায়নি। সংসদীয় কমিটি মুক্তিযোদ্ধাদের জানাজার গার্ড অব অনারে নারীদের অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে আপত্তি করে মৌলবাদের যে বিষধর সাপকে গর্ত থেকে বের করে আনতে চাইছে, এর পরিণতি বর্তমান সরকার, সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতির জন্য ভয়াবহ হবে।’

সুপারিশ প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানবিরোধী সুপারিশ প্রত্যাহারের দাবি জানাই। একই সঙ্গে এই ধরনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিও বিশেষভাবে আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, অধ্যাপক ডা. কাজী কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, ক্যাপ্টেন (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অব.), মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, অধ্যাপক শিল্পী আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, ড. ফরিদা মজিদ, অধ্যাপক আয়েশ উদ্দিন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ডা. শেখ বাহারুল আলম, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা প্রমুখ।

এমএইচএন/এমএইচএস