মৃত্যুবরণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিকল্প চায় সংসদীয় কমিটি। 

রোববার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ ‍সুপারিশ করা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এক্ষেত্রে যেসব স্থানে নারী ইউএনও রয়েছেন সেখানে পুরুষ কোনো ব্যক্তি দিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করতে বলেছে কমিটি। পাশাপাশি গার্ড অব অনার প্রদানের আয়োজন দিনের বেলা করার সুপারিশ করা হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, নারী ইউএনও গার্ড অব অনার দিতে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। মুসলিমদের ক্ষেত্রে নারীরা জানাজায় থাকতে পারেন না। সেক্ষেত্রে নারী গার্ড অব অনার দেন কীভাবে- এমন কথা বলঅ হচ্ছে। সেজন্য এ বিষয়ে বৈঠকে একটি প্রস্তাব এসেছে। নারীর বিকল্প একজন পুরুষকে দিয়ে গার্ড অব অনার দেওয়ার বিষয়টি এসেছে। আমরা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে বলেছি।  

বৈঠকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়া শিশুপার্কের স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সুপারিশ করেছে কমিটি। এ প্রসঙ্গে কমিটির সভাপতি বলেন, সার্কিট হাউজের সামনের যে জায়গাটিতে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল সেখানে জিয়াউর রহমান শিশুপার্ক করা হয়েছে। আমরা সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের সুপারিশ করেছি। আমরা বলেছি, সেখানে যে কক্ষটিতে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে, সেটি সংরক্ষিত থাকবে। কিন্তু শিশু পার্কের স্থলে স্মৃতিস্তম্ভ হবে।

বৈঠকে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের বাকি অনুষ্ঠানমালার দিন তারিখ নির্ধারণের লক্ষ্যে সভাপতিকে আহ্বায়ক করে একটি সংসদীয় সাব-কমিটি গঠন করা হয়। এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বছরব্যাপী যে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে তা সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য এই সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দ্রুত মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সম্পন্ন করার পাশাপাশি রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করার জন্য বৈঠকে সুপারিশ করা হয়েছে বলে সভাপতি জানান। এছাড়া যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত ‘মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ফান্ড’ এর তহবিল গঠনে কোন কোন উৎসকে প্রতিষ্ঠার সময়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল তার বিস্তারিত আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়। 

নির্ধারিত হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করাসহ ঔষধ খরচ বাবদ নির্ধারিত ৫০ হাজার টাকা থেকে উন্নীত করে ৭৫ হাজার টাকায় উন্নীতকরণ এবং বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতালগুলোতে শতভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিনামূল্যে করার বিষয়ে সংশোধিত নীতিমালাটি আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে কিছু জায়গায় বিভিন্ন দিবসে স্বাধীনতাবিরোধীদের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন সম্পর্কিত ঘটনার সমাধানের লক্ষ্যে সমস্যার বিবরণীর একটি সারসংক্ষেপ কেবিনেটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা সংগ্রহ ও চিহ্নিত রাজাকারের পরবর্তী প্রজন্মকে সরকারি চাকরি প্রদানের ক্ষেত্রে বৈঠকে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণের সুপারিশ করা হয়।

সভাপতি শাজাহান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, রাজি উদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, কাজী ফিরোজ রশীদ, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল এবং মোছলেম উদ্দিন আহমদ। 

এইউএ/আরএইচ/জেএস